<p>ইসলামের দৃষ্টিতে পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদের চূড়ান্ত মালিক মহান আল্লাহ। তবে মানুষ আনুগত্য ও বিধান মানার শর্তে সম্পদের মালিক হতে পারে। মানুষের পারস্পরিক লেনদেনে এই ব্যক্তিগত মালিকানা নিরঙ্কুশ। প্রতিটি মানুষের উপার্জন কেবল তার। অন্যায়ভাবে কেউ তা কেড়ে নেওয়ার অধিকার রাখে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ। আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩২)</p> <p><strong>মালিকানা লাভের বৈধ উপায়</strong></p> <p>শরিয়ত সম্পদের মালিকানা লাভের কিছু বৈধ উপায় ঘোষণা করেছে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো।</p> <p><strong>১. বেচাকেনা : </strong>ক্রয়-বিক্রয় সম্পদের মালিকানা লাভের একটি বৈধ উপায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৭৫)</p> <p><strong>২. শ্রম বিনিময় : </strong>মানুষ তার নিজের শ্রমের বিনিময়ে যে অর্থ-সম্পদ অর্জন করে তা বৈধ। নবীজি  (সা.) বলেন, নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কখনো কেউ খায় না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০৭২)</p> <p><strong>৩. চাষাবাদ :</strong> চাষাবাদ অর্থ-সম্পদ অর্জনের একটি বৈধ মাধ্যম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই তোমাদের জন্য ভূমিকে সুগম করে দিয়েছেন; অতএব তোমরা তাঁর দিগদিগন্তে বিচরণ করো এবং তাঁর প্রদত্ত জীবনোপকরণ থেকে আহার গ্রহণ করো। পুনরুত্থান তো তাঁর কাছেই।’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ১৫)</p> <p><strong>৪. অনাবাদি ভূমি আবাদ করা : </strong>অনাবাদি ভূমি আবাদ করলে ব্যক্তি তার বৈধ মালিকানা লাভ করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কেউ কোনো পতিত জমি আবাদ করলে সেটা তারই। অন্যায়ভাবে দখলকারীর পরিশ্রমের কোনো মূল্য নেই। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩০৭৩)</p> <p><strong>৫. শিল্প : </strong>ব্যক্তিগত ও পেশাগত শিল্পের মাধ্যমে যে সম্পদ অর্জন করে তা বৈধ। হাদিসে পূর্ববর্তী নবী-রাসুলদের পেশা বর্ণনা করে মুমিনদের শিল্পমুখী হতে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। হাদিসের বর্ণনা অনুসারে আদম ও শিস (আ.) কৃষক, ইদরিস (আ.) কাপড় সেলাইকারী, নুহ (আ.) কাঠমিস্ত্রি, হুদ (আ.) ব্যবসায়ী ও পশু পালনকারী ছিলেন।</p> <p><strong>৬. প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ : </strong>বন ও পাহাড় থেকে (রাষ্ট্রীয় বিধি অনুসারে) কাঠসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং তা করা বৈধ। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, তোমাদের কারো পক্ষে এক বোঝা লাকড়ি সংগ্রহ করে পিঠে বহন করে নেওয়া কারো নিকট চাওয়ার চেয়ে উত্তম। কেউ দিতেও পারে, নাও দিতে পারে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০৭৪)</p> <p><strong>৭. খনিজ সম্পদ আহরণ :</strong> ইসলামী আইন অনুসারে কোনো ব্যক্তি ভূপৃষ্ঠের অথবা ভূগর্ভের কোনো খনিজ সম্পদ আহরণ করলে তাতে তার আংশিক মালিকানা প্রমাণিত হয়। এই মালিকানা সম্পূর্ণ বৈধ। (আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু)</p> <p><strong>৮. শিকার : </strong>পশু, পাখি ও মাছ শিকার ইসলামে বৈধ। কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা অনুসরণ করে শিকার করলে এবং এর বিনিময়ে সম্পদ লাভ করলে তা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও তা ভক্ষণ হালাল করা হয়েছে। তোমাদের ও পর্যটকদের ভোগের জন্য।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৯৬)</p> <p><strong>৯. রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ :</strong> কোনো ব্যক্তির অবদান ও অবস্থা বিবেচনা করে রাষ্ট্র যদি কোনো সম্পদ বরাদ্দ দেয়, তবে তা গ্রহণ করা বৈধ। একইভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি তাদের বৈধ উপার্জন থেকে কোনো গুণীজনের জন্য অর্থ-সম্পদ বরাদ্দ দেয়, তবে তা গ্রহণ করাও বৈধ। যেমন আল্লাহর রাসুল (সা.) জুবায়ের (রা.)-কে বনু নাজির গোত্রের সম্পত্তি থেকে এক টুকরা ভূমি দিয়েছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১৫১)</p> <p><strong>১০. পুরস্কার :</strong> কোনো বিশেষ কাজ উদ্ধারের জন্য যদি পুরস্কার ঘোষণা করা হয় এবং কোনো ব্যক্তি তা সম্পন্ন করে, তবে তা ঘোষিত পুরস্কার গ্রহণ করা বৈধ। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা বলল, আমরা রাজার পানপাত্র হারিয়েছি, যে তা এনে দেবে সে এক উট বোঝাই মাল পাবে এবং আমি তার জামিন।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৭২)</p> <p><strong>১১. দান ও উপহার : </strong>দান বা উপহার হিসেবে কোনো অর্থ-সম্পদ লাভ করলে তা ভোগ করা বৈধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা পরস্পরকে উপহার দাও, কেননা তা আন্তরিকতা বৃদ্ধি করে। (শরহুস সুন্নাহ, হাদিস : ১০৮)</p> <p><strong>১২. অসিয়ত :</strong> ব্যক্তির জন্য করে যাওয়া অসিয়তের সম্পদ তার জন্য সম্পূর্ণ বৈধ। আল্লাহ বলেন, ‘এর সবই (ওয়ারিশদের অংশ লাভ) যে যা অসিয়ত করে তা দেওয়া এবং ঋণ পরিশোধের পর।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১১)</p> <p><strong>১৩. উত্তরাধিকার : </strong>সম্পদের মালিকানা লাভের একটি বৈধ উপায় হলো উত্তরাধিকার। শরিয়তের নির্ধারিত শর্ত পূরণ করলে ব্যক্তি উত্তরাধিকার সম্পদ ভোগের অধিকার লাভ করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বাবা-মা এবং আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে। এটা অল্প হোক বা বেশি হোক, এক নির্ধারিত অংশ।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭)</p> <p><strong>১৪. মোহর : </strong>নারী মোহর হিসেবে যে সম্পদ ও অর্থ লাভ করে তা তার বৈধ সম্পদ। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নারীদের তাদের মোহর স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রদান করো; খুশি মনে তারা মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দিলে তোমরা তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করবে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৪)</p> <p><strong>১৫. জাকাত ও ফিতরা : </strong>দরিদ্র মানুষের জন্য জাকাত ও ফিতরা একটি বৈধ উপার্জন। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করবে। এর দ্বারা তুমি তাদের পবিত্র করবে এবং পরিশোধিত করবে।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১০৩)</p> <p>১৬. ভরণ-পোষণ : স্ত্রী-সন্তানের ভরণ-পোষণ হিসেবে স্বামী যে অর্থ প্রদান করে তা স্ত্রী-সন্তানের জন্য বৈধ। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘জনকের দায়িত্ব যথাবিধি তাদের ভরণ-পোষণ করা। কাউকে তার সাধ্যাতীত কার্যভার দেওয়া হয় না।’ সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৩৩)</p> <p>আল্লাহ সবাইকে বৈধভাবে উপার্জন করার তাওফিক দিন। আমিন।</p>