<p>খাতুন ইসমাতুদ্দিন বিনতে মঈনুদ্দিন উনুর (রহ.) ছিলেন একজন প্রখ্যাত প্রশাসকের কন্যা এবং দুজন সুলতানের স্ত্রী। তিনি খাতুন ইসমিয়্যাহ নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি দামেস্কে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন। ইসমাতুদ্দিন (রহ.) প্রথমে ৫৪২ হিজরিতে সুলতান নুরুদ্দিন মাহমুদ জাংকি (রহ.)-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ৫৬৯ হিজরিতে তাঁর মৃত্যুর পর ৫৭২ হিজরিতে সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি (রহ.)-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সুলতান নুরুদ্দিন মাহমুদ জাংকি (রহ.)-এর ঔরসে তাঁর ছেলে ইসমাইল জন্মগ্রহণ করেন। অবশ্য নুরুদ্দিন জাংকি (রহ.)-এর সঙ্গে তাঁর বিয়ে রাজনৈতিক কারণেই হয়েছিল। কেননা তাঁর বাবা মঈনুদ্দিন উনুর ছিলেন বিখ্যাত সেনাপতি। ইউরোপীয় ক্রুসেডারদের হাত থেকে দামেস্ক রক্ষায় তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল। ৫৪৪ হিজরিতে তিনি ইন্তেকাল করেন।</p> <p>সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি (রহ.)-এর সঙ্গে যখন তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, তখন তাঁর বয়স প্রায় ৫০ বছর এবং সুলতানের বয়স ৪০ বছর। দ্বিতীয় সংসারে তাঁর কোনো সন্তান ছিল না। বয়সে বড় হওয়ার পরও তিনি তাঁকে বিয়ে করেছিলেন সুলতানা হিসেবে ইসমাতুদ্দিনের সম্মান রক্ষা এবং নেককার ও গুণবতী নারীকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে সৌভাগ্য ঘরে তোলার জন্য। কেননা সুলতানা ইসমাতুদ্দিন (রহ.) আল্লাহভীতি, ইবাদতে নিমগ্নতা, বুদ্ধিমত্তা ও উচ্চ সাহসিকতার জন্য সুপরিচিত। সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি (রহ.) বহু বিষয়ে তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করতেন। বলা হয়, সুলতান আইয়ুবির সাহসী পদক্ষেপগুলোর পেছনে সুলতানা ইসমাতুদ্দিন (রহ.) ছিলেন বিশেষ অনুপ্রেরণাস্বরূপ। সুলতানও তাঁকে বিশেষ মূল্যায়ন করতেন। হাররা নামক স্থানে সুলতান অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রতিদিন প্রিয়তমা স্ত্রীর নামে দীর্ঘ দীর্ঘ পত্র লিখতেন।</p> <p>একজন বিখ্যাত সেনাপতি ও প্রশাসকের কন্যা এবং সুলতানের স্ত্রী হওয়ার পরও সুলতানা ইসমাতুদ্দিন (রহ.) ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও আল্লাহভীরু। রাত-দিন ইবাদতে মগ্ন থাকতেই তিনি পছন্দ করতেন। বিশেষত রাত জেগে ইবাদত করা ছিল তাঁর প্রিয় আমল। তাঁর পিতা মঈনুদ্দিন উনুরও ছিলেন একজন সজ্জন ব্যক্তি। তিনি আলেমদের ভালোবাসতেন এবং দ্বিনি কাজে উদার মনে খরচ করতেন। যা তাঁর জীবনে গভীর রেখাপাত করেছিল। তাঁর প্রথম স্বামী নুরুদ্দিন জাংকি (রহ.)-ও তাঁকে প্রভাবিত করেছিলেন। কোনো এক রাতে তিনি তাহাজ্জুদের সময় জাগ্রত হতে না পেরে খুবই মনঃক্ষুণ্ণ হন। তাঁর মানসিক অস্থিরতা দেখে সুলতান নুরুদ্দিন (রহ.) তাহাজ্জুদের সময় প্রাসাদে বিশেষ আওয়াজের ব্যবস্থা করেন এবং ইসমাতুদ্দিন (রহ.)-এর তাহাজ্জুদের সঙ্গী হিসেবে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেন।</p> <p>সুলতানা ইসমাতুদ্দিন (রহ.) পিতার মতোই আলেম-উলামা ও দ্বিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য হাত খুলে ব্যয় করতেন। তিনি একাধিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তাঁর অর্থায়নে দামেস্কে হানাফি মতাদর্শের একটি মাদরাসা, মহিলা মাদরাসা, সুফিদের জন্য খানকা, ইয়াজিদ নদীর তীরে কাসিয়ুন শহরে একটি কবরস্থান নির্মাণ করেন এবং ৫৮১ হিজরিতে সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পদ ওয়াকফ করে যান। তাঁর ভাই সাআদুদ্দিনও এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য বিপুল অর্থ দান করে যান। সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি (রহ.) প্রিয় স্ত্রীর স্মরণে কবরস্থানের পাশেই একটি মাদরাসা-মসজিদ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করেন, যা ইতিহাসে ‘আল-জামিউল জাদিদ’ নামে পরিচিত। উসমানীয় শাসনামলের শুরু ভাগ পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠান টিকে ছিল। ইসমাতুদ্দিন (রহ.) যে বছর মারা যান, সে বছরই তাঁর ভাই সাআদুদ্দিন মাসউদও মারা যান। যিনি সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি (রহ.)-এর বোন জামাই ও আইয়ুবি বাহিনীর বড় সেনা অফিসার ছিলেন। তাঁদের শোকে সুলতান এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে মানুষ তাঁর জীবনের আশা ছেড়ে দেয়।</p> <p>সূত্র : আলুকাহ ও মারেফা ডটকম</p>