<div> নাটোরের লালপুর উপজেলায় ঈশ্বরদী বাইপাস রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট কালোবাজারিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১০ জন। গতকাল শুক্রবার সকালে টিকিট কাটার সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত। এরপর দুই পক্ষের হয়ে গ্রামবাসীও ওই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।</div> <div> সংঘর্ষের সময় স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম, টিকিট কাউন্টার, বিশ্রামাগারসহ আশপাশে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। এ সময় স্টেশন ও আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।</div> <div> নিহতরা হলো লালপুর উপজেলার ডহরশৈলা গ্রামের আকবর আলীর ছেলে জামাত আলী ওরফে জুম্মত (৩৭) ও পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার শৈলপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে জীবন হোসেন (১৬)।</div> <div> এ ঘটনার পর দুপুরে রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে।</div> <div> প্রত্যক্ষদর্শী, এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ৯টার দিকে ঢাকাগামী সিল্ক সিটি ট্রেনের ৫ আগস্টের অগ্রিম টিকিট কেনার সময় লাইনে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে কালোবাজারি লালপুরের ডহরশৈলা গ্রামের মিজানুর রহমান স্বপন ও ঈশ্বরদীর শৈলপাড়ার জীবনের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডার জের ধরে মারামারি হয়। তখন সেখানে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা জীবনকে স্টেশনের বিশ্রামাগারে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে জীবনের পক্ষের সাত-আটজন লাঠিসোঁটা নিয়ে স্টেশন এলাকায় স্বপনের মামা ডহরশৈলা গ্রামের মোতালেবের চায়ের দোকানে হামলা চালায়। সেখানে স্বপনের পক্ষের জুম্মতসহ অন্যরা উপস্থিত ছিল। হামলায় ঘটনাস্থলেই জুম্মতের মৃত্যু হয়।</div> <div> মৃত্যুর খবর পেয়ে জুম্মতের পক্ষের লোকজন সংগঠিত হয়ে বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে বাইপাস স্টেশনে হামলা চালিয়ে বিশ্রামাগারের তালা ভেঙে জীবনকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে বেধড়ক পেটায়। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।</div> <div> আহতদের মধ্যে রানা (২৮), মামুন (৩৩) ও আমজাদকে (৪৮) লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।</div> <div> ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. স্বর্ণা সংঘর্ষে দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ধারালো অস্ত্র ও লাঠির আঘাতে মাথা ফেটে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে। আহতদের লালপুর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, ঈশ্বরদী হাসপাতাল থেকে পাঠানো তিনজনকে লালপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রানা অভিযোগ করেন, জীবন ও তার লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হঠাৎ করেই তাঁদের ওপর হামলা চালায়।</div> <div> সংঘর্ষের সময় স্টেশনে অপেক্ষমাণ জহুরুল ইসলাম নামের একজন জানান, ঈশ্বরদী বাইপাসের টিকিট কখনোই যাত্রীরা পায় না। স্থানীয় লোকজন আগেই টিকিট কেটে রাখে। পরে যাত্রীদের তাদের কাছ থেকে বেশি দামে টিকিট কিনতে বাধ্য করে।</div> <div> শফিকুল ইসলাম নামের অন্য একজন জানান, ঈশ্বরদী বাইপাস এলাকাটি নাটোর ও পাবনা জেলার সীমান্ত হওয়ায় কোনো জেলার পুলিশই দায়িত্ব নিতে চায় না। জিআরপি পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে স্থানীয় লোকজনই নানা রকম অপকর্ম করে থাকে।</div> <div> ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার রফিজ উদ্দিন জানান, স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের বাইরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জিআরপি ও থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। তিনি টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁদের অগোচরে এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।</div> <div> এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন চালু হওয়ার পর থেকে স্টেশনের পাশের এলাকার ফারুক, হামিদুল, হাফিজুল, মস্তব, জুম্মত ও তাদের লোকজন টিকিট কালোবাজারি করে আসছে। বিষয়টি রেল প্রশাসন, পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীদের জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।</div> <div> পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সুজিত কুমার জানান, বছর দেড়েক আগে ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনে টিকিট কালোবাজারি বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বেশ কিছুদিন বন্ধও ছিল। এখন আবার নতুনভাবে এসব ঘটছে কি না তিনি তদন্ত করে দেখবেন বলে জানান।</div> <div> লালপুর থানার ওসি আব্দুল হাই তালুকদার ও ঈশ্বরদী রেলস্টেশন জিআরপি থানার ওসি হুমায়ুন কবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, টিকিট কালোবাজারি দুই পক্ষের সংঘর্ষের সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।</div> <div> স্টেশন ভাঙচুর, হতাহতের ঘটনায় ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনমাস্টার সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে ঈশ্বরদী জিআরপি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েক ব্যক্তিকে আসামি করে দুটি মামলা করেছেন।</div> <div> নাটোরের পুলিশ সুপার বাসুদেব বণিক জানান, ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।</div> <div> ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত সিগন্যাল টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার অচিন কুমার তালুকদারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল আউয়াল ভূঁইয়া।</div>