<p>৩৫. মুশরিকরা বলে, ‘যদি আল্লাহ চাইতেন, তাহলে আমরা ও আমাদের পিতৃপুরুষরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করতাম না এবং তাঁর নির্দেশ ছাড়া কোনো বস্তুই আমরা নিষিদ্ধ করতাম না।’ তাদের পূর্ববর্তীরা এমনই করেছে। রাসুলের দায়িত্ব তো শুধু সুস্পষ্ট বাণী পৌঁছিয়ে দেওয়া। (সুরা : নাহল, আয়াত : ৩৫)</p> <p>তাফসির : অবিশ্বাসীরা ঈমান না আনার ব্যাপারে বিভিন্ন কুযুক্তি দেখায়। তারা ফেরেশতা পাঠানোর দাবি জানায়। তারা বলে, স্বচক্ষে আজাব না দেখে আমরা ঈমান আনব না। এ বিষয়ে বর্ণনা ছিল আগের দুই আয়াতে। আলোচ্য আয়াতে অবিশ্বাসীদের অন্য আরেকটি হঠকারিতামূলক চিন্তার অপনোদন করা হয়েছে। মুশরিকরা বলে, আল্লাহর ইচ্ছায়ই আমরা মূর্তি পূজা করি। আল্লাহ না চাইলে আমরা মূর্তি পূজা করতাম না। শুধু মুশরিকরাই নয়, বহু অবিশ্বাসীও এ ধরনের কথা বলে বেড়ায়। তাদের এসব কথা যুক্তিপূর্ণ নয়, বরং গোঁয়ার্তুমিমূলক। কেননা আল্লাহ তাআলা মানুষকে চিন্তার স্বাধীনতা দিয়েছেন। সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পরখ করার জন্য অনুভূতি শক্তি দিয়েছেন। তিনি মানুষকে বিবেক-বুদ্ধি ও চিন্তার স্বাধীনতা দিয়েছেন, যাতে মানুষ স্বাধীনভাবে সত্য পথ বেছে নিতে পারে।</p> <p>ইসলামের মৌলিক কথা হলো, আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আবার মানুষকে এই পৃথিবীতে পাঠানোর উদ্দেশ্যও হলো তাদের পরীক্ষা করা। পাশাপাশি কিয়ামতের চূড়ান্ত বিচার মেনে নেওয়ার জন্য মানুষের কাছে নিজেদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দাঁড় করানোও আল্লাহর বিশেষ ইচ্ছা। তাই আল্লাহ ইচ্ছা করলে মানুষকে শুরু থেকেই এমনভাবে সৃষ্টি করতে পারতেন যে সব মানুষ হেদায়েত, সৎপথ, ন্যায় ও সততা ছাড়া আর কিছুই চিনত না, যেভাবে তিনি ফেরেশতাদের সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু আল্লাহ এটা চাননি। তিনি চেয়েছেন যে আদমসন্তানদের মনে হেদায়েত ও গোমরাহি উভয় দিকে ধাবিত হওয়ার যোগ্যতা, ক্ষমতা ও আগ্রহ ঢুকিয়ে দিয়ে তিনি তাদের পরীক্ষা করবেন। যে ব্যক্তি হেদায়েতের দিকে ধাবিত হবে, তিনি তাকে হেদায়েত লাভে সাহায্য করবেন। আর যে ব্যক্তি গোমরাহির দিকে ধাবিত হবে, তিনি তাকে সেদিকে যাওয়ার সুযোগ করে দেবেন। এই ইচ্ছা অনুসারে জগৎ পরিচালনা করাই আল্লাহর রীতি। তবে এটা সত্য যে আল্লাহ চাইলে পৃথিবীর সব মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারেন। এ কথা কোরআনে বহু স্থানে এসেছে। কিন্তু এরই সঙ্গে তিনি তাদের পরীক্ষা করতে চেয়েছেন। তাই তিনি মানুষকে ভালো-মন্দ গ্রহণের ইচ্ছাশক্তি দিয়ে একে তাঁর নিজ ইচ্ছার অধীন করে দিয়েছেন। ফলে দুনিয়ার পরীক্ষাকেন্দ্রে তিনি কাউকে জোরপূর্বক ঈমান আনতে বাধ্য করেন না। নবীদেরও ঈমানের ব্যাপারে জবরদস্তির নির্দেশ দেওয়া হয়নি। নবী-রাসুলদের দায়িত্ব ছিল সত্যের বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। কাউকে ঈমান আনতে বাধ্য করা নবী বা নবীদের উত্তরাধিকারীদের দায়িত্ব নয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘দ্বীন গ্রহণে জোরজবরদস্তি নেই। সত্য পথ ভ্রান্ত পথ থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে...।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৬)</p> <p>গ্রন্থনা : <strong>মাওলানা কাসেম শরীফ</strong></p>