<p>১৯. তুমি কি লক্ষ করো না, আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী যথাবিধি (সত্যিই) সৃষ্টি করেছেন? তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের অস্তিত্ব বিলোপ করতে পারেন এবং এক নতুন সৃষ্টি অস্তিত্বে আনতে পারেন।</p> <p>২০. এটি আল্লাহর জন্য কঠিন কিছু নয়। (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ১৯-২০)</p> <p>তাফসির : আগের কয়েকটি আয়াতে অবিশ্বাসীদের পরিণতির বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছিল। আলোচ্য আয়াতে মানব জাতির উদ্দেশে বলা হয়েছে, কেউ যেন এ ধারণা না করে যে আকাশ, পৃথিবী ও মানুষ এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে এবং বিশ্ব-প্রকৃতি সৃষ্টির পেছনে কোনো পরিকল্পনা ছিল না! বরং বিশ্বজগতে যা কিছু আছে, সবই মহান আল্লাহর ইচ্ছা ও সুনির্দিষ্ট কল্পনায় অস্তিত্ব লাভ করেছে। এটা তাঁর অসীম ক্ষমতার প্রমাণ। তিনি চাইলে মানব প্রজাতির বিলোপ সাধন করে এর পরিবর্তে অন্য কোনো সৃষ্টি পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।</p> <p>আল্লাহ সর্বশক্তিমান। পৃথিবীর সব কিছু তাঁর মহাক্ষমতার অধীন। তিনি গোটা সৃষ্টিজগেক অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এনেছেন, এরপর প্রতিটি বস্তুর অস্তিত্বের মধ্যে এমন রহস্য লুকায়িত রেখেছেন, যা অনুভব করাও মানুষের সাধ্যাতীত। আর এটা বলা বাহুল্য, যে সত্তা প্রথমবার কোনো বস্তুকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এনেছেন, তাঁর পক্ষে আবার অস্তিত্বে আনা অত্যন্ত সহজসাধ্য।</p> <p>এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা অনেক বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হননি। আকাশের বিস্তৃতি কত দূর, তার শুরু ও শেষ কোথায়, এখনো তা রহস্যাবৃত। মাথার ওপর যে অনন্ত শূন্যমার্গ দেখা যায়, সেই অনন্ত শূন্যমার্গই কি আকাশ, না তার শেষ সীমায় আকাশের শুরু, তা সঠিকভাবে বলা কঠিন। যে আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ৮৬ হাজার মাইল, সেই গতিতে চলা শুরু করে এখনো অনেক তারার আলো পৃথিবীর বুকে এসে পৌঁছায়নি। এ তারাগুলো যেখানে অবস্থিত, পৃথিবী থেকে তার দূরত্ব এখনো পরিমাপ করা সম্ভব হয়নি।</p> <p>বিজ্ঞানীদের সর্বশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অন্তত ১০ লাখ ছায়াপথের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। এসব ছায়াপথের মধ্যে যেটি আমাদের অতি নিকটবর্তী, তার আলো পৃথিবীতে পৌঁছতে ১০ লাখ বছর সময় লাগে। অথচ সে আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ৮৬ হাজার মাইল।</p> <p>ঊর্ধ্বজগতের যে সামান্যতম জ্ঞান মানুষ লাভ করেছে, তার আয়তন এত বিশাল! এসবের যিনি সৃষ্টিকর্তা, তাঁর কুদরত ও শক্তি কী পরিমাণ, তা তো মানুষের কল্পনাতীত! এ ব্যাপারে মানুষের জ্ঞান মহাসমুদ্রের তুলনায় জলবিন্দুর চেয়ে ক্ষুদ্রতর। আর এই সৃষ্টি রাজ্য যে স্রষ্টা অস্তিত্বদান করেছেন, তাঁর পক্ষে নতুন এক জগৎ সৃষ্টি করা কি অসম্ভব? একজন ঘড়ি প্রস্তুতকারকের কথাই ধরা যাক। যে ব্যক্তি শত শত ঘড়ি তৈরি করছে, তার চোখের সামনে একটি ঘড়ি চূর্ণ-বিচূর্ণ করে যদি কেউ বলে—এ ঘড়ি আবার কিছুতেই তৈরি করা যাবে না, তাহলে এ ব্যক্তিকে সবাই নির্বোধ বলবে। একইভাবে যে সর্বশক্তিমান স্রষ্টা প্রথমবার মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, পুনর্বার তিনি তা পারবেন না—এ চিন্তাটাই অদ্ভুত ও হাস্যকর।</p> <p> </p> <p>গ্রন্থনা : <strong>মাওলানা কাসেম শরীফ</strong></p>