<p>উত্তর কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার আশঙ্কা দূর করার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো পিয়ংইয়ং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা। প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের পুনরেকত্রীকরণ ও জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মুন চাং-ইন এ অভিমতই ব্যক্ত করেছেন। উত্তরের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশের পর তিনি এ মন্তব্য করেন। কিন্তু ওয়াশিংটন বলেছে, পিয়ংইয়ং আলোচনায় বসার সুযোগ পেতে পারে যদি তারা ‘অপারমাণবিকীকরণ’ বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য মনোভাব দেখায়। প্রসঙ্গত বলে রাখা দরকার, ওয়াশিংটনের কিছু কর্মকর্তা এখনো উত্তর কোরিয়ায় সামরিক অভিযান চালানোর জন্য মুসাবিদা করে যাচ্ছেন।</p> <p>জাতীয় পুনরেকত্রীকরণ উপদেশনা পরিষদের ওয়াশিংটন শাখা গত মঙ্গলবার বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। সেখানেই উপদেষ্টা মুন চাং-ইন উপর্যুক্ত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিক হামলা চালানো থেকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর একটি বহুপক্ষীয় পরামর্শক ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত। কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলাই যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার জন্য সর্বোত্তম পন্থা। এর জন্য উত্তরকে তার পারমাণবিক কর্মসূচি ও সংশ্লিষ্ট উপকরণাদি গুটিয়ে নেওয়ার সদিচ্ছা ব্যক্ত করতে হবে। সেটি হলে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া (মধ্যস্থতা করার জন্য) উদ্যোগ নিতে পারে। এতে সংকট নিরসনের ব্যাপারে অগ্রগতি হতে পারে বলে আশা করা যায়।</p> <p>চাং-ইন উল্লেখ করেন, উত্তর কোরিয়ার নেতাদের আশঙ্কা হলো, (ইরাকের) সাদ্দাম হোসেনের সরকার বা (লিবিয়ার) মুয়াম্মার গাদ্দাফির সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে তাদের ক্ষেত্রেও তারা একই আচরণ করবে। এ ব্যাপারে বলা যায়, পিয়ংইয়ং ও ওয়াশিংটন যদি সমঝোতায় পৌঁছায় এবং ছয় জাতি আলোচনা কাঠামোতে বিষয়টিকে যথাযথভাবে ন্যস্ত করে, তাহলে ওয়াশিংটনের পক্ষে উত্তর কোরিয়ায় একক উদ্যোগে সামরিক অভিযান চালানো কঠিন হবে। বহুপক্ষীয় আলোচনার মধ্যে থেকেও তারা যদি সামরিক অভিযানের ধারণা নিয়ে অগ্রসর হয়, তাহলে তাদের আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের বিষয়টি প্রবল বাধার মুখে পড়বে এবং আন্তর্জাতিকভাবে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।</p> <p>যুক্তরাষ্ট্রের ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ’-এর নীতিকে উত্তর কোরিয়া বৈরী দৃষ্টিতে দেখছে। মুন চাং-ইন বলেন, পিয়ংইয়ং মনে করে এ নীতি প্রকৃতপক্ষে ‘অপারমাণবিকীকরণ’ সংক্রান্ত নয়, বরং এটি বৈরী এক নীতি, উত্তর কোরিয়ার সরকারকে উত্খাত করা বা ধ্বংস করার হাতিয়ার হিসেবে এটিকে ব্যবহার করতে চায় ওয়াশিংটন। কাজেই যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে উত্তর কোরিয়া বিষয়ে অগ্রাধিকার স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা। পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়েই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রসঙ্গটিকে দ্বিতীয় অগ্রাধিকার বিবেচনা করে পরে কথা বলতে যাওয়া উচিত।</p> <p>উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন দল ওয়ার্কার্স পার্টির ইউনাইটেড ফ্রন্ট ডিপার্টমেন্টের প্রধান কিম ইয়ং-চোল গত শনিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেন। পিয়েওংচাংয়ে শীতকালীন অলিম্পিক ক্রীড়ানুষ্ঠানের সমাপ্তি উপলক্ষে তিনি এসেছিলেন। সফরকালে তিনি প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন এবং অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেন। আলোচনায় তিনি নম্র মনোভাবই দেখিয়েছেন।</p> <p>‘অপারমাণবিকীকরণ’ বিষয়ে কোনো কথা বলতে বরাবরই অস্বীকৃতি জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। কিন্তু এবার কিম (ইয়ং-চোল) ওই রকম কঠোর মনোভাব দেখাননি। মুন চাং-ইন উল্লেখ করেন, মনে হচ্ছে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার একটি সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে সত্যি এ বিষয়টির কী হবে তা নির্ভর করছে সিউল-ওয়াশিংটন যৌথ সামরিক মহড়ার বিষয়ে তাদের মনোভাবের ওপর। শীতকালীন অলিম্পিকের জন্য এই মহড়া পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এপ্রিলের গোড়ার দিকে মহড়া অনুষ্ঠিত হতে পারে।</p> <p>মঙ্গলবারই উত্তর কোরিয়া-বিষয়ক জাতীয় কমিটি আয়োজিত অন্য একটি সেমিনারে মুন (চাং-ইন) বলেন, যৌথ সামরিক মহড়া আরেক দফা পেছানোর বা বাতিল করার সম্ভাবনা বলতে গেলে নেই। তবে উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র যদি আলোচনা শুরু করে, তাহলে মহড়াসূচিতে বদল ঘটতে পারে। মহড়া শুরুর আগেই উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হবে বলে আশা করেন তিনি—এ কথাও জানান, প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন দুই পক্ষের মধ্যে ‘অপারমাণবিকীকরণ’ সংক্রান্ত আলোচনার বিষয়ে মধ্যস্থতা করার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।</p> <p>সত্বর এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা রাখেন উপদেষ্টা মুন চাং-ইন। তাঁর অভিমত, সিউল ও ওয়াশিংটন যদি উত্তর কোরিয়াকে যথাযথভাবে আশ্বস্ত করতে পারে, একটি রূপরেখা তৈরি করতে পারে, সহায়তা প্রাপ্তির আশা জাগাতে পারে, তাহলে হয়তো পিয়ংইয়ং তার পারমাণবিক কর্মসূচি বাতিল করার ব্যাপারে সম্মত হতে পারে।</p> <p> </p> <p><strong>লেখক</strong> : সাংবাদিক, দক্ষিণ কোরিয়ার দ্য কোরিয়া টাইমসে কর্মরত</p> <p><strong>সূত্র</strong> : দ্য কোরিয়া টাইমস (অনলাইন সংস্করণ)</p> <p>ভাষান্তর : <strong>সাইফুর রহমান তারিক</strong></p>