<p>হজ ও ওমরাকারীদেরকে দেশ থেকে পবিত্র মক্কায় যাওয়ার আগে হুদুদে হারম কী, মিকাত কী, তা বুঝে বা জেনে নেওয়া আবশ্যক। যেহেতু হজ ও ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রে হুদুদে হারম ও মিকাত সংশ্লিষ্ট আছে। মিকাত অতিক্রম করার আগে এহরাম পরা বাধ্যতামূলক। মিকাতের বাইরে থেকে যেকোনো ব্যক্তি হজ, ওমরাহ বা ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি ইত্যাদি যেকোনো প্রয়োজনের তাগিদে পবিত্র মক্কা পৌঁছতে হলে তাকে মিকাত অতিক্রম করার আগে এহরাম পরতে হবে।</p> <p>পবিত্র কাবাঘরের রয়েছে একাধিক মর্যাদাপূর্ণ পরিমণ্ডলীয় স্তর। প্রথমত, কাবা শরিফ, যা কালো গিলাফ দ্বারা আচ্ছাদিত। তার উত্তর পাশে রয়েছে অর্ধ গোলাকৃতির পবিত্র কাবার অংশ হাতিম। তারপর হলো মাতাফ। বায়তুল্লাহর চতুর্দিকের তাওয়াফের স্থানকে মাতাফ বলে। যার ওপর সাদা মর্মর পাথর বসানো হয়েছে। এ পাথর প্রখর রৌদ্রেও গরম হয় না। তারপর মসজিদে হারম। চারতলাবিশিষ্ট কাবার চার পাশে গোলাকৃতির বিশাল এলাকা নিয়ে দালানকে মসজিদে হারম বলে।</p> <p><strong>হুদুদে হারম : </strong> হুদুদে হারম অর্থ হারমের সীমানা। পবিত্র মক্কার চারদিকে নির্দিষ্ট সীমারেখার ভেতরের এরিয়াকে হারম বলা হয়ে থাকে। জিবরাইল (আ.) ইব্রাহিম (আ.)-কে ওই স্থানসমূহের অবগতকরণ এবং সঙ্গে সঙ্গে পরিচয় করিয়ে হারমের সীমানা চিহ্নিত করে দিয়েছিলেন। অতঃপর রাসুলে কারিম (সা.) এই চিহ্নগুলো নির্মাণ করেন। পরে আমিরুল মুমিনিন ওমর (রা.)-এর খিলাফত আমলসহ পরবর্তী সময়ে এই সব সীমানাচিহ্ন পুনর্নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে সৌদি সরকার খুব সুন্দর করে হারমের সীমানা পুনর্নির্মাণ করেছে। হারমের সীমানা হলো কাবার থেকে জেদ্দার দিকে ১৬ কিলোমিটার, যেখানে সুমাশিয়াহর (হুদাইবিয়ার সন্ধির স্থান) সন্নিকটে হারমের সীমানাচিহ্ন স্বরূপ মিনার নির্মিত আছে; কাবা থেকে পবিত্র মদিনার দিকে ছয় কিলোমিটার দূরে তানঈম নামক স্থানে; কাবা শরিফ থেকে ইয়েমেনের দিকে ১১ কিলোমিটার দূরে ইজাআতে লবন নামক স্থানে; ইরাকের দিকে ১১ কিলোমিটার, জবানার দিকে ১৪ কিলোমিটার, তায়েফের দিকে আরাফাতের কাছাকাছি ১১ কিলোমিটার পর্যন্ত হারমের সীমানা।</p> <p>পবিত্র মক্কা শহর থেকে তথা এসব সীমারেখার ভেতর অর্থাৎ হারমের সীমানার ভেতর কোনো স্থলপ্রাণী শিকার বা হত্যা করা, ধরা, তাড়ানো, বৃক্ষ, ঘাস ইত্যাদি কর্তন হারাম। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী-রাসুলরা যখন হারমের সীমানায় প্রবেশ করতেন, তখন নগ্ন পায়ে চলাফেরা করতেন এবং খালি পায়ে হজের রুকনগুলো আদায় করতেন। এ কথা সত্য যে মানুষ যদি নিজের মাথার ওপর ভর দিয়েও এই পবিত্র হারম এরিয়ায় চলাফেরা করে তবু আদবের হক আদায় করতে সক্ষম হওয়ার নয়। কাজেই যতদূর সম্ভব এই পবিত্র ভূমি হারমের মর্যাদার প্রতি হজ ও ওমরাহকারীদের সচেষ্ট থাকা চাই। আদব দেওয়া যখন কঠিন তথা সম্ভবের বাইরে অন্তত বেয়াদবি যাতে না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখা অত্যাবশ্যক।