আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও বিদেশের গণমাধ্যম

&lt;p&gt;শ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ লড়াইটা বাঙালিরাই করেছিল এবং ছিনিয়ে এনেছিল বিজয়। এই সংগ্রাম বিশ্বপরিসরে সাংবাদিকতা, বিশেষভাবে মুদ্রিত মাধ্যম ও বেতার সাংবাদিকতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। পশ্চিমি সরকারগুলো বাংলাদেশের মুক্তিপ্রয়াসের বিরোধিতা করেছিল; কিন্তু নবীন সাংবাদিকরা অবস্থান নিয়েছিলেন মানবতার পক্ষে, ক্ষেত্রবিশেষে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ন্যায্যতার পক্ষেও তাঁরা দাঁড়িয়েছিলেন। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সংগ্রামের গণতান্ত্রিক ন্যায্যতা তাঁদের যথাযথ ভিত্তিও প্রদান করেছিল&lt;/p&gt; &lt;p&gt;&lt;img alt=&quot;&quot; src=&quot;/ckfinder/userfiles/images/print/2017/Feature-2017/January/12-01-2017/Kk-2017-01-12-f7-2.jpg&quot; style=&quot;float:left; height:449px; margin:8px; width:287px&quot; /&gt;একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বিশ্ব গণমাধ্যমে বহুল আলোচিত ঘটনা এবং মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয় অর্জনে তা পালন করেছিল বিশেষ ভূমিকা। বাংলার মাটিতে যে সংঘাত শুরু হয়েছিল, তার ছিল আন্তর্জাতিক গুরুত্ব, বিশ্বের দুই পরাশক্তি ছিল বিবদমান দুই পক্ষে। ফলে পশ্চিমি বিশ্বের গণমাধ্যমে এ শুধু তৃতীয় দুনিয়ার কোনো আঞ্চলিক সংঘাত ছিল না, ছিল প্রথম দুনিয়ার দেশের জন্যও প্রভাবসঞ্চারী। পাশাপাশি এটিও লক্ষণীয়, ভিয়েতনাম যুদ্ধের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তখন বিদেশি সংবাদদাতাদের উপস্থিতি ও আনাগোনা ছিল ব্যাপক। যুদ্ধ-সংবাদ সংগ্রহেও তাঁরা যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। ব্যাংকক, নমপেন, সায়গন, হংকংয়ে তখন গড়ে উঠেছিল এফসিসি বা ফরেন করেসপনডেন্ট ক্লাব, যা ছিল শহরের এলিটদের জন্যও এক আকর্ষণীয় মিলনস্থল। সেই সঙ্গে সাংবাদিকরা তো ছিলেনই, যাঁদের বেশির ভাগ তখন স্বল্প পরিচিত, বয়সে তরুণ; তবে তাঁদের কেউ কেউ পরে বিশেষ খ্যাতিমান হন।&lt;/p&gt; &lt;p&gt; তো, এই সাংবাদিকদের অনেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের রিপোর্ট সংগ্রহের কাজ করেছেন এবং তাঁদের সেসব রিপোর্ট মানুষের দুর্গতি ও প্রতিরোধচিত্র দক্ষতার সঙ্গে মেলে ধরে। তাঁদের কেউ কেউ পরবর্তী সময় পুলিত্জার পুরস্কারসহ অনেক ধরনের পুরস্কার পেয়েছেন, সাংবাদিকতার আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। এঁদের মধ্যে সিডনি শনবার্গ, ম্যালকম ব্রাউন, মার্ক টালিসহ অনেকের নাম উল্লেখ করা যায়। এ ক্ষেত্রে অকালে ঝরে পড়া তরুণ আলোকচিত্র সাংবাদিক মিশেল লরেন্টসের কথাও স্মরণ করতে হয়। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী সব বিদেশি সাংবাদিককে অবরোধ করে পরদিন বিমানে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়। হত্যালীলার সংবাদ যেন বিশ্ববাসী জানতে না পারে, সেটাই ছিল তাদের লক্ষ্য। এটা তো সর্বজনবিদিত, কিভাবে ডেইলি টেলিগ্রাফের সাইমন ড্রিং নজর এড়িয়ে থেকে গিয়েছিলেন ঢাকায় এবং পরে প্রথম প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদভাষ্য তিনিই প্রকাশ করেন, ট্যাংক নামিয়ে পাইকারিভাবে হত্যা করা হয়েছে মানুষদের। এর সঙ্গে ঢাকার রাজপথে পড়ে থাকা রক্তাক্ত লাশের ছবিও ছাপা হয়েছিল, যা তুলেছিলেন এএফপির তরুণ ফটোগ্রাফার মিশেল। এই মিশেল ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনাম রণাঙ্গনের চিত্রধারণের সময় সায়গনের কাছাকাছি গোলার আঘাতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ছিলেন ভিয়েতনাম যুদ্ধে নিহত সর্বশেষ সাংবাদিক।