<p>ঈমানের দাবি হলো, মুমিন তার দৈনন্দিন জীবনে বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান হবে। বিশেষত নিজের ঘর-বাড়ি ও আবাসস্থলের ব্যাপারে সে সর্বদা সতর্ক থাকবে। হাদিসে ঘরের পাঁচ স্থানের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। যার কয়েকটির ব্যাপারে বলা হয়েছে সেখানে শয়তান বসবাস করে। তবে কোনো কোনো মুহাদ্দিসদের মতে, রাসুলুল্লাহ (সা.) শয়তান শব্দের ব্যবহার রূপকার্থে ব্যবহার করেছেন। মূলত তা দ্বারা ক্ষতিকারক বস্তুগুলো উদ্দেশ্য। সুতরাং এসব বিষয়ে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ও জাগতিক বিবেচনায় মুমিনের সতর্ক থাকা আবশ্যক। নিম্নে পাঁচ স্থানের বর্ণনা তুলে ধরা হলো—</p> <p>১. বিছানা : যে বিছানায় দীর্ঘদিন ধরে কেউ থাকে না অথচ তা বিছিয়ে রাখা হয় এমন বিছানায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একটি বিছানা ব্যক্তির জন্য, একটি তার পরিবারের জন্য, একটি অতিথির জন্য, আর চতুর্থটি শয়তানের জন্য। ’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৩৮৫)</p> <p>মুহাদ্দিসরা বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি দীর্ঘদিনের জন্য বাড়ির বাইরে যায়, তবে সে বিছানা ভাঁজ করে রেখে যাবে। আর যদি কোনো কারণে বিছানা বিছিয়ে রেখে যায়, তবে তা ভালোভাবে পরিষ্কার না করে এবং না দেখে তাতে ঘুমাবে না। কেননা হতে পারে, তাঁর অনুপস্থিতিতে সেখানে ক্ষতিকর কোনো কীট-পতঙ্গ আশ্রয় নিয়েছে। আবার কোনো কোনো মুহাদ্দিস চতুর্থ বিছানা দ্বারা অপচয় নিষিদ্ধ হওয়ার অর্থ গ্রহণ করেছেন।</p> <p>২. গোসলখানা : টয়লেট ও গোসলখানা মানুষের জন্য স্পর্শকাতর স্থান। এগুলো যেমন মানুষের জন্য অতি প্রয়োজনীয়, তেমনি তা রোগ-জীবাণুর বিস্তারের স্থান। সুতরাং সতর্কতার সঙ্গে তা ব্যবহার করা আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাধারণত পায়খানার স্থানে শয়তান এসে থাকে। সুতরাং তোমাদের কেউ পায়খানায় প্রবেশ করলে যেন বলে, ‘আমি আল্লাহর কাছে শয়তান ও যাবতীয় নোংরা বিষয় থেকে আশ্রয় চাইছি। ’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৬)</p> <p>৩. অবিন্যস্ত কাপড় : রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরে কাপড়গুলো ভাঁজ করে রাখতে বলেছেন। কেননা এতে ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়, কাপড়ের আয়ু কমে যায় এবং তাতে সহজেই পোকা-মাকড় আশ্রয় নিতে পারে। তিনি বলেন, ‘তোমরা তোমাদের কাপড় ভাঁজ করে রাখো। যেন তা প্রাণ ফিরে পায়। কেননা শয়তান যখন কোনো কাপড় ভাঁজ করা অবস্থায় পায়, তা পরিধান করা থেকে বিরত থাকে। আর যখন তা খোলা অবস্থায় পায় তা পরিধান করে। ’ (মুজামুল আউসাত, হাদিস : ৫৬৯৮)</p> <p>হাদিস বিশারদরা বলেন, নবী করিম (সা.) মূলত কাপড় পরিধান করার পর তা এলোমেলো অবস্থায় ফেলে রাখতে নিষেধ করেছেন। কেননা তাতে কাপড়ের আয়ু কমে যায়। আর ভাঁজ করে রাখলে তাতে ক্ষতিকারক কিছু সহজে আশ্রয় নিতে পারে না। বিশেষত কাপড়টি যখন বিসমিল্লাহ পাঠ করে ভাঁজ করা হয়, তখন আল্লাহ তাতে বরকত দান করেন। তারা আরো বলেন, যেসব পরিধেয় বস্তু ভাঁজ করা যায় না। যেমন জুতা ও মোটা টুপি তা বিসমিল্লাহ পাঠ করে রাখবে এবং পরিধানের আগে তা ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেবে।</p> <p>৪. পুতুল ও মূর্তি শোভিত ঘর : পুতুল, মূর্তি ও প্রাণীর ছবি দ্বারা সুসজ্জিত ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। কেননা এগুলো শয়তানের হাতিয়ার। পুতুল, মূর্তি ও প্রাণীর ছবি মানুষের অন্তরে শিরকের বিষাক্ত বীজ রোপণ করে এবং ধীরে ধীরে পৌত্তলিকতার দিকে নিয়ে যায়। এ জন্য ইসলাম এগুলো পরিহারের কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে বাড়িতে কুকুর বা মূর্তি থাকে তাতে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩২২৫)</p> <p>৫. আগুন প্রজ্বলনের স্থান : ঘর ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য আগুন প্রজ্বলনের স্থানগুলোর ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা আবশ্যক। কেননা আগুনের ব্যাপারে অসতর্কতা বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। বিশেষত রাতে ঘুমের সময় ঘরের আগুনগুলো নিভিয়ে শোয়া আবশ্যক। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আর (শয্যা গ্রহণের সময়) তোমরা তোমাদের প্রদীপগুলো নিভিয়ে দেবে। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬২৩)</p> <p>আল্লাহ সবার ঘরকে নিরাপদ করুন। আমিন</p>