<p>কাল বুধবার এক বন্ধুর ফ্লাইট। সে বিদেশ গিয়ে অন্য দুই বন্ধুকে নিয়ে যাবে। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার পেন্নাই গ্রামের এই তিন বন্ধু গত রবিবার সন্ধ্যায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। এই তিনজনের নামই হৃদয়। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তিন বন্ধুর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।</p> <p>নিহতরা হলো পেন্নাই গ্রামের মমিন ড্রাইভারের ছেলে মো. হৃদয় (২০) ওরফে বড় হৃদয়, শাহিন মিয়ার ছেলে মো. হৃদয় (১৯) ওরফে মেজ হৃদয় এবং ফকিরবাড়ির আমির হোসেনের ছেলে মো. হৃদয় (১৮) ওরফে ছোট হৃদয়। ছোট ও মেজ মিলে বড় হৃদয়ের ব্যবসায় সহযোগিতা করার জন্য গিয়েছিল। রবিবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার কোটবাড়ীতে মুরগি ব্যবসার মাল নিয়ে যাচ্ছিল। পথে বিশ্বরোডের কাছে তাদের পিকআপের সামনে বাস হঠাৎ ব্রেক করে। তারা ব্রেক করলেও গাড়ি গিয়ে বাসকে মৃদু ধাক্কা দেয়। এর পর পেছন থেকে এক কাভার্ড ভ্যান গিয়ে পিকআপকে সজোরে চাপ দেয়। এতে পিকআপ দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলে তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। গাড়ির চালক একই গ্রামের রবিউল হোসেন (৩০) আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল সোমবার সকালে পেন্নাই জামিয়াতুল মাদরাসা মাঠে এক সঙ্গে তিন বন্ধুর জানাজা শেষে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।</p> <p>সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, তিন বন্ধু ছোটবেলা থেকে এক সঙ্গে বেড়ে ওঠে। বড় হৃদয় আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে লেখাপড়া বেশি করতে পারেনি। তার বাবার মুরগির ব্যবসার কাজে লেগে যায়। মেজ হৃদয় লেখাপড়ায় তেমন ভালো নয়। বাবা তাকে বিদেশ পাঠানোর জন্য সব ব্যবস্থা করেন। বুধবার তার মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। ছোট হৃদয় এবার গৌরীপুর সুবল-আফতাব উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছে। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে।</p> <p>এক গ্রামের তিন বন্ধুর মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তিন পরিবারের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। ছোটর বাবা আমির হোসেন শোকে পাথর হয়ে গেছেন। কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। মেজ হৃদয়ের বাবা শাহিন মিয়ার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল হাসেম সরকার বলেন, ‘এক সঙ্গে বেড়ে ওঠা এবং একে অন্যকে সহযোগিতা করাই ছিল তাদের বন্ধুত্ব। তিন হৃদয়ের বন্ধন যারা দেখেছে, তারা অবাক হয়ে যেত। অথচ সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের অকাল মৃত্যু হলো। এ ধরনের মৃত্যু বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।’</p>