<p> কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুরে শেষরাতে ট্রাক রেখে তার ভেতরে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন চালক রিয়াজ উদ্দিন। একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। গতকাল সোমবার ভোরে ওই ট্রাকে পেট্রলবোমা ছুড়ে মারে মুখোশধারী দুই যুবক। পেট্রলবোমার আগুনে ঘুমন্ত রিয়াজের শরীরের ১৪ শতাংশই পুড়ে গেছে। তিনি এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের পঞ্চম তলায় বিশেষ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রিয়াজ আশঙ্কামুক্ত- এমনটি এখনো বলা যাচ্ছে না।</p> <p> মানবতাবিরোধী অপরাধী কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করার প্রতিবাদে জামায়াতের ডাকা হরতালের মধ্যে এই পেট্রলবোমা হামলা চালানো হয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত দুর্বৃত্তদের খুঁজে পায়নি পুলিশ।</p> <p> সর্বশেষ এই নাশকতার ঘটনায় আবার আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটের পরিবেশ। দগ্ধ ট্রাকচালক রিয়াজ উদ্দিনের (৩৫) স্ত্রী হোসনে আরা বেগম ব্যান্ডেজে মোড়ানো অচেতন স্বামীকে দেখে বিলাপ করে বলেন, 'আমাক কী দেখাইলি ভাই। কোন পাষণ্ড এই কাম করল? মানুষ মানুষরে এ্যামডে পোড়ে? হামার স্বামী বাঁচবি? ও আল্লাহ হামাক কী হইবি?' এভাবেই ওঠেন। গতকাল রাতে পঞ্চম তলার বিশেষ ওয়ার্ড ওই গৃহবধূর আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে।</p> <p> ট্রাকচালক রিয়াজ এমন সময়ে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হলেন, যখন সেখানে নাশকতায় দগ্ধ রোগীদের যন্ত্রণা ক্রমেই কমে আসছে। সেখানে ১৮২ জন রোগী ভর্তি হলেও এখন চিকিৎসাধীন মাত্র ২০ জন। অস্ত্রোপচারের পর ১৯ রোগীকেই শিগগির বাড়ি পাঠানোর আশা করছেন চিকিৎসকরা।</p> <p> বার্ন ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক আবুল কালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গত ২১ মার্চ মাগুরায় ট্রাকে দগ্ধ হয়ে আটজন এসেছিল। এরপর আর কোনো রোগী আসেনি। আজ একজনকে পেলাম। এখন সব মিলে ২০ জন আছে। অন্য ১৯ জনের অবস্থা ভালোর দিকে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই তাদের ছেড়ে দেওয়া যাবে বলে আশা করছি।'</p> <p> রিয়াজের ব্যাপারে বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ শঙ্কর পাল বলেন, 'ভোরে রিয়াজকে এখানে আনা হয়েছে। তাঁর দুই হাত, বুকসহ শরীরের ১৪ শতাংশ পুড়েছে। তিনি শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না। পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।'</p> <p> রিয়াজের ট্রাকের হেলপার মো. মুন্না কালের কণ্ঠকে জানান, রবিবার রাতে ট্রাকে ভুট্টা বোঝাই করে তারা রংপুর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন। পথে গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে ট্রাক (রংপুর-ট-০২-০০৫৭) থামিয়ে তাঁরা রেস্টুরেন্টে নাশতা খান। এরপর রিয়াজ ট্রাকের ভেতরে এবং মান্না নিজে মালপত্রের ওপর শুয়ে কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ওই সময় মুখোশধারী দুই যুবক রিয়াজের পাশে একটি পেট্রলবোমা ছুড়ে মারে। রিয়াজ চিৎকার করলে মুন্না জেগে ওঠেন। তিনি রেস্টুরেন্টের লোকজন নিয়ে আগুন নেভান। ততক্ষণে রিয়াজের শরীরে আগুন ধরে যায়। তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে পাঠায় পুলিশ।</p> <p> দাউদকান্দি থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া বলেন, জামায়াতের ডাকা হরতালের সময় এ ঘটনাটি ঘটল। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।</p> <p> পরিবারের সহায় রিয়াজ : গতরাতে বার্ন ইউনিটে স্বামীর কাছে পৌঁছেন রিয়াজের স্ত্রী হোসনে আরা। তিনি জানান, রংপুরের বাবুপাড়া আলমনগর এলাকার বৃদ্ধ মো. সুলতান মিয়ার ছেলে রিয়াজ চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে বড়। সুলতানও ট্রাকচালক ছিলেন। বাবা বৃদ্ধ হলে রিয়াজই সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। রাজিয়া (১০), রাফিয়া (৮) ও হোসেন (১) নামে তাঁদের তিন সন্তান আছে।</p> <p>  </p>