<p>রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে সারা দিন ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করে রাব্বি (১৩)। তার আয়ের টাকায়ই পরিবার চলে। দিন শেষে সে চলে যায় রানীনগর নৈশ উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।</p> <p>স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মা যখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন মারা যায় রাব্বির বাবা। জন্মের পর মা-ই ছিল একমাত্র অবলম্বন। রাজশাহী নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন মতিহার থানার ফুলতলা পদ্মাপাড় এলাকায় ছোট্ট একটি কক্ষে ভাড়ায় থাকেন মা-ছেলে। প্রতি মাসে এক হাজার ২০০ টাকা করে ভাড়া দিতে হয়। সঙ্গে ২০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল। খাওয়া-পড়া, পড়ালেখা ও সংসারের আনুষঙ্গিক খরচসহ সব কিছুই চলে রাব্বির উপার্জনে। এরপর মায়ের আবার কিডনিতে পাথর। ওষুধপত্রের খরচও বেশ। একদিন বাদাম বিক্রি করতে না পারলে শুধু রাব্বি নয়, মাকেও না খেয়ে থাকতে হয়। রাব্বির সারা দিনের আয় ২০০-২৫০ টাকা। এই টাকাতে কোনো রকম জীবন পার করছেন তারা।</p> <p>প্রতিবেশীরা জানায়, সকাল হলে চুলায় বাদাম ভেজে দেন রাব্বির মা। অন্য শিশুরা যখন ব্যাগ কাঁধে স্কুলে যায় তখন রাব্বিকে বাদামের ঝাঁকা নিয়ে ছুটতে হয় ক্যাম্পাসে। দুপুরে খাবার হাতে মা ছুটে আসেন ক্যাম্পাসে। একসঙ্গে খাবার ভাগ করে নেন তাঁরা। খাওয়া শেষে আঁচল দিয়ে ছেলের মুখ মুছে দেন মা।</p> <p>মা রাবেয়া খাতুন জানান, সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় রাব্বির জীবনের আরেক গল্প। বাড়িতে ফিরেই হাত-মুখ ধুয়ে স্কুলের পড়া তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এরপর বই-খাতা হাতে ছুটে যায় স্কুলে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে স্কুল। এই স্কুলেই প্রথম শ্রেণি থেকে পড়ালেখা তার। স্কুলে ভর্তির পর থেকে প্রতিবারই ক্লাসের পরীক্ষায় প্রথম সে।</p> <p>এত সংগ্রামের মাঝেও থেমে নেই রাব্বির পথচলা। মায়ের মুখে হাসি ফোটানো আর নিজেকে অনেক বড় মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে অদম্য প্রত্যয়ী সে। রাব্বি জানায়, জীবনে বড় হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায় সে। তার মতো আরো যারা সুবিধাবঞ্চিত শিশু রয়েছে তাদের জন্য কিছু একটা করবে এমন আকাঙ্ক্ষার স্বপ্ন তার।</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/Print- 2018/11 November/06-11-2018/Kalerkantho_18-11-06-40.jpg" style="height:384px; width:665px" /></p> <p><em>রাজশাহীর রানীনগর নৈশ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির কক্ষে গত শনিবার রাতে পড়ছিল রাব্বি (বাঁয়ে)। ছবি : কালের কণ্ঠ</em></p> <p>সন্তানের কথা বলতে গিয়ে আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন মা। অশ্রুসিক্ত নয়নে রাবেয়া বলেন, ‘এই ব্যাটাটা বাপ মইরি যাওয়ার পর থেইকি সংসারের হাল ধইরিছে। এই বয়সির ছাওয়ালেরা সারা দিন কত দৌড়ি বেড়ায়, আর আমার রাব্বিক বাদাম লিয়া ছুটতি হয়। ক্যাম্পাসের মামারা (শিক্ষার্থীরা) ওক অনেক আদর করে। আমি হতভাগা মা ওর জন্যি কিছুই করতি পারি না। আমি দুয়া করি, আমার রাব্বি জানি জীবনে মেলা বড় অয়।’</p> <p>রানীনগর নৈশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামগুলোতে শিশুদের শিক্ষার জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা থাকলেও মহানগরীতে সেই সুবিধা নেই। রাব্বির মতো আরো অনেক সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আমরা এই স্কুলে পড়াই। অনেকেই আবার বিভিন্ন সমস্যার কারণে ঝরে পড়ে।’ তিনি আরো বলেন, ‘রাব্বি পড়াশোনায় অনেক ভালো। তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।’</p> <p>রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোসা. লাইলী বেগম বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে রাব্বি ও তার মাকে চিনি। খুব কষ্ট করে তাঁরা জীবন যাপন করেন। আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব। এ ছাড়াও ওয়ার্ডের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করব।’</p>