&lt;/p&gt; &lt;p&gt; বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে অর্থাৎ ২৫-২৬ মার্চ ঢাকায় ছিলেন সিডনি শনবার্গ, বহিষ্কৃত হলেও বারবার ফিরে এসেছেন সীমান্ত এলাকায়, কখনো প্রবেশ করেছেন মুক্তাঞ্চলে, বিভিন্ন সময় কথা বলেছেন অনেক রথী-মহারথীর সঙ্গে। ১৬ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর ট্যাংকে সওয়ার হয়ে প্রবেশ করেছেন ঢাকায়, উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে। ২৫ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বর দুয়েরই তিনি প্রত্যক্ষদর্শী, মাঝখানে ৯ মাসজুড়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বহু রিপোর্ট। ফলে তাঁর রিপোর্ট হয়ে উঠেছে এক সাংবাদিকের কলমে লেখা মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর ইতিহাস, এমন বিরল সৌভাগ্য খুব বেশি সাংবাদিকের জীবনে ঘটে না। পরে সিডনি শনবার্গ খ্যাতি অর্জন করেন কম্বোডিয়ার গণহত্যার সংবাদভাষ্য প্রদান করে। তাঁর সেই অভিজ্ঞতা ঘিরে নির্মিত চলচ্চিত্র &lsquo;দ্য কিলিং ফিল্ডস&rsquo; জিতে নেয় কয়েকটি অস্কার পুরস্কার।&lt;img alt=&quot;&quot; src=&quot;/ckfinder/userfiles/images/print/2017/Feature-2017/January/12-01-2017/Kk-2017-01-12-f7-3.jpg&quot; style=&quot;float:right; height:435px; margin:8px; width:292px&quot; /&gt;&lt;/p&gt; &lt;p&gt; মুক্তিযুদ্ধকালে রিপোর্টিংয়ে অনেক ধরনের উদাহরণ তৈরি করেছেন বেশ কিছু সাংবাদিক। ৭ই মার্চের ভাষণের পর বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে নিউজউইকের বক্স আইটেম &lsquo;পোয়েট অব পলিটিকস&rsquo; এমনই এক উদাহরণ, চলমান ঘটনার ভাষ্য যখন তাৎপর্যে ছাপিয়ে যায় সমসাময়িকতা। অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাসের দুই পৃষ্ঠাজুড়ে রিপোর্টের শিরোনাম দিয়েছিল সানডে টাইমস &lsquo;জেনোসাইড&rsquo;, মোটা হরফে শুধু ওইটুকুই। কিন্তু সেই রিপোর্ট ও হেডিং তো এক ইতিহাস হয়ে উঠেছে। কিভাবে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এই সাংবাদিক সামরিক বাহিনীর আমন্ত্রণে আরো কতক বিদেশি সাংবাদিকের সঙ্গে মিলে এসেছিলেন অধিকৃত পূর্ব পাকিস্তানে, সামরিক কর্তৃপক্ষ তাদের ঘুরিয়ে দেখায় ঢাকা, কুমিল্লা, যশোরের পরিস্থিতি, বোঝাতে চায় সব কিছু স্বাভাবিক রয়েছে, পরিস্থিতি পাকিস্তানি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে, শুধু সীমান্তে কিছু সমস্যা তৈরি করছে কিছুসংখ্যক দুষ্কৃতকারী, রক্তপাত বিশেষ ঘটেনি, কোথাও কোনো রক্তের দাগ নেই। হালের ভাষায় যাকে বলা হয় এমবেডেড জার্নালিস্ট, সামরিক ছত্রচ্ছায়ায় যুদ্ধের রিপোর্ট করার সেই আদি উদ্যোগের বেলুন ফুটো করে দিয়েছিল ম্যাসকারেনহাসের রিপোর্ট। তবে এ জন্য বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল তাঁকে। করাচি থেকে তিনি লন্ডনে গিয়েছিলেন চিকিৎসার অজুহাত দেখিয়ে, পরিবারের সদস্যরা পরে গোপনে কাবুল হয়ে পৌঁছেন লন্ডনে এবং তার পরই ছাপা হয় সেই রিপোর্ট।&lt;/p&gt; &lt;p&gt; বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহের নানা দিক রয়েছে, নানাভাবে সেনাবাহিনীর নজরদারি এড়িয়ে কাজ করেছেন সাংবাদিকরা। