<p>ম্যাক্সওয়েলের চতুর্থ স্টুডিও অ্যালবাম ‘ব্ল্যাক সামারস নাইট’। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে কলম্বিয়া রেকর্ডস থেকে প্রকাশ পায়। ইউএস বিলবোর্ড টু হান্ড্রেডের তালিকায় অ্যালবামটি এক নম্বর জায়গা দখল করে। প্রথম সপ্তাহেই এটি তিন লাখ ১৬ হাজার কপি বিক্রি হয়। আলোচকরাও অ্যালবামটির উচ্চ প্রশংসা করেন এবং ম্যাক্সওয়েল ৫২তম গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডে দুটি পুরস্কার জিতে নেন। সারা যুক্তরাষ্ট্রে অ্যালবামটির মোট বিক্রি এক মিলিয়ন কপি ছাড়ায়। তখন নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখে—ম্যাক্সওয়েলের অ্যালবামটি সাম্প্রতিক সময়ে একটি অভিনব সংযোজন। গানগুলো ভদ্র, কিন্তু শান্ত নয়।</p> <p>ওইটিরই সিক্যুয়েল প্রকাশিত হলো গত ১ জুলাই। নাম সেই আগের মতোই—‘ব্ল্যাক সামারস নাইট’। ম্যাক্সওয়েল সোল মিউজিক করেন। এটি ১৯৫০ এবং ষাটের দশকের একটি জনপ্রিয় সংগীত ধারা।  যুক্তরাষ্ট্রে সোল মিউজিক ছিল জনপ্রিয় ধারা। আফ্রিকান-আমেরিকান গসপেল, ব্লুজ আর জ্যাজের সম্মিলনে তৈরি এটি। নিউ অরলিন্স সোল, শিকাগো সোল, ফিলাডেলফিয়া সোল ইত্যাদি ধারাটির অনেক ঘরানাও আছে। সলোমন বুরকে ছিলেন জনপ্রিয় সোল শিল্পী।</p> <p>ম্যাক্সওয়েলের ঘরানার নাম নিও সোল। এ ঘরানা তৈরিতে শিল্পী ডি এঙ্গেলো এবং এরিকা বাদুর সঙ্গে তিনিও কাজ করেন। সেটি নব্বইয়ের শেষ দিকের কথা। ডি এঙ্গেলো ১৯৯৫ সালে প্রকাশ করেন ‘ব্রাউন সুগার’ আর বাদুর ‘বাদুইজম’ আসে ১৯৯৭ সালে।</p> <p>লেখকরা ম্যাক্সওয়েলের আরবান হ্যাং সুইটের গানগুলোকেও নিও সোলের সূচনাপর্বের বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। ১৯৯৭ সালে এন্টারটেইনমেন্ট উইকলিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে ম্যাক্সওয়েল বলেছিলেন, ‘একেবারে নতুন বলে কিছু নেই, সবই অতীত প্রভাবিত বা অতীত থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে তৈরি। আপনি যেমন কোনো শিশুর মধ্যে তাঁর পিতা-মাতাকে দেখতে পান।’ কাছাকাছি সময়ে ওয়াশিংটন পোস্ট ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে লিখেছিল, ‘ওল্ড স্কুল অব সোলের একজন গ্র্যাজুয়েট তিনি। তাঁর গানে শ্রোতারা অনুভব, আশা এবং অর্থ খুঁজে পায়।’</p> <p>গাইয়ে, লেখক এবং সংগীতকার ম্যাক্সওয়েলের পুরো নাম জেরাল্ড ম্যাক্সওয়েল রিভেরা। জন্ম ১৯৭৩ সালে, নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে।  মা হাইতির আর বাবা পুয়ের্তো রিকোর। মাত্র তিন বছর বয়সের সময়। প্লেন দুর্ঘটনায় বাবা মারা যাওয়ার ঘটনা ম্যাক্সওয়েলকে ধর্মের প্রতি অনুরাগী করে তোলে। ছোটবেলায় তিনি ব্যাপ্টিস্ট চার্চে গান করতেন। ব্রুকলিনের এক বন্ধুর কাছ থেকে একটি সাধারণ ক্যাসিও কি-বোর্ড উপহার পেয়েছিলেন। গান বাঁধতে শুরু করেন ১৭ বছর বয়সে। সোল গানের প্যাট্রিস রুশেন এবং রোজ রয়েস ব্যান্ডের গান শুনতেন সেই সময়। তিনি বলেন, আশির দশকের গানগুলোয় জীবনের সত্যিকারের অনুভব খুঁজে পাওয়া যেত।</p> <p>স্কুলের ম্যাক্সওয়েল ছিল লাজুক। সহপাঠীরা তাই তাঁকে খেপাত। কিন্তু গানে মনোযোগ হারাননি কখনোই। পোশাকে বোহেমিয়ানদের বেশ নিয়েছিলেন। চুল লম্বা রেখেছিলেন। ১৯৯১ সালে একটি ক্লাবে গান গাওয়ার সুযোগ পান। কাছাকাছি সময়ে একটি স্টুডিওতে কাজ করেছেন। সেখানে নিজের একটি ডেমো টেপ রেকর্ড করেন। বন্ধুদের সেই রেকর্ড শোনান। ম্যানহাটনের নাইট ক্লাব নেলে তিনি প্রথম কনসার্ট করেন। পরের দুই বছর তিন শর বেশি গান লেখেন এবং রেকর্ড করেন। নিউ ইয়র্কের ছোট ছোট ভেন্যুতে সেগুলো শুনিয়ে বেড়িয়েছেন। ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ভাইব সাময়িকীর একজন লেখক তাঁকে দ্য নেক্সট প্রিন্স আখ্যা দেন। ১৯৯৪ সালে কলম্বিয়া রেকর্ডসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। তারপর ‘ম্যাক্সওয়েলস আরবান হ্যাং সুইট’-এর জন্য কাজ করতে থাকেন। অ্যালবামটি প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সাড়া পাননি। তবে ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে অ্যালবামটি টপ আর অ্যান্ড বি/হিপ-হপ অ্যালবাম চার্টের ৩৮ নম্বরে জায়গা করে নেয়। জায়গা পায় বিলবোর্ড টু হান্ড্রেডেও। আটাত্তর সপ্তাহ পর্যন্ত ছিল টু হান্ড্রেডে। রোলিং স্টোন, ইউএসএ টুডে এবং টাইম সাময়িকী অ্যালবামটিকে বছর সেরা ১০টি অ্যালবামের একটি ঘোষণা করে।  তারপর ১৯৯৭ সালে আনেন এমটিভি আনপ্লাগড, এমব্রায়া (১৯৯৮), নাউ (২০০১), ব্ল্যাক সামারস নাইট (২০০৯ এবং ২০১৬)।</p>