<div> তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় বিকল হয়ে পড়া একটি ট্রলারে গুলি চালিয়েছে মিয়ানমারের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন পাঁচ বাংলাদেশি। গুলিবিদ্ধ ২৩ জনসহ আহত হয়েছেন আরো অর্ধশতাধিক। গতকাল বুধবার সকালে সেন্ট মার্টিনস দ্বীপের অদূরে বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের জলসীমায় এ ঘটনা ঘটে।</div> <div> খবর পেয়ে টেকনাফ থেকে কোস্টগার্ডের তিনটি দল অভিযান চালিয়ে ট্রলারটি গতকাল বিকেলে উদ্ধার করে সেন্ট মার্টিনসে নিয়ে আসে। কোস্টগার্ডের সদস্যরা ওই সময় ট্রলার থেকে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করেন। ২৮৩ যাত্রীকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতাল ও টেকনাফ উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।</div> <div> নিহতরা হলেন বগুড়ার সাইফুল ইসলাম, যশোরের রুবেল হোসেন ও সেলিম মিয়া, সিরাজগঞ্জের মনির হোসেন ও মো. ইসলাম। উদ্ধার করা যাত্রীদের বেশির ভাগই নরসিংদী, বগুড়া, যশোর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া এলাকার বাসিন্দা।</div> <div> টেকনাফ থানার ওসি মোক্তার হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের সংঘবদ্ধ একটি চক্র ৩১১ জন যাত্রী নিয়ে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য মিয়ানমার-বাংলাদেশ জলসীমায় থাইল্যান্ডের একটি যাত্রীবোঝাই বড় ট্রলার নোঙর করে রাখে। বাংলাদেশ থেকে ১৫-২০ জন যাত্রীর ছোট ছোট দলকে নৌকায় করে ট্রলারে তোলা হয়। এভাবে ১৪-১৫ দিন ধরে ট্রলারটি সাগরের মাঝখানে নোঙর করে যাত্রী বোঝাইয়ের কাজ চলছিল। দিন দিন সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায় যাত্রীরা ট্রলার ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ দিতে থাকেন। কিন্তু দালালরা আরো যাত্রী বোঝাই করতে চায়। এ নিয়ে উত্তেজিত যাত্রীদের সঙ্গে দালালদের ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে দালালরা ট্রলারের যাত্রীদের ‘শায়েস্তা’ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী তারা মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের অত্যাধুনিক নৌযানে করে সশস্ত্র লোকজনকে এনে ট্রলারের যাত্রীদের ওপর হামলা চালায়। সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা যাত্রীবোঝাই ট্রলারটিতে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এতে পাঁচজন নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন ২৩ জন। হামলার সময় ট্রলারটির চালকসহ আরো দুজন সাগরে ঝাঁপ দেন। দুজনই থাইল্যান্ডের নাগরিক বলে জানা যায়।</div> <div> ঘটনার পর ওই ট্রলারের যাত্রী মিঠুন (নরসিংদীর বীরপুরের বাসিন্দা) মোবাইল ফোনে বিষয়টি সংবাদকর্মীদের জানান। এর পরই টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনস দ্বীপের কোস্টগার্ড সদস্যরা সাগরে ভাসমান ট্রলারটি উদ্ধারে কার্যক্রম শুরু করেন।</div> <div> সেন্ট মার্টিনস দ্বীপের পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক আবদুল হক কালের কণ্ঠকে জানান, ভাসমান যাত্রীবাহী ট্রলারটি সাগর থেকে টেনে আনার জন্য সেন্ট মার্টিনস থেকে পাঁচটি ট্রলার পাঠানো হয়। এসব ট্রলার রশি বেঁধে একসঙ্গে টেনে বিকল ট্রলারটি সেন্ট মার্টিনসে নিয়ে আসে।</div> <div> উদ্ধার পাওয়া যাত্রীদের ভাষ্যমতে- এক হাজার ৫০০ যাত্রী দালালদের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য পাঁচটি ট্রলারে করে রওনা হন। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ৩১১ জন ছিলেন একটি ট্রলারে। তবে তাঁদের সবাই বাংলাদেশি কি না তা নিশ্চিত না। রোহিঙ্গাও থাকতে পারে। ১৪-১৫ দিন ধরে যাত্রী বোঝাইয়ের পর গত সোমবার রাতে এই ট্রলারটি রওনা দেয়। কিন্তু কিছুদূর গিয়েই মিয়ানমার সীমান্তের কাছে ফের নোঙর করে। যাত্রীদের জানানো হয়, মিয়ানমার থেকে কিছু রোহিঙ্গা যাবে। তাদের তোলা হবে। সেখানে দুই-তিন ধরে নোঙর করে রাখা হয় ট্রলারটি। ট্রলারে থাকা দালালদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা বলে, ট্রলার বিকল হয়ে গেছে। স্টার্ট নিচ্ছে না। ইঞ্জিন ঠিক করে তারপর রওনা দেওয়া হবে। কয়েকজন যাত্রী এ নিয়ে তর্ক শুরু করলে দালালরা ফোন করে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের ডেকে এনে তাঁদের ওপর হামলা চালায়।</div> <div> জনসচেতনতা তৈরিতে গণবিজ্ঞপ্তি : মানবপাচার রোধে জনসচেতনতা তৈরিতে স্থানীয় প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আজ বৃহস্পতিবার গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গতকাল জনশক্তি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফর বাংলাদেশি মাইগ্রেন্টের (আরবিএম) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী বলেন, ‘সম্প্রতি সাগরপথে মানবপাচারের হার অনেক বেড়ে গেছে।</div>