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ বেগ পেতে হয়নি, দেশের মানুষের সহায়তা এ ক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকর হয়েছিল। এমনই রিপোর্ট করেছেন মহিলা সাংবাদিক ক্লেয়ার হোলিংওয়ার্থ, টাইমের ড্যান কগিন এবং আরো অনেকে। মুক্তিযুদ্ধকালীন রিপোর্টিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে পরে গ্রন্থ রচনা করেছেন কেউ কেউ, কিংবা তাঁদের স্মৃতিভাষ্যে একাত্তরের অভিজ্ঞতাও বড় জায়গা করে নিয়েছে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ডেভিড লোশাক, জন পিলজার, ম্যালকম ব্রাউন প্রমুখ।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;জন পিলজারের &lsquo;হিরোজ&rsquo; গ্রন্থে স্থান পেয়েছে ভিয়েতনাম, ফিলিস্তিন, আফ্রিকা, কম্বোডিয়া, বাংলাদেশসহ নানা স্থানে নানা সংকটের রিপোর্টিংয়ে অর্জিত তাঁর সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতার প্রতিফলন। মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে দেখা যায়, কসাই এই জেনারেল বেশ স্মার্ট সাজার চেষ্টা করেছেন, ক্রিকেট নিয়ে আলাপে মশগুল হতে চেয়েছেন। ঢাকায় জন পিলজারের যোগাযোগের এক নির্ভরযোগ্য মাধ্যম ছিলেন অবজারভারের তরুণ সাংবাদিক এ ইউ এম ফখরুদ্দিন। জন পিলজার ঢাকার যে হোটেলে ছিলেন, সেখানে দরজার ফাঁক দিয়ে ফখরুদ্দিন হয়তো কোনো টুকরো কাগজ ঢুকিয়ে দিতেন। তাতে থাকত জরুরি খবর, আর মাঝেমধ্যে শেকসপিয়ারের কোনো লাইন। একবার ফখরুদ্দিন প্রেরিত পত্র তিনি পেয়েছিলেন বেশ পরে। পত্রে লেখা হয়েছিল, খুব তাড়াতাড়ি হয়তো আমি স্বাধীন দেশ থেকে রিপোর্ট পাঠাতে পারব। তবে আপাতত পরিস্থিতি কৃষ্ণকায়, যা মনে করিয়ে দেবে রিচার্ড দ্য থার্ডের কথা। পিলজার লিখেছেন, ফখরুদ্দিনের সঙ্গে প্রতিটি সাক্ষাৎকার আমাকে হতাশা থেকে উদ্ধার করত, কথোপকথন শেষ হতো শেলি কিংবা ব্রাউনিংয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে, &lsquo;ওয়ান ফাইট মোর, দ্য বেস্ট, দ্য বেস্ট।&rsquo;&lt;/p&gt; &lt;p&gt; তা-ই ঘটেছিল। শ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ লড়াইটা বাঙালিরাই করেছিল এবং ছিনিয়ে এনেছিল বিজয়। এই সংগ্রাম বিশ্বপরিসরে সাংবাদিকতা, বিশেষভাবে মুদ্রিত মাধ্যম ও বেতার সাংবাদিকতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। পশ্চিমি সরকারগুলো বাংলাদেশের মুক্তিপ্রয়াসের বিরোধিতা করেছিল; কিন্তু নবীন সাংবাদিকরা অবস্থান নিয়েছিলেন মানবতার পক্ষে, ক্ষেত্রবিশেষে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ন্যায্যতার পক্ষেও তাঁরা দাঁড়িয়েছিলেন। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সংগ্রামের গণতান্ত্রিক ন্যায্যতা তাঁদের যথাযথ ভিত্তিও প্রদান করেছিল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনী রায়ের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক পন্থায় জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রসর হয়েছিল বাংলাদেশ। রক্তের বন্যায় সেই গণতান্ত্রিক দাবি নস্যাৎ করতে সচেষ্ট হয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী, তাদের নৃশংসতা স্তম্ভিত করে দিয়েছিল সবাইকে, সাংবাদিকরাও তার বাইরে ছিলেন না। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন প্রায় সব সাংবাদিক, তা তিনি বামপন্থী, গণতান্ত্রিক কিংবা রক্ষণশীল যে মতের পত্রপত্রিকায়ই কর্মরত থাকুন না কেন। মানবতার পক্ষে সাংবাদিকদের এমন সংহত অবস্থান খুব বেশি দেখা যায় না। ফলে সাংবাদিকতার অনেক অনন্য নজির আমরা পেয়েছি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ঘিরে।&lt;/p&gt; &lt;p&gt; আরো একটি দিক দিয়ে একাত্তরে বিদেশি গণমাধ্যম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে, সেটা মুদ্রিত মাধ্যমের ভূমিকা। