<p>প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গুণমুগ্ধ একনিষ্ঠ ভক্ত নন ডেভিড ফ্রেঞ্চ। তবে তিনি সেসব রক্ষণশীল ও সাবেক রিপাবলিকানদের মতোও নন, যাঁরা হোয়াইট হাউসের তামাশা দেখার পর জিওপির (গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি তথা রিপাবলিকান পার্টি) দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। প্রায়ই তিনি উদারপন্থীদের ওপর চড়াও হন। যখন দেখেন তারা অকারণে ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের মাত্রাতিরিক্ত সমালোচনা করছে। প্রেসিডেন্টের কর্মকাণ্ডে ভোটাররা অস্বস্তি বোধ করে কি করে না, সে চিন্তা না করেই তিনি রিপাবলিকান পার্টির প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার পক্ষে অব্যাহতভাবে ওকালতি করে যাচ্ছেন।</p> <p>কিন্তু গত শুক্রবার সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণের জন্য অর্থ সংস্থানের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জরুরি অবস্থা ঘোষণা করায় ফ্রেঞ্চ যারপরনাই বিরক্ত। তিনি মনে করেন, এটা ক্ষমতা কুক্ষিগত করার একটা ধরন বই কিছু নয়; হোয়াইট হাউস নির্বাহী ক্ষমতার প্রয়োগে যথেচ্ছাচার করেছে। তাঁর মতে, ট্রাম্পের এসংক্রান্ত ঘোষণাপত্র ‘কর্তৃত্ব কাঠামোর প্রতি অবজ্ঞার নথি’।</p> <p>‘ন্যাশনাল রিভিউ’র জন্য লেখা একটি নিবন্ধে ফ্রেঞ্চ বলেছেন, এ ঘোষণা আসলে রাজার অনুশাসন, কোনো প্রেসিডেন্টের ব্যাখ্যামূলক বিবৃতি নয়। এটি আদালতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়বে। পরিস্থিতির যৌক্তিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে করা হয়েছে কি হয়নি, সে কথায় না গিয়েও বলা যায়, জরুরি অবস্থা ঘোষণার এখতিয়ার ট্রাম্পের রয়েছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে এ ঘোষণা তাঁকে ইচ্ছামতো কাজ করার ছাড়পত্র দেয়। সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণের অর্থ সংস্থানের জন্য ট্রাম্প অন্যান্য বিধির সহায়তা নিতে পারতেন। কিন্তু ওই সব বিধি খুবই সতর্কতার সঙ্গে প্রণীত। সেগুলো প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতার অপচর্চার সুযোগ দেয় না।</p> <p>ফ্রেঞ্চের বক্তব্য, আদালতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ব্যাখ্যা দিতে হবে যে সীমান্ত প্রাচীরের জন্য প্রয়োজনীয় ৩৬০ কোটি ডলার সংস্থানের জন্য জরুরি অবস্থা জারি ও সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন রয়েছে। বোঝাতে হবে, তহবিল ব্যবহার করা হচ্ছে সামরিক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায়, অর্থাৎ ওই ধরনের প্রকল্পে অর্থায়নের জন্যই তহবিল ব্যবহার করা হচ্ছে। ট্রাম্প দাবি করছেন, সীমান্তে এমন সব সমস্যা রয়েছে, যেসবের মোকাবেলার জন্য সেনা মোতায়েন আবশ্যক। কিন্তু তিনি যেসব সমস্যার কথা বলেছেন, যেমন মাদকপাচার, দুর্বৃত্তদের সংঘবদ্ধ কর্মকাণ্ড, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বন্দি করে রাখার জায়গার অপর্যাপ্ততা—সবই বেসামরিক সমস্যা। এসবের সমাধানের জন্য সামরিক উপায় অবলম্বনের প্রয়োজন নেই।</p> <p>প্রেসিডেন্টের জরুরি অবস্থা ঘোষণার নথিতে এমন যুক্তি দেখানোর প্রয়াসও নেই যে সীমান্তে এমন সমস্যা রয়েছে, যার মোকাবেলা সেনা মোতায়েন করা ছাড়া সম্ভব নয়—যেমন জাতীয় দুর্যোগ, যা সামলানোর জন্য সামরিক বাহিনীর পরিবহন সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর প্রয়োজন রয়েছে অথবা জনবলের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম যেকোনো ব্যক্তিকে তাত্ক্ষণিকভাবে নিযুক্ত করার প্রয়োজন রয়েছে। আদালত যদি এ কথা বলেন যে ট্রাম্প সীমান্তে প্রয়োজনবোধে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সেনা মোতায়েন করতেই পারেন, তার পরও তাঁর পক্ষে সহজে বোঝানো সম্ভব নয় যে সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণের জন্য সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন রয়েছে।</p> <p>কেন ট্রাম্প এ কথা বোঝাতে পারবেন না? ফ্রেঞ্চ বলেছেন, কারণ সীমান্ত প্রাচীর একটি বেসামরিক কাঠামো, এর নির্মাণের জন্য যত আয়োজন-উপকরণ দরকার তা বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে করতে হবে এবং এর ব্যবহারের উদ্দেশ্যও বেসামরিক। সেনারা সেখানে সামরিক প্রতিরোধক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে কোনো সামরিক স্থাপনা নির্মাণ করবে না। এটা যে সামরিক নির্মাণের বিষয় নয়, এ কথা বলাই যথেষ্ট নয়; এর নির্মাণে সহায়তার জন্য সেনা মোতায়েনের আবশ্যকতাও নেই। তবে কেউ যদি এমন হাস্যকর যুক্তি দেখানোর চেষ্ট করছে যে সীমান্ত প্রাচীর কোনো না কোনোভাবে তার নির্মাতা সেনাদের রক্ষা করছে, তাহলে ভিন্ন কথা। সশস্ত্র সংঘাতবিষয়ক মার্কিন আইন বা অন্যান্য মার্কিন আইনে আগ্রাসন প্রতিরোধের ক্ষমতা সরকারকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মোতায়েনকৃত সেনারা প্রকৃত আগ্রাসনের কোনো ঘটনাকে প্রতিহত করার পরিস্থিতিতে নেই। তারা আসলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার মিশনে সহায়তা করছে; অপরাধ নিয়ন্ত্রণবিষয়ক ফেডারেল কমিশনকে সহায়তা করছে। তারা যুক্তরাষ্ট্র দখল করতে আসা কোনো বাহিনীকে প্রতিহত করছে না।</p> <p>ফ্রেঞ্চ সীমান্তে প্রতিবন্ধক স্থাপনা নির্মাণের বিরোধী নন। আগেও তিনি লিখেছেন, সীমান্তে অনেক প্রতিবন্ধকতামূলক স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে তাঁর সমর্থন রয়েছে। কিন্তু এসব নির্মাণ করতে হবে যথাযথ প্রক্রিয়ায়, আইনের ধারা মেনে। তিনি বলার চেষ্টা করেছেন, অন্তত আলোচক-সমালোচকদের মধ্যে ট্রাম্পের এজাতীয় এলেবেলে কর্মকাণ্ডে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে; প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযানের সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে এমন কর্মকাণ্ড তাঁর সমর্থনের ভিত্তিতে চিড় ধরাবে।</p> <p> </p> <p>সূত্র: অল্টারনেট (বিকল্প অনলাইন গণমাধ্যম)</p> <p>ভাষান্তর: সাইফুর রহমান তারিক</p>