<p>সাধারণত ভূমিষ্ঠ শিশুর ওজন থাকে আড়াই থেকে তিন কেজি। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার একটি ক্লিনিকে গত রবিবার রাতে এক মা পাঁচ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের একটি শিশুসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। শিশু ও তার মা এখন পুরোপুরি সুস্থ।</p> <p>প্রসূতি মোসাম্মৎ মোর্শেদা বেগম (৩০)। গত রবিবার রাত ১১টায় কলাপাড়া পৌরশহরের মেডিল্যাব ক্লিনিকে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারে শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়। তার বাবা মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। এ দম্পতির বাড়ি উপজেলার বৌদ্ধপাড়া গ্রামে।</p> <p>গতকাল মঙ্গলবার কলাপাড়ার মেডিল্যাব কিনিক ও ডায়াগনস্টিকে গিয়ে দেখা গেছে, ১ নম্বর কেবিনের সামনে পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব অভিভাবকের কোলে একটি শিশু। একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কোলের শিশুটিকে দেখে মনে হচ্ছে, বয়স পাঁচ-ছয় মাস।</p> <p>ক্লিনিকের সেবিকা হীরা রানী জানান, শিশুটি রবিবার রাতে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। এরই ওজন পাঁচ কেজি ৩০০ গ্রাম।</p> <p>এ বিষয়ে শিশুর মা জানান, গত ১০ মার্চ গর্ভের বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার তারিখ ছিল। দিন পার হয়ে গেলেও প্রসব বেদনা ওঠে না। একই সঙ্গে বাচ্চা নড়াচড়া কমে যায়। প্রসূতির শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হচ্ছিল। দিন দিন খাবারের চাহিদা কমে গেছে। তার চলাফেরায় কষ্ট হতো। মাথা ঘোরাসহ শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। দুর্বল হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় ক্লিনিকে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমার আগের সন্তান (মেয়ে জান্নাতী আক্তার মরিয়ম, ৯) গর্ভে থাকাকালে এত কষ্ট হয়নি, এবার যতটা কষ্ট সইতে হয়েছে।’</p> <p>শিশুটির বাবা মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, স্ত্রীর গর্ভের বয়স পাঁচ মাস পার হওয়ার পর রক্তশূন্যতা, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, বাঁ পাঁজরে ব্যথা হওয়া ছাড়াও নানা সমস্যা দেখা দেয়। গত ১৯ অক্টোবর তাঁকে নিয়ে ক্লিনিকে আসি। তখন চিকিৎসক জানান, প্রসূতি রক্তশূন্যতায় ভুগছেন। তাঁর রক্তের গ্রুপ ‘এবি পজিটিভ’ হওয়ায় রক্ত সংকটের বিষয় মাথায় রেখে চিকিৎসক তাঁকে ধারণা দেন, টাকা দিয়ে রক্ত না কিনে পর্যাপ্ত খাবার খাওয়ালে রক্তকণা উৎপাদন হবে। শরীর সুস্থ হয়ে যাবে। এরপর তিনি স্ত্রীকে প্রতিদিন একটি করে কবুতরের বাচ্চা রান্না করে খাওয়ান। সঙ্গে একটি ডিমও খাইয়েছেন। এ ছাড়া ১০০ গ্রাম আঙুর, মাঝেমধ্যে আপেল-কমলা খাওয়াতেন। একই সঙ্গে লাউ, মিষ্টি কুমড়াসহ বেশি করে সবজি খাওয়াতেন। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মোয়াজ্জেম সদিচ্ছা ও স্ত্রীর প্রতি কর্তব্য যথাযথ পালন করায় সুস্থ-সবল সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে বলে মনে করছে ক্লিনিকের লোকজন।</p> <p>মোয়াজ্জেম আরো বলেন, ‘তাঁর বড় মেয়ে জন্ম নিয়েছিল প্রায় তিন কেজি ওজন নিয়ে। তাঁদের পরিবারের অন্য কারো এত বেশি ওজনের সন্তান জন্মায়নি।’</p> <p>প্রসূতির অস্ত্রোপচারকারী গাইনি কনসালট্যান্ট মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘আড়াই কেজির কম ওজনের বাচ্চা অপুষ্টিতে ভোগে। আড়াই থেকে তিন কেজি ওজন হলে সুস্থ-সবল বলা হয়। তিন কেজির ওপর হলে তাকে অতিরিক্ত ওজন বলে। শিশুটি জন্মের পর প্রথমে ধারণা হয়েছিল, ডায়াবেটিস আক্রান্ত কি না। পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত যে সে ডায়াবেটিসমুক্ত।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমার চিকিৎসক জীবনে পাঁচ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের শিশু সিজারিয়ানের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ একটি স্মরণীয় ঘটনা। আমার যতটুকু ধারণা এতে বলা যায় যে জেনেটিক বা বংশগতভাবে শিশুটির ওজন বেশি হয়েছে। গর্ভে থাকা অবস্থায় তার মায়ের পানি কমে গিয়েছিল। তাই শিশুটির নড়াচড়া কমে যায়। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে গত বরিবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে অস্ত্রোপচার শুরু করি, রাত ১১টায় শেষ হয়। শিশু এবং তার মা দুজনেই সুস্থ রয়েছে। আগামী শুক্রবার তারা বাড়ি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’</p> <p>পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মো. সেলিম মিঞা বলেন, ‘হরমোনাল ইমব্যালান্সের (হরমোনের ভারসাম্যহীনতা) কারণে এমন হতে পারে। এ কারণে অনেক সময় শিশুরা ভবিষ্যতে হরমোনজনিত ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তবে তারও চিকিৎসা রয়েছে।’</p> <p> </p>