<p>মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর ইসলামপুর গ্রামের মৃত সফিউদ্দিন খলিফার স্ত্রী আসমা বেগমের (৭০) শরীরে দীর্ঘদিন ধরে জ্বর আসে আর যায়। গ্যাস্ট্রিক, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপেও ভুগছেন তিনি। স্থানীয়ভাবে অনেক চিকিৎসক দেখিয়েছেন; কিন্তু কাজ হয়নি। লৌহজংয়ের ছত্রিশ গ্রামের নয়ন শেখের স্ত্রী আয়শা বেগম মাথার ব্যথায় দীর্ঘদিন ধরে কাতর। সঙ্গে আছে চোখের যন্ত্রণাও। একই উপজেলার মালির অংক গ্রামের মৃত মমিন মাদবরের স্ত্রী হাজেরা বেগমের (৭০) বুকে ব্যথা, মাথায় জ্বালাপোড়া করে। তিনি হাঁটতে পারেন না। পয়সার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছেন না।</p> <p>মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গতকাল রবিবার ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতাল পঞ্চমবারের মতো বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবার আয়োজন করে লৌহজংয়ের গাওদিয়া ইউনিয়নের শামুরবাড়ি গ্রামের ইউনুছ খান-মাহমুদা খানম মেমোরিয়াল হেলথ কমপ্লেক্সে। ওই তিনজনের মতো হাজারো গরিব রোগী গতকাল এখানে এসে চিকিৎসা নিয়েছে। বড় বড় চিকিৎসকের চিকিৎসাসেবা পেয়ে রোগীরা কৃতজ্ঞতা জানায় ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।</p> <p>দিনভর প্রায় দুই হাজার নারী, পুরুষ ও শিশু বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা নিয়েছে। চিকিৎসা দিয়েছেন ইউনাইটেড হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. মজিবুল হক মোল্লা ও ডা. তানভির বিন লতিফ, গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. নার্গিস মাহমুদ ও ডা. হাসিনা আফরোজ, শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মশিউর রহমান ও ডা. আশরাফ এ শেখ, নবজাতক বিশেষজ্ঞ ডা. নার্গিস আরা বেগম, নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডা. রাকিব হোসেন, ইউরোলজির ডা. জাহিদ হাসান, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. সোমেন বসু, ডা. ফেরদৌস শাহরিয়ার সাঈদ ও ডা. রশীদ উন নবী, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. জাহাঙ্গীর তালুকদার, রেডিও ও ইমেজিং বিশেষজ্ঞ ডা. জান মোহাম্মদ, কার্ডিওলজিস্ট ডা. কায়সার নসিরুল্লাহ খান, ডা. ফাতেমা বেগমসহ অর্ধশতাধিক চিকিৎসক। শুধু চিকিৎসাই নয়, গতকাল এখানে এক্স-রে, ইসিজি, ইটিটি, আলট্রাসনোগ্রাম, ক্যান্সার নির্ণয় ও কার্ডিওলজির উন্নতমানের সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয় বিনা মূল্যে। এ ছাড়া দেওয়া হয়েছে বিনা মূল্যে ওষুধ। এদিকে ইউনাইটেড হাসপাতালের পরিচালনায় ওই মেমোরিয়াল হেলথ কমপ্লেক্স থেকে সপ্তাহের ছয় দিন নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। মাত্র ২৫ টাকা দিয়ে এখানে চিকৎসক দেখানো যায়। আর ৩০০ টাকায় অস্ত্রোপচারসহ চোখের সব ধরনের চিকিৎসা করা হয়।</p> <p>ইউনাইটেড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা মনে করি গ্রামের মানুষেরও উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা পাওয়ার প্রয়োজন আছে। আমরা নিজেরা যদি যার যার গ্রামের জন্য কিছু করি, তবে আমাদের দেশ আরো এগিয়ে যাবে। ইউনাইটেড হাসপাতাল নিজের দায়িত্ব থেকেই গ্রামের দরিদ্র মানুষের কাছে নামমাত্র মূল্যে উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিচ্ছে। ইউনাইটেড হাসপাতালে যে ধরনের যন্ত্রপাতি দিয়ে রোগ নির্ণয় করা হয়, এখানেও সেই যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। মা-বাবার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় লৌহজংয়ের গাওদিয়া ইউনিয়নে ১০ বিঘা জমিতে ইউনুছ খান-মাহমুদা খানম মেমোরিয়াল কমপ্লেক্সটি গড়ে তোলা হয়। প্রতি মাসে দুইবার ৫০-৬০ জন রোগীর চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়। আরো কয়েকটি অঞ্চলে ইউনাইটেড হাসপাতালের এ ধরনের কয়েকটি মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স রয়েছে। নামমাত্র মূল্যে ওই সব কমপ্লেক্স থেকে দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’</p> <p>ফরিদুর রহমান বলেন, ‘ছোট ছোট রোগের চিকিৎসা সময়মতো না নিতে পারলে কখনো কখনো তা মৃত্যুর ঝুঁকি বয়ে আনে। ইউনাইটেড হাসপাতালের ডাক্তাররা শুধু ধনাঢ্য লোকের চিকিৎসা করেন না, তাঁরা দরিদ্র রোগীদেরও চিকিৎসা দেন। এই ফ্রি চিকিৎসাসেবা তাঁদের উদ্যোগেই করা হচ্ছে। এখানে সব ধরনের ডাক্তার আছেন। যেসব রোগীর চিকিৎসা জটিল তাদের ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। গ্রামের দরিদ্র রোগীদের জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’</p>