<article> <p><strong>এক. খাবারের আধিক্যের কারণে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা</strong></p> <p>শীতকালে প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি ও ফলমূল পাওয়া যায়। এটি আল্লাহ তাআলার অশেষ দান। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ করুক। আমি তো অঝোর ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করেছি। অতঃপর মাটিকে বিদীর্ণ করেছি। আর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্যাদি, আঙুর, শাক-সবজি, জলপাই, খেজুর, বহু বৃক্ষবিশিষ্ট বাগান, ফলফলাদি ও ঘাস। এসব তোমাদের ও তোমাদের পালিত পশুকুলের জীবনধারণের জন্য।’(সুরা : আবাসা : আয়াত ২৪-৩২)।</p> </article> <article> <p><strong>দুই. শীতবস্ত্রের জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা </strong></p> <p>পোশাক আল্লাহর বিশেষ দান ও অনুগ্রহ। আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে পোশাকের মাধ্যমে সম্মানিত ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছেন। প্রচণ্ড শীত থেকে বাঁচার জন্য মহান আল্লাহ বিশেষ পোশাক দান করেছেন। তাই এই ঋতুতে তাঁর বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‌‘...আর আল্লাহ তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের; তা তোমাদের তাপ থেকে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেন তোমাদের জন্য বর্মের, তা তোমাদের যুদ্ধে রক্ষা করে...।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৮১)</p> </article> <article> <p><strong>তিন. বেশি বেশি নফল রোজা রাখা</strong></p> <p>শীতকালে দিন থাকে খুবই ছোট। শীতকালে রোজা রাখলে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকতে হয় না। তাই এই ঋতুতে সম্ভব হলে বেশি বেশি রোজা রাখবে। আমের ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, শীতল গনিমত হচ্ছে শীতকালে রোজা রাখা। (তিরমিজি : ৭৯৫)</p> </article> <article> <p><strong>চার. শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো</strong></p> <p>ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে বছর ঘুরে আসে শীত-শৈত্যপ্রবাহ। হাড়-কাঁপানো শীতে নাকাল হয়ে পড়ে দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। শীতার্তসহ বিপন্ন সব মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইসলামের আদর্শ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজনকে দাও তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। আর কিছুতেই অপব্যয় করো না।’ (সুরা : বানি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬)</p> <p><strong>পাঁচ. শীতকালে বিশেষভাবে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়</strong></p> <p>শীতকালে রাত অনেক লম্বা হয়। কেউ চাইলে পূর্ণরূপে ঘুমিয়ে আবার শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়তে সক্ষম হতে পারে। মহান আল্লাহ ঈমানদারদের গুণাবলি সম্পর্কে বলেন, ‘তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের রবকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা : সাজদাহ, আয়াত : ১৬)</p> <p><strong>ছয়. অজু ও গোসলের ব্যাপারে সচেতন হওয়া</strong></p> <p>শীতকালে মানুষের শরীর শুষ্ক থাকে। তাই যথাযথভাবে ধৌত না করলে অজু-গোসল ঠিকমতো আদায় হয় না। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, অজু করার সময় পায়ের গোড়ালি যেসব স্থানে পানি পৌঁছেনি সেগুলোর জন্য জাহান্নাম। তাই তোমরা ভালোভাবে অজু করো। (মুসলিম, হাদিস : ৪৫৮)</p> <p><strong>সাত. মোজার ওপর মাসেহ করা</strong></p> <p>এ ক্ষেত্রে নিয়ম হলো, অজু করে মোজা পরিধান করবে। মুকিম ব্যক্তির জন্য পরবর্তী এক দিন পর্যন্ত যতবার অজুর প্রয়োজন, তাতে পা ধোয়ার প্রয়োজন হবে না, বরং তিন আঙুল পরিমাণ মোজার ওপর মাসেহ করে নিলেই চলবে। মুসাফিরের জন্য এ সুযোগ তিন দিন পর্যন্ত। অসংখ্য হাদিস শরিফে রাসুল (সা.)-এর অনুরূপ আমলের কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। (রদ্দুল মুহতার : ১/২৬০)।</p> <p>তবে এখানে একটি ভুল ধারণার নিরসন প্রয়োজন। অনেকেই মনে করেন, সব মোজার ওপরই মাসেহ করা যায়, যেমন—সুতি, নাইলনের মোজা ইত্যাদির ওপর মাসেহ বৈধ নয়; বরং মোজার ওপর মাসেহ করার জন্য এটি এমন চামড়ার মোজা হতে হবে, যা টাখনু পর্যন্ত ঢেকে ফেলে অথবা চামড়ার মোজার গুণে গুণান্বিত—এমন মোজা হতে হবে। আর মোজার ওপর মাসেহ করা জরুরি নয়, বরং এটি বৈধ ও অবকাশমূলক বিষয়।</p> <p><strong>আট. মুখ ঢেকে নামাজ পড়বে না</strong></p> <p>নামাজে কোনো ওজর ছাড়া মুখ ঢেকে রাখা মাকরুহ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) সালাতের সময় কাপড় ওপর থেকে নিচের দিকে ঝুলিয়ে দিতে ও মুখ ঢেকে রাখতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৬৪৩)।</p> <p>তাই নামাজ অবস্থায় বিনা ওজরে রুমাল বা চাদর ইত্যাদি দিয়ে মুখ ঢেকে রাখবে না। (রদ্দুল মুহতার : ১/৬৫২)</p> <p><strong>নয়. শীতকালে জাহান্নাম থেকে বেশি বেশি মুক্তি চাওয়া</strong></p> <p>শীত-গ্রীষ্মের হাদিসে বর্ণিত ব্যাখ্যা হলো, শীত ও গ্রীষ্মের তীব্রতা আসে জাহান্নামের নিঃশ্বাস থেকে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলে, হে রব, আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলেছে। মহান আল্লাহ তখন তাকে দুটি নিঃশ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি নিঃশ্বাস শীতকালে, আরেকটি গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাকো। (বুখারি : ৩২৬০)।</p> <p>সুতরাং তীব্র শীতে জাহান্নামের কথা স্মরণ করে মহান আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া উচিত।</p> <p><strong>দশ. শীতকালে গাছের পাতা ঝরে পড়ার দৃশ্য দেখে শিক্ষা গ্রহণ</strong></p> <p>শীতে গাছপালার পাতা ঝরে যাওয়া েথকে শিক্ষা গ্রহণ করার তাগিদ এসেছে হাদিস শরিফে। রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি শুকনা পাতাবিশিষ্ট গাছের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তাঁর লাঠি দিয়ে তাতে আঘাত করলে হঠাৎ পাতাগুলো ঝরে পড়ে। অতঃপর তিনি বলেন, কোরো বান্দা ‘আলহামদু লিল্লাহ, সুবহানাল্লাহ এবং লাইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ বললে তা তার গুনাহ এরূপভাবে ঝরিয়ে দেয় যেভাবে এই গাছের পাতা ঝরে পড়েছে। (তিরমিজি : ৩৫৩৩)</p> <p>মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।</p> </article>