<p>বতসোয়ানা প্রজাতন্ত্র আফ্রিকা মহাদেশের একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। যার ৭০ শতাংশ জুড়ে আছে কালাহারি মরুভূমি। দেশটির দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে দক্ষিণ আফ্রিকা, পূর্ব ও উত্তর দিকে নামিবিয়া এবং উত্তর-পূর্ব দিকে জিম্বাবুয়ের অবস্থান। জাম্বেজি নদী দেশটিকে জাম্বিয়া থেকে পৃথক করেছে। বতসোয়ানা আফ্রিকার ধনী দেশগুলোর একটি। খনি থেকে আহরিত হীরাসহ অন্যান্য খনিজ সম্পদ ও পশু পালন দেশটির মূল অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি। গাবোরোন দেশটির সর্ববৃহৎ শহর ও রাজধানী।</p> <p>বতসোয়ানা ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। দেশটির মোট আয়তন পাঁচ লাখ ৮১ হাজার ৭৩০ বর্গকিলোমিটার। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে দেশটির মোট জনসংখ্যা ২৬ লাখ, ৭৫ হাজার ৩৫২ জন। বতসোয়ানায় বেশির ভাগ মানুষ খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী। পিউ রিসার্চের মতে, দেশটিতে ১০ হাজারের মতো মুসলমান বসবাস করে। তবে স্থানীয় মুসলিম সংস্থাগুলোর দাবি, বতসোয়ানার মোট জনসংখ্যার ২-৩ শতাংশ মুসলিম। অর্থাৎ দেশটিতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার মুসলিম বাস করে।</p> <p>মুসলিম স্ট্যাটাস ডটকমের দাবি, ৮৭০ খ্রিস্টাব্দে বতসোয়ানা অঞ্চল মুসলমানরা জয় করে এবং সেখানে ২০০ বছর মুসলিম শাসন অব্যাহত ছিল। কিন্তু এই দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ পেশ করা হয়নি। বতসোয়ানায় ইসলাম প্রচার বিষয়ে প্রচলিত ধারণা হলো ১৮৬৭-৬৯ সালে অঞ্চলটিতে ব্রিটিশ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।</p> <p>তখন খনি ও কৃষি খামারে কাজ করতে ভারতবর্ষ থেকে শ্রমিক নেওয়া হয়। যাদের মধ্যে মুসলিম শ্রমিকও ছিল। মূলত এসব শ্রমিকের মাধ্যমে দেশটিতে ইসলামের আগমন ঘটে।<br /> মুসলিম গবেষকরা ধারণা করেন, বতসোয়ানায় ইসলামের যাত্রা শুরু হয়েছিল খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে। যখন মুসলিম শাসকরা উত্তর আফ্রিকা জয় করেন এবং মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। কেননা তখন মুসলিম ব্যবসায়ীরা সমগ্র আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়েন। আর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুট হিসেবে বতসোয়ানায়ও তাঁদের আগমন ঘটে থাকতে পারে। তবে তাঁরা বতসোয়ানায় মুসলিম শাসন বা তাদের স্থায়ী আবাসের কোনো প্রমাণ খুঁজে পাননি।</p> <p>নিকটতম ইতিহাসে বতসোয়ানায় ইসলামের প্রসার ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসকারী মুসলিম ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। খ্রিস্টীয় ১৮ শতকে দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু নাতাল অঞ্চলে কাজ করতে কিছু ভারতীয় মুসলিম শ্রমিকদের নিয়ে আসা হয়। ধারণা করা হয়, তারাই বতসোনিয়ান মুসলিমদের পূর্বপুরুষ। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে একদল মুসলিম স্বর্ণের খোঁজে বতসোয়ানায় যায়। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে আবার একদল মুসলিম বতসোয়ানায় স্থায়ীভাবে বসবাস ও ব্যবসার জন্য যায়। স্থানীয় নেতৃত্ব ও সাধারণ মানুষ মুসলিমদের অভিনন্দন জানায় এবং আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে। ফলে রমতসোয়া এলাকায় একটি স্বতন্ত্র মুসলিম বসতি গড়ে ওঠে।</p> <p>কিন্তু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা মুসলিম ব্যবসায়ীদের বিকল্প বাণিজ্যিক ঔপনিবেশ জ্ঞান করতে থাকেন, বিশেষত রেলপথের দুই পাশে মুসলিম ব্যবসায়ীদের অবস্থানকে তাঁরা নিজেদের স্বার্থপরিপন্থী মনে করছিলেন। ফলে তাঁরা মুসলিম ব্যবসায়ীদের ওপর নানা ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করেন। কয়েক দশকের এই বিধি-নিষেধ অত্র অঞ্চলে মুসলিম ব্যবসায়ীদের হুমকির মুখে ফেলে দেয়। যদিও তাঁরা বহু সংগ্রামের ভেতর দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করেন।</p> <p>স্বাধীন হওয়ার পর দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে মুসলিমরা স্বাধীনভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। দেশের প্রায় সব ব্যবসায় মুসলমানদের অংশগ্রহণ আছে। সম্প্রতি বতসোয়ানার হীরার খনিতে মুসলিম ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের সুযোগ পেয়েছেন। অবশ্য আফ্রিকান আধিবাসী মুসলিমরা এখনো কৃষিকাজেই বেশি জড়িত।</p> <p>১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে বতসোয়ানা স্বাধীনতা লাভ করলে মুসলিমরা ধর্মীয় স্বাধীনতা ফিরে পায় এবং দেশের প্রথম মসজিদ নির্মাণ করে। বর্তমানে বতসোয়ানায় ২০টি অনুমোদিত মসজিদ রয়েছে। অবশ্য ধর্মীয় শিক্ষায় বতসোয়ানার মুসলিমরা এখনো পিছিয়ে। এখানে কেবল একটিই মুসলিম স্কুল রয়েছে। বেশির ভাগ মুসলিম শিশু ইসলামী শিক্ষার সুযোগ পায় না। মুসলিম শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করতে এখানে সান্ধ্যকালীন মক্তব চালু আছে। শিশুরা দিনে স্কুলে এবং রাতে মক্তবে পাঠগ্রহণ করে।</p> <p>বতসোয়ানায় ভারতীয় মুসলিমদের মাধ্যমে ইসলামের নবযাত্রা শুরু হলেও আদিবাসীদের ভেতর ইসলামের প্রসার ঘটেছে বেশি। দেশটির মুসলিম জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশই আদিবাসী। আফ্রিকান আদিবাসী প্রায় সব গোত্রেই মুসলমানদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। আফ্রিকার দক্ষিণ অঞ্চলের অন্যান্য দেশে, যেখানে ভারতীয় মুসলিমদের হার মুসলিম জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ, সেখানে বতসোয়ানায় ভারতীয় মুসলমানের হার ৬০ শতাংশ। মুসলিমরা স্বাধীনভাবে দেশটিতে ইসলাম প্রচারের সুযোগ পাচ্ছে। বতসোয়ানা মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন ও আল-মাজলিসুল ইলমি বতসোয়ানা দেশটির প্রধান দুই ইসলামী সংগঠন।</p> <p><em>তথ্যসূত্র : ইনসামার ডটকম ও দাওয়াহ ডট সেন্টার</em></p> <p> </p>