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পূর্বাপর সময়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিশেষ স্থান দখল করেছিল এবং বিপুলভাবে প্রভাবিত করেছিল সাংবাদিকতার ধরন ও জনমত। তবে ভিয়েতনাম যুদ্ধকেন্দ্রিক সাংবাদিকতায় টেলিভিশন ও সান্ধ্য সংবাদ পালন করেছে বিশাল ভূমিকা, মুদ্রিত মাধ্যম ছিল তার অনুগামী। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছাপার হরফের রিপোর্ট হয়ে উঠেছিল অনেক প্রভাবসঞ্চারী। এর একটি বাড়তি সুবিধা হলো, এসব রিপোর্ট সহজলভ্য এবং পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ অনেক সহজতর। বাংলাদেশের অনেক সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, তবে সেখানে বিশেষভাবে একাত্তরের সাংবাদিকতার পাঠ প্রদান গুরুত্ববহ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব প্রত্যক্ষদর্শী রিপোর্ট, অনুসন্ধানী সংবাদ ও বিশ্লেষণমূলক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, তার ব্যাপ্তি ও গভীরতা সাংবাদিকতায় যোগ করেছে নতুন মাত্রা, দিয়েছে অনেক ধরনের শিক্ষা। এর অধ্যয়ন আমাদের অনেক চিন্তার খোরাক জোগাবে, হবে প্রেরণামূলক এবং দেখাবে নতুন পথের দিশা।&lt;/p&gt; &lt;p&gt; লেখক : ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর&lt;/p&gt; &lt;p&gt; &lt;/p&gt; &lt;p&gt;&lt;strong&gt;ইতিহাসের অমূল্য দলিল&lt;/strong&gt;&lt;/p&gt; &lt;p&gt;হাসিনা আহমেদ&lt;/p&gt; &lt;p&gt;&lsquo;ইতিহাসের এই মহালগ্নে মরণজয়ী নিরস্ত্র জনসাধারণকে পথ নির্দেশের জন্য আজ বলিষ্ঠ একটি সংবাদপত্রের প্রয়োজনীয়তা সর্বাধিক। এই প্রয়োজন মেটানোর জন্য জয়বাংলা সাপ্তাহিকটির প্রকাশ একটা সঠিক ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।&rsquo; এভাবেই ১৯৭১ সালের ২১ মে সাপ্তাহিক &lsquo;জয় বাংলা&rsquo;র আত্মপ্রকাশকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। এটি ছিল আওয়ামী লীগের মুখপত্র। শুধু এই পত্রিকা নয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় অন্তত ৬৪টি পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি দৈনিক। বাকিগুলো ছিল সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, সাময়িকী, বুলেটিন বা নিউজ লেটার। পত্রিকাগুলোর অন্যতম &lsquo;জাগ্রত বাংলা&rsquo;, &lsquo;সংগ্রামী বাংলা&rsquo;, &lsquo;স্বাধীন বাংলা&rsquo;, &lsquo;সোনার বাংলা&rsquo;, &lsquo;দেশবাংলা&rsquo;, &lsquo;নতুন বাংলা&rsquo;, &lsquo;সাপ্তাহিক বাংলা&rsquo;, &lsquo;দুর্জয় বাংলা&rsquo;, &lsquo;মুক্ত বাংলা&rsquo;, &lsquo;বিপ্লবী বাংলাদেশ&rsquo;, &lsquo;মুক্তিযুদ্ধ&rsquo; (সিপিবি প্রকাশিত), &lsquo;রণাঙ্গন&rsquo;, &lsquo;দাবানল&rsquo;, &lsquo;অগ্রদূত&rsquo;, &lsquo;অভিযান&rsquo;, &lsquo;জন্মভূমি&rsquo; ইত্যাদি। &lsquo;জয় বাংলা&rsquo; নামে অন্তত চারটি এবং &lsquo;বাংলাদেশ&rsquo; নামে সাতটি পত্রিকা ছিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই পত্রিকাগুলো সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ সম্পাদনা করতেন। যেমন&mdash;এ বি সিদ্দিকী সম্পাদনা করতেন &lsquo;অমর বাংলা&rsquo;। এই সাপ্তাহিকটি বেঙ্গল প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস, ঢাকা থেকে প্রকাশিত হতো। পত্রিকার নামের দুই পাশের দুটি বক্সের একটিতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের &lsquo;এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম&rsquo; এবং &lsquo;রক্ত যখন দিতে শিখেছি তখন আরো