<p>বহু বছর পর আবারও যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধের ডঙ্কা বেজে ওঠার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ দেওয়া যেতেই পারে। বাম ঘেঁষা মার্কিন গণমাধ্যম ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টানা তৃতীয় বছরের মতো প্রকাশ্য লড়াইয়ে প্রবেশ করেছে। তাদের এই লড়াই রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরো অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিষয়টি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি গৃহযুদ্ধের জন্ম দিতে পারে।</p> <p>দলগত রাজনীতির ধারক দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট গত এক সপ্তাহ ধরে ‘গৃহযুদ্ধের দেড় শ বছরে বলা হয়নি এমন কিছু কথা’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে। এই নিবন্ধে কৌশলে ডেমোক্র্যাটদের আলোচনার ঊর্ধ্বে রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘বিশেষ কাউন্সেল রবার্ট মুলারের প্রতিবেদন প্রায় সম্পন্ন হয়ে এসেছে। ইমপিচমেন্টের আলোচনা বাতাসে ভাসছে। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও এগিয়ে আসছে। আলোচনায় রয়েছে সহিংসতা এবং গৃহযুদ্ধ বেধে যাওয়ার।’</p> <p>রাষ্ট্র হিসেবে এক গভীর ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। রাজনৈতিক পরিস্থিতির ক্রমাবনতির জন্য ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা যতটা দায়ী, ততটাই দায় রয়েছে মূলধারার গণমাধ্যমের। খোঁজখবর রাখেন এমন বহু আমেরিকানই প্রকাশ্যে স্বীকার করবেন, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবেই তীব্র বিভাজন তৈরি হয়েছে। এই বিভাজন সবচেয়ে প্রকট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে আমাদের বিশ্বরাজনীতির দর্শন নিয়ে বন্ধু ও পরিবার-পরিজনের মধ্যেই বিরোধ তৈরি হয়েছে। এই বিরোধ সুখকর নয়, উদ্বেগজনক। প্রকৃত সংকট তৈরি হবে তখন, যখন রাজনৈতিক বিভাজনের এই বিরোধ ইলেকট্রনিক মাধ্যম থেকে বের হয়ে বাস্তবজীবনে আসবে। এই সংকট থেকে পরিবারের সদস্যরাও রেহাই পাবে না। রক্তের সম্পর্ক আছে বলেই তাদের রাজনৈতিক দর্শনও একই হবে—এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। এ সত্য অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে অনেক বেশি প্রযোজ্য।</p> <p>আমেরিকার গৃহযুদ্ধের ইতিহাস আছে। ইউনিয়ন থেকে দক্ষিণাঞ্চল বের হয়ে যাবে কি না তা নির্ধারণে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল ১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে লিপ্ত ছিল। এই যুদ্ধে ইউনিয়ন ও কনফেডারেট সেনাবাহিনীর ছয় লাখ ২০ হাজার সেনা নিহত হয় (অনেকেই দাবি করে এই যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা আট লাখ ৫০ হাজার)।</p> <p>অন্যভাবে বলতে গেলে গৃহযুদ্ধে যত আমেরিকান নিহত হয়েছে, দেশের অন্য সংঘাতগুলো একসঙ্গে করলেও তাতে নিহতের সংখ্যা এত বেশি হবে না। ইতিহাস পর্যালোচনার পর আশা করা হয়, মূলধারার গণমাধ্যম তাদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবে। তবে বর্তমান অবস্থাদৃষ্টে তেমন কিছু অনুভূত হচ্ছে না। স্পষ্টই বলে দেওয়া যায়, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভে কিছু একটা সংকট চলছে। গণমাধ্যম ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর তাদের সব মনোযোগ দিতে গিয়ে তাদের প্রধান দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে।</p> <p>রাজনৈতিকভাবে বামপন্থীরা এখন সাইডলাইনে বসে তামাশা দেখছে। সম্প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেনের খবর ছাপা হয়। এতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি তিনি যদি ২০২০ সালের নির্বাচনে পরাজিত হন, তাহলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পন্ন হবে না বলেই আমার বিশ্বাস।’</p> <p>২০১৬ সালের হিলারি ক্লিনটনের পরাজয়ের পর থেকে ওয়াশিংটনে প্রধান আলোচ্য হয়ে উঠেছে মুলারের প্রতিবেদন। প্রায়ই শোনা যায়, ট্রাম্প অবৈধ প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর ইমপিচমেন্ট সময়ের ব্যাপার মাত্র। মূলধারার গণমাধ্যমে দেশের সব সমস্যার জন্য ট্রাম্প ও রিপাবলিকান পার্টিকে দায়ী করা হচ্ছে। আর ডেমোক্র্যাটদের দেখানো হচ্ছে ত্রাতা হিসেবে। যাদের কারণে পুরো দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছে।</p> <p>আগেই বলেছি, ডোনাল্ড ট্রাম্প সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন। তবে সব সংকটের জন্য তাঁকে ও তাঁর দলকে দায়ী করার বিষয়টি অনেকটাই চীনের আতশবাজির কারখানায় সিগারেট ধরানোর মতো।</p> <p>মার্কিন গণমাধ্যম এখন একটি লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে। আর তা হলো—২০২০ সালের নির্বাচনে কোনোভাবেই যেন ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হতে না পারেন। মূলধারার গণমাধ্যম যদি একটি রাজনৈতিক দলকে এমন নগ্নভাবে সমর্থন করতে থাকে, তবে এর পরিণতির দায়ও তাদেরই নিতে হবে। এই পন্থা তাদের জন্য শুধু মর্যাদাহানিকরই নয়, বরং জাতির নিরাপত্তার পক্ষেও হুমকি।</p> <p> </p> <p>লেখক : মস্কো নিউজের</p> <p> এডিটর ইন চিফ</p> <p>সূত্র : আরটি</p> <p>ভাষান্তর : তামান্না মিনহাজ</p>