<p><strong>ক্রীড়া প্রতিবেদক : </strong>মেহেদী হাসান মিরাজ অদ্বিতীয়। বাংলাদেশের স্পিন বোলিং অর্কেস্ট্রায় সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলামও সঙ্গত দিয়েছেন দুর্দান্ত। তবে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণের অনুষঙ্গ ব্যাটিংয়ে যখনই চোখ রাখছেন মুশফিকুর রহিম, ভেসে উঠছে একজনের মুখই, ‘এই উইকেটে ব্যাটিং করা খুব কঠিন। কন্ডিশন বিবেচনায় অসাধারণ ব্যাটিং করেছে তামিম। চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংস, এখানে সেঞ্চুরি... নিজের ভালো ফর্মটাকে এ সিরিজেও ধরে রেখেছে ও।’</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2016/print-2016/October/31-10-2016/kalerkantho-31-10-16-SP-11.jpg" style="float:left; height:123px; margin:8px; width:133px" />ব্যাটসম্যানদের জন্য পুঁতে রাখা মাইনফিল্ডে চার ইনিংসে একটি করে সেঞ্চুরি আর ফিফটিতে ২৩১ রান করেছেন তামিম। দুই টেস্টের সিরিজে দুই দলের আট ইনিংসের দৈর্ঘ্যই যেখানে পাঁচবার নেমে এসেছে আড়াই শর নিচে। অধিনায়কের প্রশংসা তো তাঁর প্রাপ্যই। মেহেদী হাসান যদি সিরিজের ঘোষিত সেরা হন, তাহলে জেনে নিন দলের অন্দরমহলে প্রশংসায় ভাসছেন তামিম ইকবালও। ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমের সামনে যে তামিমকে পাওয়া গেল, তাঁর মনেও তখন বইছে আনন্দধারা, ‘কেমন যে লাগছে ঠিক বলে বোঝাতে পারব না। এটা কি আমাদের স্মরণীয় সাফল্যের স্বীকৃতি পাবে?’</p> <p>‘নাম্বার টু’ হেয়ারকাট আর ট্রিম করা ঘন দাড়িতে বয়সের চেয়েও ভারিক্কি মনে হয় তামিম ইকবালকে। গতকাল আবার শেষ বেলায় নেতৃত্বও দিয়েছেন দলকে। এমনিতে টেস্টে তিনি মুশফিকুর রহিমের ডেপুটি। কিন্তু চা বিরতির সময় দলীয় সিদ্ধান্তে তামিমের ওপর বর্তায় ক্যাপ্টেন্সি। ‘রিভিউ’ ডাকার আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন মুশফিকই। তবে বোলিং পরিবর্তন এবং ফিল্ড প্লেসিংয়ে তৎপরতা দেখে বোঝা যাচ্ছিল অধিনায়কত্ব করছেন তামিম, তাঁর ‘উপদেষ্টা’ সাকিব আল হাসান। দলের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রমতে, নিয়মিত অধিনায়ককে চাপে পড়ে যেতে দেখেই এ আপৎকালীন ব্যবস্থা। চা বিরতির পর প্রথম বলেই সাফল্য এবং এর ধারাবাহিকতায় অসাধারণ জয়ও নিশ্চিত পরের ২২.৩ ওভারে। আশ্চর্য, যিনি নিজেই নিজেকে দক্ষ অধিনায়কের সার্টিফিকেট দেন না, যিনি এবারের বিপিএলে চট্টগ্রাম ভাইকিংসকে নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে দোটানায় ছিলেন, সেই তামিমই কিনা...! তিনি হাসেন। সে হাসির পুরোটাই অবশ্য আনন্দের, হয়তো ঘণ্টা দুয়েকের অধিনায়কত্বে অভাবিত সাফল্য পাওয়ার গর্বও মিশে।</p> <p>তবে তাঁর সবচেয়ে তৃপ্তির জায়গাটা ব্যাটিংয়ে, ‘উইকেটে বল কখন কী করবে, কেউ জানে না। ব্যাটসম্যানের সেট হওয়া বলে কিছু ছিল না। সেখানে ভালো ব্যাটিং করেছি, হয়তো আরো বেশি রান করলে আরো ভালো লাগত। দলের সাফল্যে কন্ট্রিবিউট করা সব সময়ই আনন্দের।’ অবদানের কথা বলতে গিয়ে একে একে বাকিদেরও টেনে আনলেন তামিম, ‘আজকে সাব্বিরের ১৫ রানের ইনিংসটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ইমরুল পুরো সিরিজে ভালো ব্যাটিং করেছে, রিয়াদ ভাই (মাহমুদ উল্লাহ), মুশফিক, সাকিব, মমিনুল... প্রত্যেকেরই অবদান আছে।’</p> <p>ব্যাটসম্যানদের জীবন কঠিন হলেও আপাতত এমন উইকেটকেই ঘরের মাঠে সাফল্যের চাবিকাঠি মনে করেন তামিম, ‘আপনারা যেটাকে আদর্শ টেস্ট উইকেট মনে করেন, সেটা হয়েছে কি না জানি না, তবে ইংল্যান্ডের মতো দল এলে আবারও এমন উইকেট চাইব আমরা। প্রতিপক্ষ বুঝে উইকেট চাই। হোম অ্যাডভান্টেজ তো সব দলই নেয়। আমরা নেব না কেন?’ এমন উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং স্ট্র্যাটেজিরও সমর্থক তিনি, ‘আমরা তো দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ অত বেশি খেলি না। তাই কঠিন উইকেটে সারভাইভ করার অভ্যাসটা আমাদের নেই। দ্বিতীয় ইনিংসে আমি খুব আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছি। তাই বলে বাজে শট খেলিনি। মারার বল পেলে ছাড়িনি আর কি।’</p> <p>তামিম যখন ভালো মুডে, তখন এক-দুটি মজার গল্প তো থাকবেই। এর ব্যত্যয় ঘটেনি ইংল্যান্ডকে হারানোর পরও, ‘সবই বাবার দোয়া বুঝলেন!’ এই ‘বাবা’ মাশরাফি বিন মর্তুজা। প্রতি সিরিজের আগে নিয়ম করে ‘আশীর্বাদ’ করেন বাংলাদেশের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। ইংল্যান্ড সিরিজের আগেও তামিমকে বলেছিলেন, ‘যা, তোর একটা সেঞ্চুরি হবে!’ ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেটা হয়ে যাওয়ার পর নাকি দ্বিতীয় ইনিংসের আগে ‘বাবা’র দোয়াপ্রার্থী হয়েছিলেন সাকিব আল হাসানও!</p> <p>গল্পটা তামিমের কাছ থেকে শোনা। আর মাশরাফি মোটেও ভবিষ্যত্দ্রষ্টা নন। তিনি নিজে বলেন, ‘একজন খেলোয়াড়ের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখলে কিছুটা অনুমান করা যায়।’ তামিম এখন যে ফর্মে আছেন তাতে প্রতি সিরিজে অন্তত একটি সেঞ্চুরির আশীর্বাদ দেওয়ার জন্য ব্ল্যাক ম্যাজিক শেখার দরকার নেই মাশরাফি, কারোরই!</p>