বরষা
১০ বছর আগে প্রকাশিত ‘ফুয়াদ ফিচারিং কনা’ অ্যালবামের গান। তখন মিলার অ্যালবাম হিট। একদিন কনা এসে বলল—আমাকে এমন একটা অ্যালবাম করে দেন, যেটা দিয়ে স্টেজ মাতাতে পারব। তাকে বললাম, স্টেজের কথা না ভেবে তুমি বেঁচে থাকার মতো সুন্দর কিছু গান করো। আমি তোমাকে হেভি মেটাল গানও বানিয়ে দিতে পারি। কিন্তু স্টেজে যদি তোমার ব্যক্তিত্ব আর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ গানটিকে ক্যারি করতে না পারে তাহলে লাভ নেই। এ নিয়ে তখন কনার সঙ্গে আমার ঝগড়া! ‘বরষা’ গানটি তখনই করা। গানটির সুরকার ফোয়াদ নাসের বাবু ভাই। গীতিকার শাহান কবন্ধ। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গানটি নিয়ে চিন্তা করি। অনেক কষ্টের পর মিউজিকটা ভালো একটা পর্যায়ে যায়। গানটি যারা শুনবে, মিউজিক যাতে তাদের ডিস্টার্ব না করে, আবার মিউজিকটাও যাতে সুন্দর মনে হয়, সে বিষয়টি মাথায় রেখে কাজটি করেছি। এই গানে বাঁশি বাজিয়েছেন দুজন। সারেঙ্গি ছিল। পিয়ানোতে ছিলেন রোমেল আলী। সবাই নিজেদের সবটুকু ঢেলে দিয়েছেন। সব শেষে গাজী শুভ্র ভাই সুন্দর একটি ভিডিও বানান। অ্যালবাম বের হওয়ার সময় কনাকে বলেছিলাম—গানগুলো নিয়ে আজ হয়তো তুমি আপসেট, কিন্তু একদিন আমার চিন্তাটা বুঝবা। গানটি হিট হওয়ার পর একদিন কনা বাসায় এসে বলে, ‘ফুয়াদ ভাই, আপনার সিদ্ধান্তই ঠিক ছিল।’
যাত্রাবালা
মিলার ‘চ্যাপ্টার ২’ অ্যালবামের গান। তখন একটাই চিন্তা ছিল, পুরো অ্যালবামটা কমার্শিয়ালি হিট করাতে হবে। এ জন্য একটা গান চাই খেমটা তালের। সে সময় আশপাশে খেমটা তালের কোনো গান হিট করেনি। তাই বিষয়টি কঠিনই ছিল। ‘একটি গন্দমের লাগিয়া’ গানটি মাথায় রেখেই ট্র্যাকটি বানাই। জি সিরিজির স্বত্বাধিকারী খালেদ ভাইকে ট্র্যাকটি শুনিয়ে বললাম, ‘একটি গন্দমের লাগিয়া’ গানটি জানে আলম ভাইয়ের। আমরা গানটি রিমেক করতে চাই। আপনি উনার কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিয়ে দেন। খালেদ ভাই জানালেন, এটা সম্ভব নয়। এরপর শাহান কবন্ধকে বললাম—এই ট্র্যাকের ওপর এমন একটা লিরিক লেখো, যেটা সারা দেশের মানুষ মজা করে শুনবে। শাহান লিখে ফেলে ‘হাজার দর্শক মন মজাইয়া নাচে গো সুন্দরী কমলা’। ‘একটি গন্দমের লাগিয়া’র ফিল রেখে সেই কডেই সুরটি করি। মিউজিকে কিছু স্যাম্পল ব্যবহার করা হয়েছে। অনেকগুলো তামিল গান শুনে সেখান থেকে উৎসাহিত হয়ে স্যাম্পলগুলো ব্যবহার করেছি। প্রকাশের এক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় গান হয়ে গেল এটি। ভিডিওটা সুন্দর ছিল। মিলা তখন অনেক স্টেজ শো করত। বলতে গেলে সে-ই মানুষের কাছে গানটি পৌঁছে দিয়েছে। অনেক সময় গানটা শুনে লজ্জা লাগে! মনে মনে ভাবি—আহা, কী গান বানাইছি! কিন্তু এটাই আমার অন্যতম সেরা জনপ্রিয় গান।
গাইবো না
‘ফুয়াদ ফিচারিং সুমন অ্যান্ড আনিলা’র ‘এখন আমি’ অ্যালবামের গান। শুরুতে পরিকল্পনা ছিল দুজনকে নিয়ে একটি কমার্শিয়াল অ্যালবাম করার। কিন্তু কাজ শুরুর আগে আমার চিন্তা বদলে গেল। সুমন ভাইকে ফোন করে বললাম, আপনার তো নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করার কিছু নাই। অ্যালবামটি যদি কমার্শিয়াল করি তাহলে হয়তো মানুষ নিবে না। আপনার ফ্যানরাও আপসেট হবে। এক কাজ করি, আমার ইচ্ছামতো গানগুলো বানাই। সুমন ভাই বললেন, ‘তোমার যেভাবে ভালো মনে হয় করো, আমার আপত্তি নেই।’ সেই অ্যালবামের টার্গেট গান ছিল ‘গাইবো না’। অনেক ভাবনা-চিন্তার পর গানটির কথা-সুর করেন তপু। একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে সুমন ভাই বললেন—গানটিতে আরেকটা পার্ট হলে ভালো হয়। এরপর তিনি যোগ করেন ‘গাইবো না আর কোনো গান তোমায় ছাড়া/লিখবো আমি আর তুমিহীনা কবিতা’। এরপর গানের কালারই চেঞ্জ হয়ে যায়। প্রকাশের পরই সুপারহিট।
নিটল পায়ে
‘ভেরিয়েশন ২৫’ অ্যালবাম নিয়ে কাজ করার সময় ‘নিটল পায়ে’র মিউজিকটা বানাই। তখনো জানতাম না এটার ওপর কোন গান বানাব। আগে এভাবেই কাজ করতাম। মিউজিক বানানোর পর সুর ও কথা নিয়ে ভাবতাম। এই মিউজিকটা বানানোর পর সিডিতে নিয়ে গাড়িতে শুনতাম। একদিন নিউ জার্সি থেকে নিউ ইয়র্কে ড্রাইভ করতে করতে ট্র্যাকটি শুনছিলাম। হঠাৎ ওই ট্র্যাকটার ওপর এস ডি বর্মনের ‘নিটল পায়ে রিনিক ঝিনিক পায়েলখানি বাজে’ পার্টটা গাওয়া শুরু করলাম। মনে হলো, এটা তো বেশ সুন্দর লাগছে। এভাবেই তাহলে একটি রিমিক্স করি, যাতে ‘নিটল পায়ে’র চারটি লাইন থাকবে, বাকি কথাগুলো হবে নতুন। আমেরিকায় তখন আমার স্টুডিওর একপাশে রাজীব রহমানের একটি ডেস্ক ছিল। দুজন একসঙ্গে কাজও করতাম। রাজীবকে একদিন বললাম, এই ট্র্যাকের ওপর আমাকে লিরিকটা লিখে দাও। তার পরই সে কথাগুলো লিখে। শুরুতে গানটি আমারই গাওয়ার কথা ছিল। আলসেমি থেকেই রাজীবকে বললাম, আমার ভয়েস দিতে ইচ্ছা করছে না। তুই প্রথম চারটি লাইন গা। সে গাওয়ার পর খুবই ভালো লাগে। আমার মনে হয়, অন্য কোনো গানে তার কণ্ঠ এত সুন্দর লাগেনি। তারপর দুজন মিলে গানটি গাইলাম।
মন্তব্য