<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাংলাদেশের আধুনিক চারুশিল্পের অন্যতম পুরোধা চিত্রশিল্পী শেখ মোহাম্মদ সুলতানের জন্মশতবার্ষিকী এ বছর। ফসল ফলানো কঠোর পরিশ্রমী শীর্ণকায় কৃষক কিংবা উৎপাদক শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার, এমনকি গবাদি পশু</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সবার অন্তর্গত শক্তিকে তিনি চিত্রিত করেছেন হৃষ্টপুষ্ট, পেশিবহুল সুখী-সংগ্রামীজীবনের প্রতীকীরূপে। এই শিল্পদর্শন ও তাঁর বিবাগীজীবন নিয়ে তিনি দেশে-উপমহাদেশে কিংবদন্তিতুল্য এক অসামান্য সৃজন-চরিত্র।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">১০ আগস্ট, ১৯২৪ সালে নড়াইল জেলার মাছিমদিয়া গ্রামে জন্ম লাল মিয়ার। কালক্রমে তিনিই শিল্পী এস এম সুলতান। নামটি দিয়েছিলেন কলকাতার শাহেদ সোহরাওয়ার্দী। বাবা শেখ মেসের আলী কৃষিকাজের পাশাপাশি ঘরামি আর রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">১৯২৮ সালে লাল মিয়াকে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি পাঁচ বছর পড়ালেখা করে বাবার কাজে যুক্ত হন। শেখ মেসের নকশার কাজ করতেন। সবিস্ময়ে তিনি দেখতেন ঘর আর ইমারতের গড়ে ওঠা! পিতার হাতের এই নির্মাণশিল্প ভালো লাগা থেকে কাগজে কয়লা আর পেন্সিলে দাগাদাগি থেকে লাল মিয়ার আঁকাআঁকির শুরু। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/08.August/02-08-2024/2/kalerkantho-sl-4a.jpg" height="361" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/08.August/02-08-2024/2/kalerkantho-sl-4a.jpg" style="float:left" width="350" />গৃহনির্মাণশিল্পী পিতার কাছ থেকেই লাল মিয়ার মনে অপূর্ব বস্তু নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠে। শিশু লাল মিয়া কাঠ-কয়লা ও কাঁচা হলুদ আর পুঁইফলের রস টিপে টিপে যে লালচে রং হয়, এসব দিয়ে আঁকতেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">লেখক আহমদ ছফার কাছে সুলতান নিজের নিয়তির বয়ান করতে গিয়ে বলেছেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সত্মায়ের জ্বালায় অস্থির হয়ে আমি বাড়ি থেকে পালাই। কলকাতায় নড়াইল জমিদারবাড়িতে ওঠি। বাবা ওদের রাজমিস্ত্রি ছিলেন। কেনা কয়লা পেলেই আমি তাঁদের বাড়ির দেয়ালে ছবি এঁকে বসতাম। জমিদারের ছোট ভাই আমার ছবি আঁকার নেশা দেখে বিলেত থেকে কেনা ইংরেজিতে লেখা দুটি বিশাল আকৃতির ছবির বই এনে দেন। সেখানে অনেক ছবি আর স্কেচ। জমিদার বাবু বললেন, ছবি আঁকতে চাইলে এগুলো তোকে শিখতে হবে। ওখানে দুই বছর কাটালাম। জমিদারের ছোট ভাই শিল্পরসিক; বললেন, যদি বড় শিল্পী হতে চাও আর্ট স্কুলে ভর্তি হতে হবে। কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ফার্স্ট হলাম (১৯৪০)। কিন্তু আমি তো ম্যাট্রিক পাস করিনি। জমিদার বাবু বললেন, শাহেদ সোহরাওয়ার্দীকে ধরো। তিনি ভর্তি কমিটির সদস্য। আমি তাঁর ঠিকানা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আমার আর্ট স্কুলে ভর্তি হওয়ার বাধা থাকল না। তাঁর এক নিঃসন্তান চাচিকে মা ডেকে বাড়িতে আশ্রয়ও নিশ্চিত হয়। আর্টের অসাধারণ সমঝদার ও সমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর বিরাট লাইব্রেরির তত্ত্বাবধায়ক হলাম। আমার আনন্দের আর সীমা রইল না।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আহমদ ছফা লিখেছেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর চোখে পড়ে কিশোর লাল মিয়ার ছবি। আর্ট স্কুলে তাঁর আঁকাবুকির পালা সাঙ্গ হওয়ার আগে লাল মিয়া ওরফে সুলতান আরো একবার নিরুদ্দেশের পথে পা বাড়ালেন। তখন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কাল। সুলতান পাঁচ-দশ টাকার বিনিময়ে গোরা সৈন্যের ছবি আঁকছেন, আর ভারতের শহর থেকে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ভয়, ভাবনা নেই; দায়দায়িত্ব নেই; আছে শুধু সুন্দরের প্রতি সুতীব্র আকর্ষণ। এ সময় আঁকা ছবিগুলোর কী হয়েছে, কোথা থেকে কোথায় গেছে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কেউ বলতে পারেন না।