বিয়ের পর সানজানা-ইসমাইল। ছবি : সংগৃহীত
হবিগঞ্জের মেয়ে সানজানা। ২০১৭ সাল থেকে কাজ করছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ক্যামেলিয়া ডানকান হাসপাতালে। আশপাশের ১৭টি চা-বাগানের শ্রমিকদের চিকিৎসাসেবা দেয় হাসপাতালটি। রোগীর সেবা করাই সানজানার কাজ, তবে পেশাগত দায়িত্বের বাইরেও কাঁধে তুলে নিয়েছেন কিছু বাড়তি দায়িত্ব।
বিজ্ঞাপন
কাবিন মাত্র পাঁচ হাজার টাকা
সেই সানজানা আবারও আলোচনায় এসেছেন বিয়ে করে। বর বাগেরহাটের ইসমাইল শিকদার। দেনমোহর মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। ২০২১ সালে ইসমাইলের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল সানজানার। দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক হয় ৭ জানুয়ারি। সানজানা বললেন, ‘বেশি টাকা দেনমোহর নিয়ে ডিভোর্স হলে বসে বসে খাওয়ার মতো দুর্ভাগা হতে চাই না। তাই ওকে (ইসমাইল) বলেছি, আমাদের বিয়ের কাবিন হবে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। ’ ‘কিন্তু বিয়ের দিন বাদ সাধলেন মুরব্বিরা। পাঁচ হাজার টাকা দেনমোহরের কথা শুনে শোরগোল শুরু করে দিলেন তাঁরা। ’ এমনকি কয়েকজন তো বলেই বসলেন, ‘আমাদের সঙ্গে আলোচনা করিসনি। পরে হায় হায় করবি। ’ যোগ করেন ইসমাইল। এক পর্যায়ে সানজানা কাজিকে ডেকে পাঠালেন। বুঝিয়ে বললেন, ‘তথাকথিত সামাজিক রীতির বাইরে বের হতে চাই। আমরা কম কাবিনেই বিয়ে করব। ’ কাজি বললেন, ‘তোমরা রাজি হলে আমার সমস্যা নাই। ’ শুধু তা-ই নয়, নিজের জমানো ৭০ হাজার টাকায় বিয়ের পুরো আয়োজন সম্পন্ন করেছেন।
বিয়েতে তাঁর অতিথি ছিল মাদরাসার ছাত্র আর আশপাশের নিম্নবিত্ত পরিবারের বাচ্চারা, যারা কোরবানি ঈদ ছাড়া গরুর মাংস চোখে দেখে না। এ রকম ৩০০ শিশুকে পেটপুরে খাইয়েছেন। শ্বশুরবাড়ি থেকে কোনো গয়নাও নেননি। বললেন, ‘পড়াশোনা শেষে চাকরি করার সময় ঠিক করলাম, যদি বিয়ে করি নিজের টাকায় করব। বাপের কাছ থেকে এক টাকাও নেব না। ’
কন্যা মানেই অভিশাপ নয়
সানজানা বলেন, আমরা ছয় বোন। আশপাশের মানুষ বলত, ‘বাপ রে, সৈয়দ আলীর ছয়টা পুরি (মেয়ে)। এক লাখ করে দিলেও ছয় লাখ টাকা লাগব। ইতা খালি খাইবার লাগি আইছে দুইন্নাত। কেমনে বিয়া দিব ইতারে। ’
পাঁচ হাজার টাকা কাবিনে বিয়ে করে আমরা সমাজকে একটা বার্তা দিতে চেয়েছি, কন্যা মানেই অভিশাপ নয়। অনেকে বলেছিল, ‘এত অল্প টাকা কাবিন নিচ্ছিস। ডিভোর্স হলে কী করবি?’ কিন্তু বিয়ের আগেই কেন ডিভোর্সের চিন্তা করতে হবে?