<p>১২২. (প্রত্যেক দলের একটি অংশ ধর্মীয় জ্ঞানচর্চায় বের হওয়া উচিত) যাতে তারা স্বজাতিকে সতর্ক করতে পারে, যখন তারা তাদের কাছে ফিরে আসবে। আশা করা যায়, এতে তারা সতর্ক হবে। [সুরা তাওবা, আয়াত : ১২২ (শেষাংশ)]</p> <p>তাফসির : বিভিন্ন কারণে সব সাহাবির একসঙ্গে মদিনায় থাকা সম্ভব ছিল না। মহানবী (সা.) মদিনায় থাকাবস্থায় উপস্থিত সাহাবিরা তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় শিখে নিতেন। আর যাঁরা মদিনার বাইরে থাকতেন, তাঁরা উপস্থিত সাহাবিদের থেকে শিখে নিতেন। এভাবে দ্বীনি শিক্ষা নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকত। এই আয়াতের প্রথম অংশে প্রত্যেক দলের একটি অংশ ধর্মীয় জ্ঞানচর্চায় বের হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। আয়াতের এই অংশে শিক্ষার উদ্দেশ্য ও শিক্ষাপ্রাপ্তদের দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, দ্বীন প্রচার করা, মানুষের কাছে ইসলামের সুমহান বার্তা পৌঁছে দেওয়া ওলামায়ে কেরামের দায়িত্ব। মানুষকে হালাল-হারামের বিধান বলে দেওয়া, জাহান্নামের ভয় দেখানো ও জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া আলেমদের কর্তব্য। আয়াতের শেষে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে আলেমরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করলে আশা করা যায় মানুষ সতর্ক হবে, সঠিক পথে চলবে।</p> <p>ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব</p> <p>কোনো জাতির আর্থসামাজিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হলো শিক্ষা। মানুষের ওপর আল্লাহর যত নিয়ামত ও অনুগ্রহ রয়েছে, শিক্ষার নিয়ামতকে পবিত্র কোরআনে সবার ওপরে স্থান দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘দয়াময় আল্লাহ, তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে। তিনিই তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে।’ (সুরা আর রাহমান : ১-৪)</p> <p>বিশ্বমানবতার মুক্তির উদ্দেশ্যে উচ্চারিত ইসলাম ধর্মের প্রথম আহ্বান ছিল এমন : ‘পড়ো, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিণ্ড থেকে। পড়ো, তোমার প্রতিপালক মহিমান্বিত; যিনি কলমের সাহায্যে জ্ঞান দান করেছেন। মানুষকে শিখিয়েছেন, যা সে জানত না।’ (সুরা : আলাক, আয়াত : ১-৫)</p> <p>ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে অসংখ্য আয়াত ও হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এক আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং যাদের জ্ঞান (ইলম) দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়ে দেন।’ (সুরা মুজাদালা : ১১)</p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে কোরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।’ (সহিহ বুখারি : হা. ৫০২৭) অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।’ (মুসলিম শরিফ : হা. ২৬৯৯) অন্য হাদিসে এসেছে : ‘আল্লাহ যাকে প্রভূত কল্যাণ দিতে চান, তাকে দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করেন।’ (সহিহ বুখারি : হা. ৭১) প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞানের পাশাপাশি পার্থিব কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও কাম্য। হালাল পন্থায় জীবিকা উপার্জন, মাতা-পিতা ও আত্মীয়স্বজনের  খেদমত, পরিবার-পরিজনের হক আদায়, সমাজসেবা ইত্যাদির উদ্দেশ্যে জাগতিক জ্ঞান অর্জন করলে এতেও সওয়াব রয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘হালাল রিজিক সন্ধান সব মুসলমানের ওপর ফরজ।’ (মুজামুল আওসাত : হা. ৮৬১০)</p> <p>গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ</p>