রক্ত দেব, বাংলাদেশকে শোষণমুক্ত করবই&rsquo; উদ্ধৃত থাকত। মূল্য ছিল ২৫ পয়সা, পৃষ্ঠা ছিল চারটি। বিখ্যাত কবি ও সাংবাদিক সিকান্দার আবু জাফরের পত্রিকা ছিল &lsquo;অভিযান&rsquo;। প্রকাশের ঠিকানা ঢাকা লেখা হলেও যোগাযোগের ঠিকানা ছিল ৮৪/৯ রিপন স্ট্রিট, কলিকাতা-১৬। এটি ঝকঝকে ছাপা, জোরালো ভাষার একটি সাপ্তাহিক ছিল। দাম ছিল ৩০ পয়সা, পৃষ্ঠা চার থেকে আট। &lsquo;অগ্নিবাণ&rsquo; ঢাকা জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমের মুক্তিযোদ্ধাদের মুখপত্র ছিল। এ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালক ও ন্যাপের কেন্দ্রীয় নেতা ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরী কাগজটি প্রকাশ করতেন। সাইক্লোস্টাইল মেশিন ও স্টেনসিল পেপারে এটি প্রকাশিত হতো। যুদ্ধকালীন জনপ্রিয় সাপ্তাহিক &lsquo;আমার দেশ&rsquo;, সম্পাদক ছিলেন খাজা আহমদ। ২৫ পয়সার ছয় পৃষ্ঠার পত্রিকাটি আগস্টে প্রথম বাজারে আসে। ২৬ মার্চ থেকে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে নওগাঁর তরুণরা স্বাধীন বাংলার প্রথম দৈনিক &lsquo;ইশতেহার&rsquo; প্রকাশ করে। যদিও এক পৃষ্ঠার সাইক্লোস্টাইলে ছাপা কাগজটি মাত্র দুটি সংখ্যা বেরিয়েছে। &lsquo;উত্তাল পদ্মা&rsquo;র সম্পাদক ছিলেন মুহম্মদ আবু সাহিদ খান। মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত ঝকঝকে ছাপা, আলোকচিত্রসমৃদ্ধ এই কাগজের প্রথম সংখ্যাটি ২৪ নভেম্বর প্রকাশিত হয়। &lsquo;ওরা দুর্জয় ওরা দুর্বার&rsquo; ছিল মুক্তিবাহিনীর ক্রোড়পত্র। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রচার দপ্তরের পক্ষে এম আর আখতার এটি বের করতেন। &lsquo;গণমুক্তি&rsquo;র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। ১০ পয়সা দামের এই কাগজটি ছিল চার পৃষ্ঠার। সাপ্তাহিক &lsquo;গ্রেনেড&rsquo; সাইক্লোস্টাইল মেশিনে ঢাকার তরুণ ছাত্ররা বের করত। নটর ডেম কলেজের মেশিনটি উঠিয়ে নিয়ে এসে তারা কোনো এক বাড়িতে পত্রিকাটি ছাপত। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মুখপত্র সাপ্তাহিক &lsquo;জয় বাংলা&rsquo;র সম্পাদক ছিলেন গণপরিষদ সদস্য আহমদ রফিক। প্রথমে ২০ এবং পরে ২৫ পয়সা দামের এই ট্যাবলয়েডের ছাপা ছিল ঝকঝকে। প্রথম সংখ্যাটি ১৯৭১ সালের ১১ মে প্রকাশিত হয়। শেষ সংখ্যাটি ২৪ ডিসেম্বর। মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত এই পত্রিকায় &lsquo;রণাঙ্গন&rsquo; নামে যুদ্ধের খবরের আলাদা কলাম শেষ পৃষ্ঠায় ছাপা হতো। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী &lsquo;যা দেখছি যা ভাবছি&rsquo; নামে এখানে নিয়মিত কলাম লিখতেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও তখন পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। &lsquo;বাংলাদেশ&rsquo; নামের সাপ্তাহিকটির ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন সালেহা চৌধুরী। নারীদের নিয়ে একমাত্র পত্রিকা &lsquo;মায়ের ডাক&rsquo;-এর সম্পাদক ছিলেন সালেহা বেগম। এমন আরো অনেক পত্রিকা তখন অবরুদ্ধ দেশের নানা স্থান, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত হতো। অবরুদ্ধ দেশ, মুক্তিবাহিনীর সংগ্রাম ও বহির্বিশ্বের মনোভাব জানা এবং নিজেদের উদ্দীপ্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা ছাড়াও সাধারণ মানুষের কাছেও এগুলো ছিল অন্যতম আশ্রয়স্থল। আর এখন ইতিহাসের অমূল্য দলিল।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;লেখক : গবেষক&lt;/p&gt; &lt;p&gt;[অনুলিখন : নওরীন সাদিয়া ফাতেমী]&lt;/p&gt;

