<p>খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার দক্ষিণ প্রান্তের ঝপঝপিয়া নদী পার হলেই দাকোপের পানখালি গ্রাম। নদীর পারে উপকূলীয় বাঁধ। এর খানিকটা দক্ষিণে সূর্যমুখীর বিস্তীর্ণ জমি। সেখানে বেশ কিছু ফুল পুষ্ট হয়ে কালচে বর্ণ ধারণ করেছে। এর পাশের জমিতে ফলেছে গম।</p> <p>কৃষকরা বেশ খুশি। তবে সেই খুশি শুধু ভালো ফলনের জন্য নয়, লবণাক্ত জমিতে আমন ধানের পাশাপাশি আরেকটি ফসল জন্মানোই কৃষকদের খুশির অন্যতম কারণ।</p> <p>লবণাক্ততার কারণে দাকোপ উপজেলাসহ আশপাশের এলাকায় আমন ধান ছাড়া সাধারণত অন্য কোনো ফসল ফলে না। দীর্ঘদিন এসব জমিতে চিংড়ি চাষ করা হয়েছে। নোনা পানি আটকে চিংড়ি চাষ করায় মাটি ও পানিতে লাবণাক্ততার পরিমাণ বেড়েছে। এ অবস্থায় কৃষকরা এখন চিংড়ি ছেড়ে জমিতে একাধিক ফসল ফলানোর দিকে ঝুঁকেছে।</p> <p>কিন্তু আমন ধান বাদে আর কী চাষ করা যেতে পারে—এই প্রশ্নের উত্তর হিসেবেই সূর্যমুখী আর গমের ‘আবির্ভাব’। এই দুটি ফসলের ক্ষেত্রে আরেকটি সুবিধা হলো, এ জন্য জমি চাষ করতে হয় না।</p> <p>লবণাক্ত ও ভেজা মাটিতে সূর্যমুখী কিংবা গম চাষ করা যায় কি না, তা নিয়ে প্রথমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রো টেকনোলজি বিভাগ একটি গবেষণা প্রকল্প হাতে নেয়। পানখালির ১০ বিঘা জমিতে এই দুটি গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।</p> <p>প্রকল্পের উপগবেষক ও সহকারী অধ্যাপক বিধান চন্দ্র সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল এই এলাকায় রবি মৌসুমের কোনো ফসল যেমন গম, সরিষা, সূর্যমুখী, ভুট্টা, মটর ইত্যাদির কোনোটি চাষ করা যায় কি না। তিন বছরের গবেষণায় সূর্যমুখী ও গম চাষে আমরা সফলতা পেয়েছি।’  </p> <p>মুখ্য গবেষক অধ্যাপক ড. মো. এনামুল কবীর জানান, এই অঞ্চলে সূর্যমুখী ও গমের উৎপাদন যে সম্ভব, তা এখন প্রমাণিত। আমন কাটার পর মাটি অতিরিক্ত আর্দ্র থাকায় বিনা চাষেই লবণাক্ত মাটিতে সূর্যমুখী ও গম চাষ করা সম্ভব। এখন কৃষকরা সার, পানি, লবণাক্ততা ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারলেই বাড়তি একটি ফসল পাবে। তিনি জানান, প্রকল্প শেষে তাঁরা এই অঞ্চলের জন্য সার ব্যবহারের একটি নির্দেশিকা তৈরিতে সক্ষম হবেন। কৃষক শংকর প্রসাদ বলেন, ‘অতিরিক্ত একটি ফসল পাব, এতেই আমরা খুশি।’</p> <p>কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) খুলনার উপপরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, এখানে সূর্যমুখী ও গম চাষ সম্ভব। এটি মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ আমাদের। সূর্যমুখীর মূল মাটির গভীর থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না লাগালেও ফুল ফোটে।’</p>