<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক পণ্যের ডিজাইন, চিপ ফ্যাব্রিকেশন, অ্যাসেম্বলিং, টেস্টিং ও প্যাকেজিংকেই প্রধানত সেমিকন্ডাক্টর খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শুধু মোবাইল বা ল্যাপটপ নয়, আধুনিক অবকাঠামোর সর্বত্র সেমিকন্ডাক্টরের প্রয়োজন হয়। সামরিক খাতে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক অস্ত্রে, টেলিকমিউনিকেশন খাতে নিরাপদে ও সহজে তথ্যের আদান-প্রদান করতে, স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যবহৃত পেসমেকার ও ইনসুলিন পাম্পে, অটোমোবাইল খাতে গাড়ি আনলক করতে বা রিয়ারভিউ ক্যামেরা ব্যবহারে সেমিকন্ডাক্টর অপরিহার্য।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ৫০ বছরে সেমিকন্ডাক্টরের আকার ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়েছে। সেমিকন্ডাক্টরের ওপর ইলেকট্রনিক ডিভাইসের নির্ভরতাও বেড়েছে বহুগুণ। মূলত সেমিকন্ডাক্টরের কারণেই ডিভাইসের আকার ছোট, উন্নত ও গতিশীল হয়েছে। আজকের যুগের স্মার্টফোনই এর বড় প্রমাণ। সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন করলে পুরো দেশই লাভবান হয়। দৃঢ় অর্থনৈতিক অবস্থান তৈরি, দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শক্ত অবস্থান তৈরিতে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে ঝুঁকছে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিভিন্ন দেশের কম্পানিগুলো সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন করে সেগুলো স্বল্প মূল্যে উৎপাদন করতে এশিয়ার দেশগুলোকে বেছে নিয়েছে। অবস্থানগত কারণ, দক্ষ জনশক্তি এবং এই খাত সম্প্রসারণে সরকারি নীতিমালা এ অঞ্চলের দেশগুলোকে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে সহায়তা করছে। ফাইভজি, এআই, ড্রোন, রোবটিকস, আইওটি, বিগ ডাটা বিশ্লেষণ ও ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের কারণে এই খাতের বাজার ভবিষ্যতে আরো বড় হবে। সেমিকন্ডাক্টরকে ঘিরে দক্ষিণ এশিয়ায় তৈরি হবে ট্রিলিয়ন ডলারের বাজার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রযুক্তি বাজার বিশ্লেষণকারী কম্পানি ওমডিয়া জানিয়েছে, গত বছর সেমিকন্ডাক্টর খাতে বৈশ্বিকভাবে আয় হয়েছে ৫৪ হাজার ৪৮০ কোটি ডলার। ২০৩০ সাল নাগাদ এটা ১.২ ট্রিলিয়ন বা এক লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><strong><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের কেন্দ্র হয়ে উঠছে এশিয়া</span></span></span></span></strong></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্বের ৮১ শতাংশ সেমিকন্ডাক্টরই এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে উৎপাদন করা হচ্ছে। এই দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, চীন, জাপান ও ভারত। এর মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে তাইওয়ান। এই বাজারের ৬০ শতাংশ রয়েছে তাদের দখলে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশ সেমিকন্ডাক্টরের চাহিদা মেটাতে তাইওয়ানের ওপর নির্ভর করে। দেশটিতে আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কম্পানি বা টিএসএমসি। অন্য কম্পানিগুলোর দেওয়া অর্ডার অনুযায়ী, সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করে টিএসএমসি। ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, সিপিইউ ও জিপিইউসহ নানা পণ্য উৎপাদন করে তারা। বর্তমানে তাদের বাজার মূলধন ২১.২৯ ট্রিলিয়ন তাইওয়ান ডলার। কর্মী সংখ্যা ৫৪ হাজার ৯৭৪।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চীন সরকার সেমিকন্ডাক্টর খাতে সম্প্রতি ৩৪৪ বিলিয়ন ইউয়ান (৪৭ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটির সেমিকন্ডাক্টর খাতকে শক্তিশালী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে এই অর্থ বিনিয়োগ করবে তারা। এর আগেও এই খাতে দুই দফায় বিনিয়োগ করেছে চীন। তৃতীয় দফার বিনিয়োগের পরিমাণ আগের দুই দফার চেয়ে বেশি। প্রথমবার ২০১৪ সালে বিনিয়োগ করা হয় ১৩৮.