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও বিদেশের গণমাধ্যম

মফিদুল হক

notdefined

notdefined

প্রাসঙ্গিক

সম্পর্কিত খবর

মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিন

‘ইসলামিক মূল্যবোধ লঙ্ঘন’, ২ টিভি চ্যানেল বন্ধ করল তালেবান

যুক্তরাষ্ট্রে ঈদের চাঁদ

স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে স্বাধীন গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ : ভূমিমন্ত্রী

সর্বশেষ সংবাদ

রাজশাহীতে পুলিশ সদস্যের মাদক বিক্রির অডিও ফাঁস

বন ডাকাতদের জন্যই পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়: জিএম কাদের

দেশকে মরুকরণ করা হচ্ছে: মির্জা আব্বাস

কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য: তাজুল ইসলাম

গোসলের সময় ব্রহ্মপুত্রে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ গেল স্কুলছাত্রের, আহত ১

নান্দাইলে পরিকল্পনামন্ত্রীর উপস্থিতিতে গণশুনানি

দোহায় লেবাননের বিপক্ষে ফিরতি লেগ খেলবে বাংলাদেশ

সুলতান সুলেমানের রাজ্যে ফারিণের হানা

জব্বারের বলিখেলায় চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ

হাতিয়ার সৈকতে বিরল প্রজাতির বিষাক্ত ‘ইয়েলো বেলিড সি স্নেক’

তানজানিয়ায় প্রবল বর্ষণে নিহত ১৫৫

বঙ্গোপসাগরে কার্গো জাহাজডুবি, সাগরে ভাসছে ১২ নাবিক

নির্দেশেও সরেনি ঢাকার কেমিক্যাল কারখানাগুলো, সংসদীয় কমিটির ক্ষোভ

মাইদুলের ১১ বিয়ে ১১ তালাক, টার্গেট অসহায় সুন্দরী নারী!

