<p>কয়েক দিন পরই শুরু হবে মহিমান্বিত হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। পৃথিবীর প্রতিটি দেশ থেকে ছুটে আসছেন কাবাপ্রেমী হাজারো মানুষ। পবিত্র এই হজের অন্যতম ওয়াজিব বিধান হলো জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা। শয়তানকে উদ্দেশ করে হজযাত্রীরা তিনটি স্থানে কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। যদিও এই তিনটি স্থানে শয়তান বিদ্যমান নেই, কিন্তু হজযাত্রীদের কঙ্কর নিক্ষেপণ দেখে শয়তান অপমানে জ্বলতে থাকে। লিখেছেন মোস্তফা কামাল গাজী</p> <p><strong>কঙ্কর নিক্ষেপের ইতিহাস</strong><br /> মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে হজরত ইবরাহিম (আ.) তাঁর প্রাণপ্রিয় শিশুপুত্র হজরত ইসমাঈল (আ.)-কে নিয়ে চললেন কোরবানি করতে। শয়তান ভাবল, যদি হজরত ইবরাহিম (আ.) এই পরীক্ষায় সফল হয়ে যান, তাহলে আল্লাহর আরো নিকটতম বান্দা হিসেবে পরিগণিত হবেন। তাই সে কোরবানির মহৎ উদ্দেশ্য পণ্ড করার জন্য পিতা-পুত্র উভয়কে কুমন্ত্রণা দিতে থাকে। তখন হজরত ইবরাহিম (আ.) কঙ্কর নিক্ষেপ করে ওই তিনটি স্থানেই শয়তানকে বিতাড়ন করেছিলেন। স্মৃতিবিজড়িত এই ঘটনাকে মুসলিম হৃদয়ে চিরজাগ্রত রাখার জন্য কঙ্কর নিক্ষেপণকে হজের বিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।</p> <p><strong>কঙ্কর নিক্ষেপের পদ্ধতি</strong><br /> হজযাত্রীদের ৯ জিলহজ হজের মূল বিধান আরাফাতের ময়দানে সারা দিন অবস্থান করে মুজদালিফায় যেতে হয়। রাতটা মুজদালিফার খোলা আকাশের নিচে ইবাদত ও জিকির করে কাটিয়ে ফজরের পর শয়তানকে মারার জন্য প্রত্যেক হাজিকে ছোট আকারের ২১টি পাথর সংগ্রহ করে মিনায় যেতে হয়। মিনায় গিয়ে তিনটি স্থানে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হয়—১. জামারাতুল আকাবা (শেষ জামারা) ২. জামারাতুল উস্তা (মধ্যম জামারা) এবং ৩. জামারাতুল উলা (প্রথম জামারা)</p> <p>জামারাতুল আকাবা মক্কার দিকে মসজিদুল খাইফের সর্ব নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত। একে জামারাতুল উখরা ও কুবরাও বলা হয়। ১০ জিলহজ এখানে তাকবির বলতে বলতে সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিতে হয়। কাবাঘর বাঁ দিকে ও মিনা ডান দিকে রেখে দাঁড়ানো সুন্নত। অন্য দুই জামারায় এদিন কঙ্কর নিক্ষেপ করতে নেই। ১১ তারিখে তিন জামারায় (প্রথমে ছোট, এরপর মধ্যম এবং সব শেষে বড় জামারায়) ৭–৩=২১টি পাথর মারতে হয়। ১২ তারিখেও অনুরূপ তিন শয়তানকে ২১টি পাথর মারতে হয়। তিন দিনে সর্বমোট ৭+২১+২১=৪৯টি কঙ্কর মারতে হয়।</p> <p>কঙ্কর নিক্ষেপের সময়<br /> সূর্যোদয়ের পর থেকে কঙ্কর নিক্ষেপের সময় শুরু হয়। তবে সুন্নত হলো সূর্য উঠার কিছু সময় পর দিনের আলোতে কঙ্কর নিক্ষেপ করা। হজরত জাবের (রা.) বলেন, ‘কোরবানির দিবসের প্রথম ভাগে (সূর্য উঠার কিছু পর) রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর উটের পিঠে আরোহণ অবস্থায় জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ করেছেন।’ (আবু দাউদ : ২/১৪৭)</p> <p>সূর্য হেলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এর সময় থাকে। দুর্বল ও নারীদের জন্য ১০ তারিখের রাতে সূর্যোদয়ের আগে কঙ্কর নিক্ষেপের অবকাশ রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে যখন সহজে সুযোগ হয় তখনই কঙ্কর মারা যাবে।</p> <p>কঙ্কর নিক্ষেপের ফজিলত<br /> কঙ্কর নিক্ষেপের ফজিলত সম্পর্কে একাধিক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আর তোমার কঙ্কর নিক্ষেপ, তা তো তোমার জন্য সঞ্চিত করে রাখা হয়।’ (মুজাম কাবির : ১৩৩৯০)</p> <p>অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আর জামারায় পাথর নিক্ষেপ, এ ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর নিচের বাণীটি প্রযোজ্য, ‘অতঃপর কোনো ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ-জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ।’ (সুরা : সাজদাহ, আয়াত : ১৭) (সহিহুত তারগিব ওয়াত   তারহিব : ১১১৩)</p> <p>আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আর জামারায় তোমার কঙ্কর নিক্ষেপ, এতে তোমার নিক্ষিপ্ত প্রতিটি কঙ্করের বিনিময়ে একেকটি ধ্বংসকারী কবিরা গুনাহ মোচন করা হবে।’ (সহিহুত তারগিব ওয়াত তারহিব : ১১১২)</p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, ‘তুমি যদি কঙ্কর নিক্ষেপ করো, তোমার জন্য তা কিয়ামতের দিন নূর হবে।’ (সহিহুত তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস : ১৫৫৭)</p> <p><strong>মোস্তফা কামাল গাজীর লেখা থেকে</strong></p>