<p>আইয়ামে জাহেলিয়াতে আরবরা ছিল প্রধানত দুটি অংশে বিভক্ত : মরুবাসী বেদুইন যাযাবর ও আরব উপদ্বীপের শহরবাসী। শহরবাসীর নগররাষ্ট্র, সরকার ও সংস্কৃতির অস্তিত্ব ছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, মক্কাবাসীদের ‘দারুণ নদওয়া’ নামক City Hall (সম্মেলনকেন্দ্র) ছিল।</p> <p>আরো ২১টি প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেছেন ড. হামিদুল্লাহ। যথা : ১) নদওয়া, ২) মশওরা, ৩) কিয়াদাহ, ৪) সেদানা, ৫) হিজাবা, ৬) সেকায়া, ৭) ইমারাতুল বাইত, ৮) ইফাদা, ৯) ইজাজাহ, ১০) নসি, ১১) কুব্বা, ১২) আন্নাহ, ১৩) রিফাদাহ, ১৪) আমওয়ালে মাহজরা, ১৫) ইসার, ১৬) এশনাক, ১৭) হুকুমাহ, ১৮) সেফারা, ১৯) ইকাব, ২০) বুয়া এবং ২১) হিলওয়া নুন নফর।</p> <p><strong>মদিনা সনদের গুরুত্ব : </strong>অন্যদিকে জনমত ও ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধে শান্তির লক্ষ্যে ৪৭টি শর্ত সংবলিত মদিনা সনদের ভিত্তিতে প্রিয় নবী (সা.) ‘ইসলামী রাষ্ট্রদর্শন’-এর  সূত্রপাত করেন। ‘মদিনা সনদ’ হলো সংস্কৃতির Social contract, মানব-ইতিহাসের প্রথম Written  constitution। মদিনা সনদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ‘Peace & Submission’ (শান্তি ও আনুগত্য-আত্মসমর্পণ)। ফলে প্রিয় নবী (সা.) গোত্রপ্রধান শাসিত ১০/১১ লাখ বর্গমাইলের বেশি এলাকার ২৭৬টি দেশীয় রাজ্যকে একত্র করেন। তাঁর জীবদ্দশায়ই এ রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রায় ১৯ লাখ বর্গমাইল এলাকায় বিস্তৃত হয়। </p> <p>প্রিয় নবী (সা.) তাঁর শাসনব্যবস্থা ১০টি প্রদেশে বিভক্ত করে নিয়োগ করেন : আল-ওয়ালি (গভর্নর), আল-আমিল (কর আদায়কারী), আল-কাজি (বিচারক)। কেন্দ্রীয় প্রশাসনে প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন আবু বকর, ওমর, ওসমান ও আলী (রা.)।</p> <p>খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) ছিলেন স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান। স্বভাব কবি জায়েদ বিন সাবিত (রা.) ছিলেন প্রিয় নবী (সা.)-এর ব্যক্তিগত সচিব, প্রধান ওহি লেখক, রাষ্ট্রীয় পত্রলেখক, সভাকবি ও দোভাষী। হানজালা বিন আল রাবি ছিলেন প্রিয় নবী (সা.)-এর সিলমোহর ও প্রশাসনিক গোপন তথ্যাদির সংরক্ষক।</p> <p><strong>মহানবী (সা.)-এর মন্ত্রিসভার সদস্য :</strong> </p> <p>প্রিয় নবী (সা.)-এর মন্ত্রিসভায় অন্যতম সদস্যরা ছিলেন—</p> <p>১. জাকাত ও সদকার সংরক্ষণ : জুবায়ের বিন আল আওয়াম এবং জুহায়ির বিন আল সালত (রা.)।</p> <p>২. খেজুর বৃক্ষের কর : হুজায়ফা বিন আল ইয়ামান (রা.)।</p> <p>৩. রাষ্ট্রীয় হিসাব সংরক্ষণ : মুয়ান কিব বিন আবী ফাতিমা (রা.)।</p> <p>৪. বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগসূত্র রক্ষা : মুগিরা বিন শুবা ও হুসায়েন বিন নুমির (রা.)।</p> <p>৫. সেচ ও আনসারদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় : আবদুল্লাহ বিন আকরাম এবং আল বিন উকবা (রা.)।</p> <p><strong>প্রিয় নবী (সা.)-এর গভর্নরবৃন্দ</strong></p> <p>১. হাজরামাউত : জিয়াদ বিন লাবিদ। ২. নাজরান : আলী বিন আবু তালিব। ৩. ইয়েমেন : মুয়াজ বিন জাবাল। ৪. আল জানাদ : ইয়ালা বিন উমাইয়া। ৫. বাহরাইন : আলবিন হাজরানি।</p> <p><strong>অন্যান্য প্রদেশ হলো : </strong>মক্কা, তায়মা, বনুকিন্দা অঞ্চল, ওমান প্রভৃতি। (সূত্র : মুসলিম প্রশাসন ব্যবস্থার ক্রমবিকাশ, অধ্যাপক ড. আলী আসগর খান প্রমুখ)।