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দেশ দেখা এবং আঁকা</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দেশভাগের আগে ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৬</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এই দুই বছর তিনি কাটিয়েছেন ভূস্বর্গ কাশ্মীরে। ওই সময় সেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে। ১৯৪৬ সালেই তিনি হিমাচল প্রদেশের সিমলায় প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী করেন হাডসন সাহেবের সহযোগিতায়। কর্পুরিতলার মহারাজা প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। প্রদর্শনীতে অবিক্রীত ছবি হোটেলেই রেখে চলে এসেছেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">১৯৪৭ সালে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানপর্বে দাঙ্গা-হাঙ্গামায় ছিন্নমূল অগণিত মানুষের মতোই তিনি নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের রাজধানী করাচিতে হাজির হলেন। সেখানে গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতেমা জিন্নাহর কল্যাণে তিনি নিখরচায় থাকা-খাওয়ার জায়গা পান করাচির তখনকার সবচেয়ে বড় হোটেল মেট্রোপোলে। করাচির ধনাঢ্য ও শিল্পরসিক পার্সি সমাজের মিলনকেন্দ্র ছিল ওই হোটেল। সুলতান বড় বড় কয়েকটি কাজ করলেন অনাহারক্লিষ্ট মোহাজেরদের নিয়ে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের লাহোরে আয়োজিত হয় সুলতানের একক চিত্র প্রদর্শনী। উদ্বোধন করেন ফিরোজ খান নূন। বাবার মৃত্যুসংবাদ শুনে ১০ বছর পর ১৯৪৮-এ নড়াইল গিয়ে সত্মা ও সত্ভাইদের সঙ্গে কয়েক দিন থেকে সুলতান করাচিতে ফিরে যান। মিস ফাতেমা জিন্নাহ ১৯৪৯ সালে আয়োজিত তাঁর একটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সুলতানের কাজে দর্শককে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে স্টাইলের বিস্ময়কর বৈচিত্র</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‍</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">্য। জলরঙে আঁকা বাংলার নিসর্গ-দৃশ্যের নরম, অনুচ্চ বর্ণবিন্যাস; যেখানে আকাশ ও জলের অবাধ বিস্তার, অদৃশ্য হতে থাকা দিগন্ত, নারকেলগাছ, নৌকা, জেলে, কুটিরসহ অগভীর, তরল ও সমতল এক শান্ত-শ্রী গ্রামীণ পরিবেশকে ফুটিয়ে তোলেন।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিশ্বভ্রমণের পথে</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">১৯৫১ সালের শেষ দিকে সুলতান চারুশিল্পী হিসেবে পাকিস্তানের প্রতিনিধি হয়ে প্যারিসে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেন। সুযোগ পেয়ে সুলতান বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে পড়লেন। ইউরোপ-আমেরিকা যেখানেই গেছেন, ছবি এঁকে প্রদর্শনী করেছেন বা রাস্তার ধারে চিত্ররসের পসরা বসিয়েছেন। প্রতিকৃতি এঁকে কিংবা ছবি বেঁচে যা আয় করেছেন তা দিয়ে নিজের ব্যয় মিটিয়েছেন, অন্য জায়গায় বা অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তাঁর আঁকা ওই সময়কার ছবির হদিস পাওয়া যায়নি!</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সুলতানের জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখ আছে, ১৯৫৬ সালে লন্ডনের হ্যামস্টিডের ভিক্টোরিয়া এমব্যাংকমেন্টে আয়োজিত দলগত এক প্রদর্শনীতে পাবলো পিকাসো, সালভাদর দালি, ব্রাক, পল ক্লি প্রমুখ বিশ্ববিখ্যাত শিল্পীর সঙ্গে তাঁর আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে অংশগ্রহণ করেন।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জন্মভূমিতে ফেরা : ঢাকা পর্ব</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইউরোপ-আমেরিকাফেরত সুলতানের আর পাঞ্জাব-সিন্ধুতে মন টেকে না। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে চিঠি লিখে ১৯৫৩ সালের শেষ দিকে  ঢাকায় এলেন। সেগুনবাগিচায় আর্ট ইনস্টিটিউটের পেছন দিকে আবদুর রউফের থাকার ঘর, ওই ঘরের অন্য প্রান্তে আরেকটি তক্তপোষ এনে তাতে সুলতানের থাকার সাময়িক বন্দোবস্ত করা হলো। সুলতান শাড়ি পরে, নূপুর পায়ে মাঝেমধ্যে নাচেন, বাঁশি বাজান। তাঁকে ঘিরে আর্ট ইনস্টিটিউটের ছেলেদের আড্ডা জমে উঠল। তাঁর ওই সময়কার জীবনভঙ্গি সম্পর্কে চিত্রকলা সমালোচক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর লিখেছেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মধ্য পঞ্চাশ দশক। আমিনুল আমাকে বললেন, সুলতান ঢাকায় এসেছেন আমেরিকা, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ঘুরে। ভবঘুরে, মুসাফির, বৈরাগী, ছন্নছাড়া। ছবি আঁকেন, ফেলে দেন, ছবির মালিকানার চেয়ে ছবি তৈরিতেই তাঁর আনন্দ।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিশ-বাইশ বছর পর প্রদর্শনীতে (১৯৭৬) সুলতানের আঁকা তেলচিত্রে, মেঠোচাষির দৈনন্দিন জীবনসংগ্রামের গরিমাচিত্রণ। শিল্পী আকাশ, প্রান্তর-নদীকূল-মেঘমালা-বনতরু-গৃহছায়া ভরপুর বিভিন্ন ধাঁচের পল্লীদৃশ্যে প্রকৃতির ক্রোধের খেসারত আর দানের নিয়ামত</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দুটিই মাথায় নিয়ে কর্মযোগে সমবেত মেহনতি মানুষের ছবি এঁকেছেন। তাঁদের প্রার্থনার চাহনি আর স্ফীত পেশির প্রত্যয় তুলির পোচের বৃত্তছন্দে প্রেক্ষাপটের সঙ্গে একাকার করে চিত্রপটে তুলে ধরেছেন সুলতান। অঙ্গসৌষ্ঠবে পেশিশক্তির বাহুল্য আরোপে তাঁর প্রবণতা, অনেকে একে আলাদাভাবে চিহ্নিত করেছেন ইউরোপীয় রেনেসাঁযুগের চিত্রকর শিরোমনি মিকেলাঞ্জেলোর প্রভাব হিসেবে। সুলতানের সাদামাটা রচনাশৈলী সেই প্রভাবকে আত্মস্থ করে নারীর ঘোমটা, নরের পেশি, পত্রাবলি, মেঘরাশি, পথের বাঁক, নদীধারার আবর্ত</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এসবের মধ্যেই সঞ্চারিত করেছে।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শিশুদের জন্য ভালোবাসা</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মাছিমদিয়ার পৈতৃক বাড়িতে থাকার জায়গা হলো না। হাঁটতে হাঁটতে চিত্রা নদী পার হয়ে এলেন মামাবাড়ি চাচুরি পারুলিয়া গ্রামে। সেখানে ঘন জঙ্গলের মধ্যে জমিদার কৈলাস ঠাকুরের পরিত্যক্ত বাড়িতে স্কুল খুললেন! নাম দিতে চাইলেন </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নন্দনকানন স্কুল অব ফাইন আর্টস</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">। ভাবলেন, সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে ছবি আঁকা শেখার ব্যবস্থাও স্কুলে থাকবে। কিন্তু গ্রামবাসী স্কুলের নাম দিল চাচুরি পুরুলিয়া স্কুল। স্বপ্নপূরণ হলো না বলে সুলতান একদিন ওই গ্রাম ছেড়ে চলে যান। </span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিবাগী মন : বন্ধনহীন জীবন</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শিল্পের কেন্দ্র থেকে আবার তিনি লাপাত্তা প্রায় এক যুগ! বেশ কিছুদিন নড়াইলে ছবি আঁকার একটা স্কুল চালিয়ে চলে গেলেন নিভৃত পল্লীর পোড়োবাড়িতে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ওই সময় যশোরের জেলা প্রশাসক ছিলেন ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আর নড়াইলের মহকুমা প্রশাসক ছিলেন শওকত আলী। উভয়েই শিল্পপ্রেমী। কাজী মতিউর ডিসি মহোদয়ের কাছে সুলতানকে নিয়ে যান। শিল্পী আবার ছবি আঁকছেন জেনে চৌধুরী সাহেব খুশি হন। শিল্পীর অভিপ্রায় জেনে ডিসি মহোদয় </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">একাডেমি অব ফাইন আর্ট নড়াইল</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> নামে একটা প্রতিষ্ঠান গড়তে রূপগঞ্জের শৈলেন ঘোষের পুরনো বাড়ি বরাদ্দ ও একাডেমি চালু করার জন্য চার হাজার টাকা এবং প্রদর্শনীর জন্যও অর্থ বরাদ্দ করলেন।