<p>ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম কাবুল বিজেতা হিসেবে যাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে তিনি হলেন আবদুল্লাহ ইবনে আমের (রা.)। তাঁর বংশক্রম হলো আবদুল্লাহ বিন আমের বিন কুরাইয বিন রবিয়া বিন হাবিব বিন আবদে শামস বিন আব্দে মানাফ বিন কুসাই আল-কুরাশি আল-আবাশি। আবদুল্লাহ বিন আমের বিন কুরাইয (রা.) ছিলেন হুজুর (সা.)-এর ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে এবং উসমান (রা.) এর মামাতো ভাই।</p> <p>আবদুল্লাহ ইবনে আমের ছিলেন এক সাহসী বীরপুরুষ সাহাবি। ২৯ হিজরিতে উসমান (রা.)-এর শাসনামলে বসরা থেকে আবু মুসা আশআরি (রা.)-কে এবং পারস্য থেকে উসমান ইবনে আবুল আসকে সরিয়ে তাঁদের  স্থলে আবদুল্লাহ ইবনে আমেরকে গভর্নর নিযুক্ত করে বসরা ও পারস্য অঞ্চলকে একত্র করে তাঁর হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৫ বছর। তিনি অত্যন্ত দুর্দান্তভাবে একে একে বিভিন্ন রাজ্য জয় করতে লাগলেন।</p> <p>বসরার আশপাশের দেশ ও ইরানের আশপাশের রাজ্যগুলো তথা ইসতাখির, জওর, এরপর একে একে কারবান, মাইশজান, কারমান-সব জয় করে দখলে নিয়ে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ৩০ হিজরিতে তিনি খোরাসান ও সিজিস্তান জয় করে সন্ধি করতে বাধ্য করেন। সঙ্গে সঙ্গে নিশাপুরও জয় করে নেন। তারপর মরু, তুস, বলখ ও কাবুল (আফগানিস্তানের রাজধানী) বিজয় করেন। তাঁর আমলেই কেসরার বাদশাহ নিহত হয়। এতে তিনি আল্লাহর দরবারে শোকরানাস্বরূপ হজ অথবা ওমরাহ আদায় করেন। এই সফরে এসে তিনি মদিনাবাসীর মধ্যে নিজ ধনভাণ্ডার থেকে অনেক অর্থ দান করেন। এ ছাড়া তিনি সারা আরবে, বিশেষ করে কুরাইশদের মধ্যে দানশীল ব্যক্তি হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি সর্বপ্রথম আরাফার ময়দানে পানির হাউস তৈরি করে তাতে পানির প্রবাহ জারি করেন।</p> <p>উসমান (রা.) শহীদ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি বসরার গভর্নর ছিলেন। তাঁর শাহাদাতের পর বাইতুল মালের ধনভাণ্ডার নিয়ে তালহা (রা.) ও যুবাইর (রা.)-এর সঙ্গে মিলিত হন এবং তাঁদের সঙ্গে জংগে জামালে যোগ দেন। এর পরে তিনি দামেস্ক চলে আসেন। সিফফিনের যুদ্ধে তাঁর অবস্থানের কথা জানা যায় না। তবে মুয়াবিয়া (রা.) হাসান (রা.)-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর আবদুল্লাহ ইবনে আমের (রা.)-কে বসরার গভর্নরও নিযুক্ত করেন।</p> <p>মুয়াবিয়া (রা.) নিজ কন্যা হিন্দাকে তাঁর সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। তবে ব্যক্তিগত ওজর দেখিয়ে তিনি সেই স্ত্রীকে এক পর্যায়ে ছেড়ে দেন। বসরার গভর্নর হওয়ার পর ওই বছরই তিনি ইন্তেকাল করেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমের (রা.) সূত্রে মাত্র একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নবীজি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি তার রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ।</p> <p><em>তথ্যসূত্র : আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৮/৮৮,উসদুল গাবা : ৩/১৮৪, ফুতুহুল বুলদান : ৪১০</em></p>