<p>পারিশ্রমিক, শিডিউল, চিত্রনাট্য, মান-অভিমান, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ—কত কারণেই না ছবি ছেড়ে দেন প্রতিষ্ঠিত নায়ক-নায়িকারা। সুযোগ পেয়ে যায় নতুন কেউ, খুলে যায় ভাগ্য, জন্ম নেয় নতুন কোনো তারকা। এমনই কিছু ছবি আর নায়ক-নায়িকার গল্প নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। ইলিয়াস কাঞ্চনের জায়গায় সুযোগ পেয়ে মান্নার তারকা হওয়ার কথা বলেছেন <strong>মনতাজুর রহমান আকবর</strong></p> <p> </p> <p>১৯৯৩ সাল। আলমগীর পিকচার্স তখন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার জাহাঙ্গীর খান একদিন তাঁর অফিসে ডাকলেন। আমাকে দিয়ে ছবি বানাতে চাইলেন। নাম ঠিক হলো ‘প্রেম দিওয়ানা’।  ছবিতে দুই জোড়া নায়ক-নায়িকা লাগবে। তখন শাবনাজ-নাঈম জুটির ‘চাঁদনী’ সুপার-ডুপার হিট, তাঁরাও হিট জুটি। আগে তাঁদের কথাই এলো মাথায়। অন্য জুটি ঠিক করলাম ইলিয়াস কাঞ্চন-চম্পা। কাঞ্চন তখন ভীষণ ব্যস্ত শিল্পী। জাহাঙ্গীর খান বললেন, ‘ওর শিডিউল কিভাবে পাবেন?’ আমি আশ্বাস দিলাম। কাঞ্চন এর আগে আমার ‘ন্যায় যুদ্ধ’ ও ‘চাকর’-এ অভিনয় করেছেন।</p> <p>কথা অনুযায়ী খান সাহেবকে নিয়ে একদিন কাকরাইলে ইলিয়াস কাঞ্চনের অফিসে গেলাম। প্রায় দুই ঘণ্টা আড্ডা হলো। আড্ডার শেষের দিকে ছবি বানানোর ব্যাপারটা বললাম। তিনি রাজি। গল্প শুনতে চাইলেন, শোনালাম। হুট করে বলে ওঠেন, ‘জাহাঙ্গীর সাহেব তো আমাকে তাঁর কোনো ছবিতেই নেন না। এই ছবিতে নিতে হলে ছয় লাখ টাকা দিতে হবে।’ আমি ও খান সাহেব অবাক হলাম। খান সাহেব বললেন, ‘আপনি এত টাকা চাইছেন কেন? আপনি তো নেন তিন-চার লাখ করে। অন্যদের কাছ থেকে যা রাখেন তা-ই রাখেন। কিন্তু ইলিয়াস কাঞ্চন নাছোড়বান্দা, ছয় লাখের কমে ছবিটি করবেন না। তাঁদের দুজনের মধ্যে বেশ কথা-কাটাকাটি হলো। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। সেদিনের মতো চলে এলাম। ভাবলাম, আমার কপাল পুড়ছে, আলমগীর পিকচার্সের ছবি আর আমার করা হবে না। কিছুদিন পর আবার জাহাঙ্গীর খানের ফোন, অফিসে ডাকলেন।</p> <p>গিয়ে বললাম, ‘আমি তো ভেবেছিলাম এই ছবি হবে না।’ খান সাহেব বললেন, ‘ছবি হবে না কেন? কাঞ্চন করবে না ভালো কথা, বাদ দেন। অন্য নায়ক নেন।’ চিন্তায় পড়ে গেলাম, কাকে নেব! হুট করেই মাথায় এলো মান্নার কথা। ছেলেটা অভিনয় ভালো করে, অনেক বছর ধরে চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। খান সাহেবকে বলতেই রাজি হলেন। বললেন, তাকে অফিসে ডাকেন।</p> <p>খবর পাঠাতেই মান্না এসে হাজির। আলমগীর পিকচার্সের ছবি শুনেই চোখ বন্ধ করে রাজি হয়ে গেল। পারিশ্রমিক, গল্প, সহশিল্পী—কিছুই জানতে চায়নি। মজার ব্যাপার হলো, ওকে মাত্র এক লাখ টাকা পারিশ্রমিক দিয়েছিলাম। এদিকে মান্নাকে কাস্ট করার পর ঝামেলা শুরু হলো শাবনাজ-নাঈমকে নিয়ে। কয়েক মাস ঘুরিয়েও শিডিউল দিল না। বাধ্য হয়েই সংগীতা ও শাহীন আলমকে নিলাম।</p> <p>স্পটে মান্না সময় মেনে আসত। ভালো অভিনয়ও করল। কাঞ্চনকে না নিয়ে ওকে নিয়ে যে ভুল করিনি, কাজ করতে গিয়েই তা বুঝতে পারলাম। খান সাহেবও বেশ খুশি। শুটিং শেষে মান্নাকে নিয়ে একটু ভয়ই হলো, ভালো অভিনয় করেছে ঠিক আছে, দর্শক যদি তাঁকে গ্রহণ না করে! দর্শক যে আসলে কখন কাকে গ্রহণ করে তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। কিন্তু না, দর্শক আশাতীত সাড়া দিল। ‘প্রেম দিওয়ানা’ ওর ক্যারিয়ারের প্রথম সুপারহিট ছবি। ওর সুপারস্টার হয়ে ওঠার বীজ তৈরি হয়েছিল এই ছবিতেই। পরের ইতিহাস তো সবাই জানেন, মান্নাকে নিয়ে আমি এবং কাজী হায়াৎ, এফ আই মানিকসহ অনেক পরিচালকই ছবি বানালেন। ২০০৮ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অনেক ব্যবসাসফল ছবি উপহার দিয়েছিল মান্না।</p> <p> </p> <p>অনুলিখন : <strong>রূপক জামান</strong></p>