ছবি : লুৎফর রহমান
ক্রীড়া প্রতিবেদক : বছর দুয়েক আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে দেশে ফেরার পর মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদ উল্লাহকে যেমন বিধ্বস্ত চেহারায় দেখা গিয়েছিল, কালকের রুবেল হোসেন যেন তারই কার্বন কপি। আগের রাতে ভারতের বিপক্ষে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালের অন্তিম মুহূর্তে এক ওভারে ২২ রান দেওয়ার ঘটনায় পরের দিন দুপুরেও বজ্রাহতের মতো দেখাল এই ফাস্ট বোলারকে। সংবাদমাধ্যম তাঁকে ছেকে ধরলেও কথা বললেন না কোনো।
এ রকম পারফরম্যান্সের বেদনাটা মুশফিকুর রহিমের চেয়ে ভালো আর কে জানেন! ২০১৬-র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে ভারতের বিপক্ষে জয়ের চৌকাঠে দলকে পৌঁছে দিয়েও হারের বেদনায় মুষড়ে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। তাই রুবেলের মনস্তত্ত্বটা সবচেয়ে ভালো ধরতে পারলেন মুশফিকই। কিংবা শেষ ওভারে সৌম্য সরকারের যে অভিজ্ঞতা হলো, তাতে ওই তরুণের ভেতরের দহনটাও ধরতে পারলেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। পারলেন বলেই এই বোলারদের পাশে দাঁড়ালেন।
১৯তম ওভারে রুবেলের ২২ রান দেওয়া কিংবা শেষ বলে সৌম্যর ছক্কায় শিরোপা হারানোর ঘটনায় এখন বরং শিক্ষাই নিতে বলছেন মুশফিক, ‘খারাপ লাগাই তো স্বাভাবিক। তবে আমি মনে করি না যে শুধু একজনের জন্যই আমরা হেরেছি। বোলাররা মিলে যদি ১ কিংবা ২টা রান কম দিতে পারত কিংবা আমরা ব্যাটসম্যানরা যদি আরো ১০টা রান বেশি করতে পারতাম। এটা দলীয় খেলা, এখানে একজনের ব্যর্থতা মানে সবারই ব্যর্থতা। এই ম্যাচ (ফাইনাল) থেকে আমাদের শিক্ষা ছাড়া অন্য কিছু নেওয়ার নেই। পরবর্তী সময়ে এবারের শিক্ষাটা কাজে লাগাতে হবে। সৌম্যর জন্য এটা প্রথমবার। পরে আবার যখন সুযোগ আসবে, আশা করি তখন এর চেয়ে আরো ভালো করবে সে।’
তাই বলে দুঃখটা ভুলেও যেতে বলছেন না মুশফিক। গতকাল দুপুরে দেশে ফেরার পর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলছিলেন, ‘আমি মনে করি এই হারটা শিক্ষণীয় বিষয়। একটা কথাই বলব, আমাদের সুযোগ ছিল। সুযোগটা আমরা হাতছাড়াও করেছি। ভারতকে হারানোর সুযোগ বারবার আসে না। শেষ দুটি সুযোগই মিস করলাম (বেঙ্গালুরুর পর প্রেমাদাসায়ও)। এই কষ্টটা আমরা মনে রাখব। এ জন্যই যে এখান থেকে যেন আমরা আরো সামনে এগিয়ে যেতে পারি।’ এগিয়ে যাওয়ার পথে ফাইনালে মার খাওয়া বোলারদের সামনে এমন উদাহরণও তুলে ধরলেন, যা তাঁদের মনে করাবে যে এমন অভিজ্ঞতা শুধু তাঁদেরই হয়নি।
সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেই যেমন জেতার জন্য শেষ ওভারে ২৪ রান দরকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। বেন স্টোকসের করা প্রথম চার বলেই চার ছক্কা মেরে দিয়ে ইংল্যান্ডের হাতে চলে যাওয়া শিরোপাটা ছিনিয়ে নেন কার্লোস ব্রাথওয়েট। মুশফিক অবশ্য আরো পেছনে ফিরে গেলেন। নিজেরা যেহেতু সদ্য প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে খেলে এসেছেন, উদাহরণ দিলেন এই মাঠেরই, ‘অনেক বড় বড় বোলারই এমন পরিস্থিতিতে স্নায়ুচাপ সামলে উঠতে পারে না। এই মাঠেই কিন্তু (লাসিথ) মালিঙ্গাকে এক ওভারে মেরে ম্যাচ বের করে নিয়েছিল (মারলন) স্যামুয়েলস। মুস্তাফিজ এক ওভারে মেডেন উইকেট নেবে, এটা কেউই বিশ্বাস করেনি। আবার রুবেলের ওভারে এত রান হবে, সেটাও কেউ আগে থেকে ভাবতে পারেনি। ক্রিকেটে এ রকম হতেই পারে। এর থেকে শিক্ষা নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
এগিয়ে যাওয়ার পথে আবার শিরোপার কাছে গিয়ে ফেরার ব্যথা যেমন আছে, তেমনি শ্রীলঙ্কা থেকে অন্য এক আনন্দ নিয়েও ফিরেছেন মুশফিকরা, ‘খারাপ তো লাগবেই, এত কাছে এসেও আমরা ট্রফিটা পেলাম না। তবে ভালোলাগাও আছে। যেহেতু শ্রীলঙ্কা দেশের মাটিতে আমাদের হারিয়ে গেছে, আমাদের মধ্যে অন্য রকম একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা যেন ওদের মাটিতে ওদেরকে হারাতে পারি। সেটি করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’ তাঁর ভালোলাগায় উচ্ছ্বাস একটু বেশিই থাকল কারণ, ‘এই কয়টি দিন আমরা যেভাবে ক্রিকেট খেলেছি এবং ম্যাচ জিতেছি, পুরো বাংলাদেশ দল কৃতিত্ব পাওয়ার যোগ্য। হোম সিরিজে টি-টোয়েন্টিতে আমরা যেভাবে হেরেছিলাম শ্রীলঙ্কার কাছে, এরপর ওদের মাটিতে এভাবে জেতা অনেক বড় প্রাপ্তি। পুরো টি-টোয়েন্টি সিরিজে আমরা ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলতে পেরেছি। যেটা কিনা আমরা এর আগে করতে পারিনি।’
এই টুর্নামেন্ট খেলতে দেশ ছাড়ার আগে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহও বলে গিয়েছিলেন যে এই ফরম্যাটে নিজেদের সামর্থ্য নিয়ে একটি বার্তা বিশ্বকে দেওয়ার আছে। সেটিই দিয়ে আসতে পারার তুষ্টির কথা শোনা গেল দলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া নির্বাচক হাবিবুল বাশারের কণ্ঠেও, ‘আমার মনে হয় আমরা এখন খেলাটা বুঝতে পারছি। খেলাটা যেভাবে খেলা দরকার, সেভাবেই খেলতে পারছি। আপনারা সবাই জানেন দেশের মাটিতে সবশেষ সিরিজটি আমাদের ভালো যায়নি। সেই জায়গা থেকে দেশের বাইরে গিয়ে ফিরে আসা নিশ্চয়ই সহজ ছিল না। এটাই প্রমাণ করে, মানসিকভাবে ছেলেরা এখন অনেক শক্ত। জেতার ইচ্ছাটা এখন ওদের অনেক বেশি।’
মন্তব্য
আলোচিত সংবাদ
ব্যাখ্যা ছাড়া সর্বসাধারণের পক্ষে কোরআন বোঝা সম্ভব নয়
আমাদের জাহিদ গুগলের ম্যানেজার
বিশ্বের যেসব দেশ ভ্রমণে ভিসা লাগে না...
সিগারেট তৈরির একটি মূল উপাদান ইঁদুরের বিষ্ঠা!
সারাদিন বিছানায় শুয়ে অন্যের রক্ত যোগাড় করেই দিন কাটে মিমের
সীমান্তে সেনা, অস্ত্রের মহড়া মিয়ানমারের