৭ বিলিয়ন ইউয়ান। দ্বিতীয় দফায় ২০১৯ সালে বিনিয়োগ করা হয় ২০৪ বিলিয়ন ইউয়ান। আগামী পাঁচ বছরে চীনের সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়বে ৪০ শতাংশ। ১৫ বছর আগেও চীনে উৎপন্ন সেমিকন্ডাক্টরগুলো বাইরের দেশগুলোতে বিক্রি করা হতো। এখনকার উৎপন্ন সেমিকন্ডাক্টরগুলোর বেশির ভাগ চীনের ভেতরেই ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের ফলে ভবিষ্যতে চীনের তৈরি ডিভাইসের দাম আরো কমতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেমিকন্ডাক্টরের বাজার ধরতে ভারতও পিছিয়ে নেই। বহুজাতিক অ্যাকাউন্টিং কম্পানি প্রাইস উড কুপারস বা পিডাব্লিউসির দেওয়া তথ্য মতে, ২০২৬ সালের মধ্যে ভারতের সেমিকন্ডাক্টরের বাজার পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। সেমিকন্ডাক্টরের বাজার বড় করতে তাইওয়ানের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে ভারত। দেশ দুটি মিলে গঠন করেছে ইন্ডিয়া-তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ফোরাম। উভয় দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোই এ ফোরামের মূল লক্ষ্য।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্প্রতি সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে কারখানা স্থাপনে এক হাজার ৫২০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে ভারত। এর আওতায় একটি সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব্রিকেশন, দুটি প্যাকেজিং ও একটি টেস্ট ফ্যাসিলিটি তৈরি করবে তারা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৮৮ সালে বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর বাজারের ৫০.৩ শতাংশ ছিল জাপানের দখলে। নব্বইয়ের দশকে বাজারে তাদের আধিপত্য কমতে শুরু করে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে সেমিকন্ডাক্টর বাজারে আবারও শক্ত অবস্থান তৈরির পথে এগিয়ে যাচ্ছে জাপান। স্ট্যাটিস্টার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জাপানের সেমিকন্ডাক্টর বাজার হবে চার হাজার ৯৩০ কোটি ডলারের। ধারণা করা হচ্ছ, ২০৩২ সালে তাদের বাজার হবে ১০ হাজার ৭৬৩ কোটি ডলারের। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়াও সেমিকন্ডাক্টর খাতে অন্তত ১০ হাজার ৭০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন করে বছরে পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে বাংলাদেশ। সম্ভাবনাময় এই খাত থেকে আয় বাড়াতে প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ, সহায়ক নীতি ও দক্ষ জনশক্তি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আকারে ক্ষুদ্র হলেও সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন খুব জটিল প্রক্রিয়া। একটি সিলিকন প্লেটে কয়েক শ কোটি ট্রানজিস্টর থাকে। সিলিকন ওয়েফার উপাদানও সহজলভ্য নয়। সহজে বললে, সিলিকনের প্লেট, যা সিলিকন ওয়েফার নামে পরিচিত, তার ওপর সাজানো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইলেকট্রিক ট্রানজিস্টর, যা ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি) বা মাইক্রোচিপ নামে পরিচিত</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদের সম্মিলিতভাবে বলা হয় সেমিকন্ডাক্টর।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ছাড়া উৎপাদনের জন্য বিশাল কারখানা ও দামি মেশিনের প্রয়োজন হয়। উৎপাদনস্থল হতে হয় ধুলানিরোধী। সেমিকন্ডাক্টর তৈরির প্রক্রিয়া চলে তিন মাসের বেশি সময় ধরে। তাই বড় পরিসরে উৎপাদন করা কঠিন। উৎপাদনের পাশাপাশি এর সরবরাহচক্র ঠিক রাখাও বড় একটি চ্যালেঞ্জ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সূত্র : বিবিসি, লেভেল আপ আইপিএস, গিকসফরগিকস</span></span></span></span></p>