পার্বত্য জেলার এনজিওর বাজেট জানাতে হবে জেলা পরিষদকে

এক দিনে হাসপাতালে আরো ১৯ ডেঙ্গু রোগী

চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি অব্যাহত

রাশিয়া ও চীনের গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে শঙ্কা, কী ভাবছে ইইউ সংসদ

রবিবার খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রজ্ঞাপন জারি

‘হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটতে হবে আমাদের দেশের সিনেমাকে’

ইউক্রেনীয় ও রুশ বাহিনীর পাল্টাপাল্টি হামলায় নিহত অন্তত ৭

প্রধানমন্ত্রী এবার ডামি উপজেলা নির্বাচন করতে যাচ্ছেন: রিজভী

অবৈধ অ্যাপে স্ট্রিমিং, তামান্না ভাটিয়াকে তলব করল মুম্বাই পুলিশ

এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি ভর্তি নয়: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী

যে কারণে নিউজিল্যান্ডে ঘুমাতে পারছিলেন না মুস্তাফিজ

জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

লুপ্ত পেশা ডুবুরি ও ঘটি তোলা

যেকারণে মত বদল জাভির

ডিপ্লোমাধারী ২৩৮ সার্ভেয়ার নিচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়

মহাকর্ষ তরঙ্গের বাঁচামরার ইতিহাস

সর্বাধিক পঠিত

বিএনপি-জামায়াতের দখলে চলে গেল কি শিল্পী সমিতি?

বেনজীর ও তার পরিবারের নগদ অর্থের তথ্য চেয়ে বিএফআইইউতে দুদকের চিঠি

নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা পাঁচ ঘণ্টা, ৫০ শতাংশ লিখিত

কোরআন থেকে শিক্ষা

স্বামীর মৃত্যু, মানসিক অবসাদ! এখন কেমন আছেন ‘চাক দে ইন্ডিয়া’র অভিনেত্রী

গাজীপুরে রিসোর্ট-খামারের দখলে থাকা পৌনে ৯ একর বনভূমি উদ্ধার

‘ব্রাজিল থে‌কে জীবন্ত গরু আনা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়’

মন্ত্রী দেশে ফিরলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত

যেভাবে শুরু সাংবাদিকদের ওপর হামলা

কমলা রঙে ঢেকে গেছে গ্রিসের আকাশ

তীব্র তাপপ্রবাহের পরিধি আরো বেড়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ৫ মৃত্যু

তিন অডিটরকে খুশি করতে চাঁদা দিতে হলো ৫৭ নার্সকে

মহানবী (সা.) যেসব উপায়ে উপার্জন করতেন

শিল্পী সমিতিতে মারামারি : সবশেষ যা হলো

প্রধান আসামি কাশেম জিহাদী কোথায়? জামিনে মুক্তদের মহড়া

উপজেলা নির্বাচন : বরুড়ার ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ

কোথায় বসবে অনন্ত-রাধিকার ‘রাজকীয়’ বিয়ের আসর?

সদস্য পদ হারানো জায়েদ কি শিল্পী সমিতিতে ফিরছেন?

সনদ পেল ১৪ পণ্য, টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই-এর জন্য মামলা হবে ভারতে

২০২৮ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ১৯তম হবে বাংলাদেশ

‘সুযোগ’ রেখে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির

ডিএমপির এক এডিসি ও তিন এসির বদলি

বাবার সঙ্গে রোমান্সের প্রস্তাব, যে সিনেমা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সারা

উল্টো চাঁদ

‘আমি সব সময়ই আনন্দে থাকি’, বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে শিমুল

ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া বিএনপি : ওবায়দুল কাদের

আপিল বিভাগে তিন বিচারপতি নিয়োগ, শপথ আজ

প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু: অপরাধ আড়ালের চেষ্টা করা হচ্ছে

তীব্র তাপপ্রবাহের এলাকা আরো বেড়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ৫ মৃত্যু

সিডিএর নতুন চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ ইউনুছ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন