<p>স্পেনের কবি, কথাসাহিত্যিক ও প্রবন্ধকার কামিলো হোসে সেলা ১৯৮৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। ‘তাঁর নিয়ন্ত্রিত সমবেদনার মিশেলে মানুষের নাজুক অবস্থার চ্যালেঞ্জিং দর্শন তৈরি করতে সক্ষম পরিপক্ব ও সংহত গদ্যের জন্য’ তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রজন্ম ’৩৬-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি।   </p> <p>কামিলো হোসে সেলার জন্ম ১৯১৬ সালে গ্যালিসিয়ার ইরিয়া ফ্লেভিয়াতে। ১৯২৫ সালে পরিবারের সঙ্গে মাদ্রিদে বসবাস শুরু করেন। ১৯৩১ সালে তাঁর যক্ষ্মা রোগ ধরা পড়ে। এ সময় যেহেতু বিশ্রাম নিতে বাধ্য হন, তাই লেখালেখি ও পড়াশোনা করার অঢেল সুযোগ পান তিনি। আরোগ্য লাভের সময় থেকে শুরু করেন ব্যাপক পড়াশোনা। এ সময় তিনি বিশেষ করে দার্শনিক হোসে ওর্তেগা ই গাসেত এবং নাট্যকার ও ইতিহাসবিদ আন্তনিও দে সোলিস ই রিবাদেরায়েরার লেখা বেশি পড়েন। ১৯৩৬ সালে স্পেনের গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় বিশ বছরের সেলা তাঁর প্রথম বই লিখে শেষ করেন। ‘ট্রিডিং দ্য ডিউবিয়াস ডেলাইট’ ছিল তাঁর কবিতার বই। ১৯৪২ সালে যুদ্ধ-পরবর্তী স্পেনের হতাশা আর বিশৃঙ্খলার জীবন নিয়ে লেখেন প্রথম উপন্যাস ‘দ্য ফ্যামিলি অব পাসকুয়াল দুয়ার্তে’। শাসকচক্রের দৃষ্টি পড়ার আগেই তাঁর এ উপন্যাস পাঠক ও সমালোচকদের দৃষ্টি কাড়ে। তাঁর এ উপন্যাসকে এখনো স্পেনের যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের প্রথম মাইলফলক মনে করা হয়। ওই সময় লেখা তাঁর মেধার স্বাক্ষর বহন করে এমন আরো রচনার মধ্যে আছে ‘দোজ পাসিং ক্লাউডস’, ‘দ্য গ্যালিসিয়ান অ্যান্ড হিজ ক্রু’, ‘রেস্ট হাউস’, ‘নিউ ওয়ান্ডারিংস অ্যান্ড মিসফরচুনস অব লাজারিলো দে তোরমেস’ এবং তাঁর প্রথম ভ্রমণবিষয়ক বই ‘জার্নি টু দি আলকারিয়া’। ১৯৫১ সালটা তাঁর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বছর ছিল। এ বছরই তিনি প্রকাশ করেন তাঁর মাস্টারপিস ‘দ্য হাইভ’। এ উপন্যাস তিনি স্পেনে প্রকাশ করতে পারেননি। প্রকাশ করেছিলেন আর্জেটিনা থেকে। এ উপন্যাসে রয়েছে তিন শর বেশি চরিত্র। স্পেনীয় বাস্তবতার শৈলীতে তাঁর এই উপন্যাসে সারভান্তেস ও পেরেজ গালদোসের প্রভাব লক্ষ করা যায়। এ ছাড়া সার্ত্রে, জয়েসসহ সমসাময়িক ফরাসি ও ইংরেজি ভাষার লেখকদেরও প্রভাব আছে এই উপন্যাসে। পরিহাসের বিষয় হলো, হোসে সেলা ফ্রাঙ্কোর সময় নিজে সেন্সরের কাজে জড়িত ছিলেন। কিন্তু নিজের লেখাও সহকর্মীদের কাছে আটকে যায় বলেই ‘দ্য হাইভ’ দেশের বাইরে থেকে প্রকাশ করতে বাধ্য হন। </p> <p>দেশের অস্থির অবস্থায় তিনি মাঝেমধ্যেই বিপদের মুখে পড়েছেন। দেশের অফিশিয়াল সেন্সর কর্তারা তাঁর প্রভাবশালী ও মেধাবী লেখাকে ইচ্ছামতো চালাতে ব্যর্থ হয়ে সেলার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাঁকে প্রেস অ্যাসোসিয়েশন থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার মানে তাঁর নাম আর ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করা যাবে না। তবে এ রকম সময়েও তিনি আরো লেখেন। এ সময় লেখা তাঁর উপন্যাস হলো ‘মিসেস কালডেল স্পিকস টু হার সান’ ও ‘দ্য ব্লন্ড’। এভাবে কিছুদিন লেখা চালিয়ে যাওয়ার পর তিনি মনে করেন, এবার মাদ্রিদ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়া উচিত। গার্সিয়া লোরকা ও অন্যান্য সাহিত্যিকের দুর্ভাগ্যের অবস্থা বিবেচনা করে তিনি সপরিবারে মেজরকা দ্বীপে চলে যান। ‘দ্য রোজ’, ‘স্লাইড ফর দ্য হাংরি’, সিক্রেট ডিকশনারি’ তখনকার লেখা।</p> <p>উনিশ শ ষাটের দশকের শেষের দিকে তাঁর লেখা আগের চেয়ে বেশি নিরীক্ষাধর্মী হয়ে ওঠে। এ রকম নিরীক্ষাপ্রবণতা দেখা যায় ‘সান কামিলো ১৯৩৬’ উপন্যাসে। এরপর ১৯৮৮ সালে লেখেন ‘ক্রাইস্ট ভারসাস আরিজোনা’। এখানে এক শ পৃষ্ঠার বেশি বর্ণনা টেনে নিয়ে যান মাত্র একটি বাক্যে।</p> <p>তাঁকে নিয়ে বিতর্কের অবতারণাও হয়েছে তাঁর কিছু আচরণের কারণে। নিজের উপন্যাস যে স্পেনে নিষিদ্ধ হলো, সেখানকার শাসকের প্রতি তিনি অনুগত থেকেছেন। শোনা যায়, ফ্রাঙ্কোর আমলে তিনি স্পেনের গোপন পুলিশের কাছে তথ্য পাঠানোর কাজও করেছেন। তাঁর কারণে কোনো কোনো বুদ্ধিজীবীকেও সন্দেহের চোখে দেখা হয়েছে। আরেকটি বিতর্কের প্রসঙ্গ হলো, তিনি সার্ভান্তেস পুরস্কারের আজীবন সম্মাননার প্রতি কটাক্ষ করে নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। তবে ১৯৯৫ সালে তাঁকে ওই পুরস্কার দেওয়া হলে তিনি বিনা বাক্যে গ্রহণ করেন। তাঁর সম্পর্কে বিতর্ক থাকলেও লেখক হিসেবে দায়বদ্ধতার কথা ভোলেননি তিনি। দ্য প্যারিস রিভিউ পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে লেখকের দায়বদ্ধতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘লেখকের নিজের কাছে, তাঁর বিবেকের কাছে দায়বদ্ধতা থাকবেই। নিজের বিবেক সম্পর্কে অবশ্যই তাঁর সচেতনতা থাকতে হবে।’ </p> <p> </p> <p><strong>দুলাল আল মনসুর</strong></p>