</p> <p>জীবদ্দশায় প্রিয় নবী (সা.) উত্তরসূরি মনোনীত করেননি। শাসন-প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থায় প্রিয় নবী (সা.)-এর আদর্শের উত্তরাধিকার ও নেতৃত্বদানকারীরা হলেন খুলাফায়ে রাশিদিন। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, তোমাদের ওপর আমার সুন্নতের অনুসরণ ও খুলাফায়ে রাশিদিনের অনুসরণ অত্যাবশ্যক। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৭৬)</p> <p>আবু বকর (রা.) প্রিয় নবী (সা.)-এর পরোক্ষ প্রত্যাশা, মনোনয়ন ও আনসার-মুহাজিরদের সর্বসম্মতিক্রমে খলিফা নির্বাচিত হন। আবু বকর (রা.)-এর পূর্ব-মনোনয়ন এবং উম্মতের ঐক্য ও আনুগত্যের ভিত্তিতে ওমর (রা.) খলিফার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওমর (রা.) দ্বারা গঠিত ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি (যা আধুনিক নির্বাচন কমিশনতুল্য) ওসমান (রা.)-কে খলিফা মনোনীত করে এবং জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই মনোনয়ন অনুমোদন করে ওসমান (রা.)-এর আনুগত্য স্বীকার করে। ওসমান (রা.)-এর পর সর্বস্তরের নেতা ও কুরাইশদের সমর্থনে আলী (রা.) খলিফার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।</p> <p><strong>জনগণের আনুগত্য :</strong> জনগণের স্বেচ্ছায় আনুগত্য মুসলিম শাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আলী (রা.) খলিফা পদ গ্রহণ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ) মুসলিম জনগোষ্ঠীর স্বাধীন ইচ্ছা ও মর্জি ছাড়া অন্য কিছুতে হতে পারে না।’ প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রশাসন ছিল গণভিত্তিক ও পরামর্শমূলক। পরামর্শনীতি প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা (মুসলমানরা) পারস্পরিক পরামর্শক্রমে কাজ করে।’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ৩৮)</p> <p>অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যেকোনো কাজে তোমরা পারস্পরিক পরামর্শ করো।’ (সুরা : আল-ইমরান, আয়াত : ১৫৯)</p> <p>ইসলামী শাসনব্যবস্থার অন্যতম অনুষঙ্গ মজলিসে সুরা। মজলিসে সুরা দুই প্রকার : ১. মজলিসে আম ও ২. মজলিসে খাস।</p> <p>ইসলামী শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয় কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনার আলোকে। যেখানে কোরআন-হাদিসের সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই, সেখানে পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে। আলী (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জানতে চাইলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমরা যদি এমন কোনো বিষয়ের সম্মুখীন হই, যা কোরআন-হাদিসে নেই, তখন কী করব?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তখন সবাই মিলে পরামর্শ করে নেবে।’ বস্তুত, ক্ষমতার মালিক আল্লাহ। তিনিই বলেন, ‘সেই আল্লাহর পবিত্রতা ও প্রশংসা, যার হাতে সর্বময় রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব।’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ০১)</p> <p> </p> <p><em>লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ</em></p> <p><em>কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর।</em></p>