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শিল্পের কেন্দ্রে : প্রচারের আলোয়</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সত্তরের দশকে সুলতান তাঁর চিত্রকর্মের জন্য নতুন করে আলোচনায় আসেন। কাজী মতিউর তাঁকে ঢাকায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে নিয়ে আসেন। ১৯৭৫ সালে শুরু হওয়া জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে তিনি অংশগ্রহণ করেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কর্মঠ ও উৎপাদনকারী মানুষ</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অর্থনৈতিক ভিত্তির মূল স্থপতি যে মানুষ, তাঁরাই সুলতানের চিত্রকলার নায়ক-নায়িকা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই মানুষ কৃষক ও কৃষক পরিবার। বাংলার কৃষক ও অর্থনীতি যে এখনো প্রকৃতিনির্ভর</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এই সত্যও সুলতানের কাছে পরিষ্কার। উৎপাদনের মূল উপাদান জমি, তাই জমি দখলে রাখার জন্য কৃষকদের নিজেদের মধ্যে লড়াই অনেক বেশি গুরুত্ব পায় সুলতানের কাছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সুলতানের ছবির আরেকটা বৈশিষ্ট্য কৃষকের শরীরকে অস্বাভাবিক পেশিবহুল বিশাল ও শক্তিশালীরূপে দেখানো। বাস্তবে বাংলার কৃষক শীর্ণ, দুর্বলদেহি হলেও সুলতানের কাছে তাঁরা অসীম শক্তির অধিকারী। ইংরেজিতে যাকে বলে ইনার স্ট্রেন্থ, অর্থাৎ এই শক্তি ভেতরকার</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শ্রমজীবীর উৎপাদনের শক্তি!</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শিল্পকলা একাডেমি থেকে সুলতানকে রেসিডেন্ট আর্টিস্টের মর্যাদা দেওয়া হয়। সরকারের তরফ থেকে নির্দেশনা পেয়ে শিল্পী সুলতানের বসবাস ও ছবি আঁকার স্টুডিওর জন্য যশোর সেনানিবাসের তৎকালীন জিওসি তিনটি শয়ন কক্ষ, স্টুডিওর জন্য বড় একটা কক্ষ ও একটা বসার কক্ষসহ বাড়ি নির্মাণ করে দেন। ২০০০ সালে সেখানেই শিল্পী এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওখানে তাঁর বেশ কিছু সৃজনকর্মের সংগ্রহ আছে।  </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোরের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রয়াণ ঘটে মহাপ্রাণ, অসাধারণ এই বাউল চিত্রকরের।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জন্মশতবর্ষে অভিবাদন এই মরমি, কৃষিজীবী, শ্রমজীবী মানুষের অন্তর্গত শক্তির উদ্বোধককে!</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">একনজরে শিল্পী এস এম সুলতান </span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্রথম একক প্রদর্শনী : ১৯৪৬ সালে সিমলা।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিদেশে একক প্রদর্শনী : ১৯৫০ সালে নিউ ইয়র্ক, বোস্টন, শিকাগো এবং  মিশিগান ইউনিভার্সিটিতে একক প্রদর্শনী।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিদেশে যৌথ প্রদর্শনী : ১৯৫৬ সালে লন্ডনের হ্যামস্টিডের ভিক্টোরিয়া এমব্যাংকমেন্টে আয়োজিত দলীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে পিকাসো, দালি, ব্রাক, ক্লি প্রমুখের সঙ্গে অংশগ্রহণ। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাংলাদেশে প্রথম প্রদর্শনী : ১৯৭৫ সালে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কর্মজীবন : ১৯৪৩ সালে কলকাতায়  ফ্রিল্যান্সার পেইন্টার হিসেবে কর্মজীবন শুরু।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্রতিষ্ঠাতা : ১৯৬৯ সালে নড়াইল সদরে কুড়িগ্রাম ফাইন আর্টস ইনস্টিটিউট এবং ১৯৭৩ সালে যশোরে ফাইন আর্টস ইনস্টিটিউট (বর্তমানে চারুপীঠ) নামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সম্মাননা ও পুরস্কার : চারুকলায় অবদানের জন্য ১৯৮২ সালে একুশে পদক ও ১৯৯৪ সালে স্বাধীনতা পদক লাভ করেন।</span></span></span></span></span></p>