</p> <p><strong>মিকাত :</strong> বহিরাগত লোকজন হজ ও ওমরাহ বা অন্য কোনো প্রয়োজনের তাগিদে পবিত্র মক্কায় প্রবেশ করার উদ্দেশ্যে যে স্থান থেকে এহরাম বাঁধবেন যে স্থানকে মিকাত বলা হয়ে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুসলমানদের পবিত্র মক্কায় প্রবেশের জন্য পাঁচ স্থানকে মিকাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে—</p> <p>১) ইয়ালামলাম : আমাদের এই উপমহাদেশ ও আরো কয়েকটি দেশের সাগরপথের মিকাত।</p> <p>২) জুল-হোলায়ফা বা বীরে আলী : এটি পবিত্র মদিনা থেকে এবং সেই পথে পবিত্র মক্কা আগমনকারীদের মিকাত।</p> <p>৩) জাতে ইরক : এটি ইরাকবাসী এবং সেই পথে পবিত্র মক্কায় আগমনকারীদের মিকাত।</p> <p>৪) জাহফা : এটা মিসর ও সিরিয়াবাসী এবং সেই পথে পবিত্র মক্কায় আগমনকারীদের মিকাত।</p> <p>৫) করন : (কারনুল মনাযিল) এটি নজদবাসী এবং সেই পথে পবিত্র মক্কায় আগমনকারীদের মিকাত। যদি কেউ হজ, ওমরাহ বা অন্য কোনো প্রয়োজনে পবিত্র মক্কায় প্রবেশের উদ্দেশ্যে মিকাতের বাইরে থেকে এহরাম না বেঁধে মিকাতের ভেতর থেকে এহরাম বাঁধে, তবে তার দম ওয়াজিব হবে।</p> <p><strong>হিল্ল : </strong>হারমের সীমানার বাইরে তথা হুদুদে হারমের বাইরে অথচ মিকাতের অভ্যন্তরে যে ভূমি রয়েছে তাকে হিল্ল বলা হয়।</p> <p>হজ বা ওমরাহর উদ্দেশ্যে এহরাম পরে পবিত্র মক্কায় পৌঁছে তাওয়াফে সাঈ সেরে ইহরাম থেকে মুক্ত হয়ে পবিত্র মক্কা থেকে হারমের সীমানায় হুদুদের বাইরে গিয়ে ইহরাম পরে আবার ওমরাহ করার রেওয়াজ আছে। সে অনুযায়ী হজ ও ওমরাহকারীরা তানয়িম বা জেরানায় গিয়ে তথা হারমের সীমার বাইরে হিল্লে গিয়ে এহরাম পরে ওমরাহর উদ্দেশ্যে আবার কাবার দিকে ফিরে আসে। হারম এরিয়ার পর হিল্ল-এর মরতবা। কিন্তু হিল্লে গিয়ে এহরাম পরা বা না পরা ইচ্ছাধীন। অর্থাৎ ওমরাহ করা বা না করা। কিন্তু মিকাতের বাইরে গেলে আবার পবিত্র মক্কায় ফিরে আসতে হলে এহরাম পরা বাধ্যতামূলক, নতুবা দম ওয়াজিব হবে। যেমন পবিত্র মদিনা থেকে পবিত্র মক্কায় আসতে হলে জুল-হোলায়ফা মিকাত থেকে ইহরাম পরে আসতে হবে। কিন্তু জেদ্দা হলো হিল্লের ভেতর অর্থাৎ হুদুদে হারমের বাইরে, কিন্তু মিকাতের ভেতরে। অতএব, কেউ পবিত্র মক্কা থেকে জেদ্দা গিয়ে মক্কায় ফিরে আসতে ইহরাম পরতেও পারে, না-ও পরতে পারে। অর্থাৎ ওমরাহ করতেও পারে, না-ও করতে পারে।</p> <p><strong>জেদ্দা : </strong>জেদ্দা শহর মিকাতের ভেতর বিধায় পবিত্র মক্কা ও পবিত্র মদিনা শহরের পর জেদ্দার বিশেষ মর্যাদা আছে। যেহেতু জেদ্দা হিল্লের মধ্যে। অর্থাৎ হুদুদে হারমের বাইরে, কিন্তু মিকাতের ভেতরে। </p> <p>মহান আল্লাহ হজ ও ওমরাহকারীকে কবুল করুন। আমিন।</p>