<p>কিছু অভ্যাস এমন আছে, যেগুলো মানুষকে আল্লাহর রহমত পেতে সাহায্য করে। আজ আমরা এমন তিনটি অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো কারো মধ্যে থাকলে তার আল্লাহর রহমত পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। জাবির (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যার মধ্যে তিনটি গুণ রয়েছে, আল্লাহ তাআলা তার ওপর তাঁর (রহমতের) ডানা প্রসারিত করবেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন : দুর্বলদের সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার, পিতা-মাতার সঙ্গে মমতা জড়ানো কোমল ব্যবহার এবং দাস-দাসীর প্রতি অনুগ্রহপূর্ণ ও সৌজন্যমূলক আচরণ। (‌তিরমিজি, হাদিস : ২৪৯৪)</p> <p>এই হাদিসের সনদের ব্যাপারে অনেকের মতবিরোধ থাকলেও এই অভ্যাসগুলো যে আল্লাহর রহমত পাওয়ার মাধ্যম, সে ব্যাপারে কোরআন-হাদিসে আরো অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। সেগুলো থেকে কিছুসংখ্যক তুলে ধরা হলো—</p> <p><strong>দুর্বলের সঙ্গে সদাচরণ : </strong>দুর্বল শব্দটি অনেক ব্যাপক। এতে সেবক, অসুস্থ, বৃদ্ধ, বিপদগ্রস্ত, নারী, এতিম, মিসকিন—সব অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তাদের জন্য শরিয়তের বিধানেও কিছুটা শিথিলতা আনা হয়েছে। যেমন—নবীজি (সা.) বলেছেন, বৃদ্ধ, অল্পবয়স্ক, দুর্বল ও নারীদের জিহাদ হলো হজ-ওমরাহ। (নাসায়ি, হাদিস : ২৬২৬)</p> <p>এমনকি দুর্বলদের যাতে কষ্ট না হয়, সে জন্য নবীজি (সা.) ওমর (রা.)-কে ভিড়ের সময় হাজরে আসওয়াদে চুমু খেতে নিষেধ করেছেন; বরং দূর থেকে ইশারা করে চুমু খেতে বলেছেন। (মুসনাদে আহমাদ)</p> <p>নামাজে কিরাত পড়ার ক্ষেত্রেও দুর্বলদের বিবেচনা করার তাগিদ দিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস : ৯০)</p> <p>নবীজি (সা.) আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়দের সম্মান করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪৩)</p> <p>যারা দুর্বলদের সঙ্গে সদাচরণ করবে না, নবীজি (সা.) তাদের নিজের উম্মত বলে স্বীকার করবেন না। অন্যদিকে যারা দুর্বলদের ভরণ-পোষণে সচেষ্ট হবে, তারা জিহাদের সওয়াব পাবে। অর্থাৎ আল্লাহর রহমতের দরজা তাদের জন্য খুলে যাবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে লোক বিধবা ও মিসকিনদের ভরণ-পোষণের ব্যাপারে চেষ্টা করে, সে আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মতো। অথবা সে ওই ব্যক্তির মতো, যে দিনে সিয়াম পালন করে এবং রাতে (ইবাদতে) দণ্ডায়মান থাকে। (বুখারি, হাদিস : ৬০০৬)</p> <p><strong>মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করা : </strong>পবিত্র কোরআনের সুরা বনি ইসরাইলে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের শিরক পরিত্যাগের পাশাপাশি মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। সুরা লুকমানে সন্তানের জন্য মায়ের নিদারুণ কষ্টের বর্ণনা দিয়েছেন। এমন অসংখ্য আয়াতে তিনি মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।</p> <p>নবীজি (সা.)-ও সাহাবায়ে কিরামকে মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করার তাগিদ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, কোনো এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করল, আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় কাজ কোনটি? তিনি বলেন, সময় হলে নামাজ পড়া। সে আবার প্রশ্ন করল, এরপর কোন কাজটি সর্বাধিক প্রিয়? তিনি বলেন, মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার। (মুসলিম, হাদিস : ৮৫)</p> <p><strong>দাস-দাসীর সঙ্গে সদাচরণ করা : </strong>দাস-দাসীরাও মহান আল্লাহর বান্দা। তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা আল্লাহ পছন্দ করেন না। অর্থাৎ অধীনস্থ মানুষের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করা সবার কর্তব্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। কোনো কিছুকে তার সঙ্গে শরিক কোরো না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথি, মুসাফির ও তোমাদের দাস-দাসীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক, অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৬)</p> <p>আর যারা মহান আল্লাহর আদেশ পালন করবে, তারা অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রহমত অর্জন করতে পারবে। মহান আল্লাহ সবাইকে মহান আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।<br />  </p>