<p>ইয়াসমিন, লিটন, রাজু, নীলুফার—এদের মতো আরো অনেকেই ছিল হুমায়ূন আহমেদের খুব কাছের মানুষ। পিরুজালী গ্রামের প্রাইমারি স্কুল পড়ুয়া এ শিশুদের কাছে ‘নুহাশ পল্লী’  ছিল সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। ওরা যখন-তখন ছুটে আসত হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নের ছায়া শীতল উদ্যানে।  ‘স্যার’ ওদের কাছে ডেকে বানিয়ে দিলেন নাটকের চরিত্র। বিয়েবাড়ি, কনে সাজানো অথবা কোনো গ্রামীণ উত্সবের দৃশ্যে দেখা যেত এই শিশুশিল্পীদের। হুমায়ূন আহমেদের সান্নিধ্যে থাকার সময় শিশুদের নিয়ে তাঁর এ ধরনের নানা ঘটনা আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।</p> <p>রিকশার টায়ার নিয়ে খেলা  করা  উদোম  গায়ের কোনো  শিশুকে তিনি আদর করে নিয়ে আসতেন ক্যামেরার ফ্রেমে। এভাবেই শিশুরা তাঁর ভালোবাসার পরশ পেত। ছুটে আসত দল বেঁধে। নাটকের শুটিং শেষ হলে বলতেন, সবাই খেয়ে যাবে। মোরগ-পোলাও রান্না হতো। খাওয়ার পর শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হতো ‘সম্মানী খাম’।</p> <p>নুহাশ পল্লীতে বেড়াতে আসা শিশু অথবা আশপাশের শিশুদের নিয়ে তিনি অনেক সময় কাটাতেন। শিশুদের নিয়ে গল্প করতেন। ওদের সঙ্গে নিয়ে বেড়াতেন বাগানের এদিক-সেদিক। হাতে থাকত ছোট চাকু। দারচিনিগাছের ছাল কেটে টুকরা টুকরা করতেন। বলতেন, তোমরা দারচিনি চেনো? বাজারের শুকনা দারচিনি সবাই দেখেছ। ওসব আসলে শুঁটকি। আসল তাজা দারচিনি আজ তোমাদের খেতে দেব। সদ্য গাছ থেকে কেটে আনা দারচিনি সবার হাতে দিয়ে বলতেন, এবার খেয়ে দেখো। শিশুদের নিয়ে ঢুকে যেতেন করমচাবাগানে। করমচার রং লাল অথবা সবুজ—পেকে কালো হওয়া করমচা অনেকটাই দুর্লভ। তিনি কালো করমচা এনে সবার হাতে দিয়ে বলতেন, নাও, খেয়ে দেখো। এটা কালো জাম না, কালো পাকা করমচা।</p> <p>আমবাগানে হাঁটতেন শিশুদের নিয়ে। বলতেন, এ বাগানে যত প্রকার আমগাছ আছে, তার সঙ্গে আমাদের দেশের একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। কে বলতে পারবে কত প্রকার আমগাছ আছে?</p> <p>উত্তরটা আমিই বলছি—৭১।</p> <p>সবাইকে জিজ্ঞেস করতেন, কোন ক্লাসে পড়ো?</p> <p>যে বলত ক্লাস টু, তিনি হেসে বলতেন—ক্লাস টু, খায় শুধু গু।</p>