<p>পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর গতকাল শুক্রবার ছিল প্রথম সরকারি ছুটির দিন। সপরিবারে কর্মস্থল ঢাকায় ফেরার জন্য এ দিনকেই বেছে নেয় অনেক মানুষ। এর ফলে ঢাকামুখী অতিরিক্ত যাত্রী ও পরিবহনের চাপ পড়ে দেশের ব্যস্ত নদীপথ শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী, শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে। এর মধ্যে শিমুলিয়া ঘাটে নামে হাজার হাজার যাত্রীর ঢল। এ ঘাটে ঢাকামুখী বাসের সংকটে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকে যাত্রীরা। আদায় করা হয় অতিরিক্ত ভাড়া। আর রো রো (বড়) ফেরি না থাকায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে পারাপার ব্যাহত হওয়ায় দৌলতদিয়া ঘাট থেকে আট কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। উভয় স্থানেই তীব্র গরমে দুর্ভোগ পোহায় যাত্রীরা।</p> <p>জানা গেছে, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটের চারটি রো রো ফেরিসহ মোট ২০টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারের ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ। যাত্রীরা লঞ্চ, সি বোট ও ফেরিতে করে নদী পার হয়ে এপারে ঢাকা-মাওয়া রুটের লোকাল বাসে করে ঢাকায় ফেরার কারণে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ তৈরি হয়। এ সুযোগে পরিবহন ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। ঢাকা-মাওয়া রুটের লোকাল পরিবহনগুলো ৭০ টাকা নির্ধারিত ভাড়ার স্থলে নিচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। আর কাউন্টার থেকে যাত্রীপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা করে।</p> <p>গতকাল শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, লঞ্চ, সি বোট ও ফেরিতে করে অসংখ্য যাত্রী পদ্মা নদী পার হয়ে শিমুলিয়া ঘাটে এসে নামে। এ সময়ে কাঁঠালবাড়ী ও মাঝিকান্দি থেকে প্রায় প্রতিটি লঞ্চ ধারণক্ষমতার চেয়ে তিন থেকে চার গুণ যাত্রী নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে ভেড়ে। লঞ্চ থেকে নামার পর যাত্রীরা প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বাসের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে।</p> <p>লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অপেক্ষমাণ যাত্রী শরীয়তপুরের জাজিরার গঙ্গানগর থেকে আসা সায়লা আক্তার বলেন, ‘১০০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে এক ঘণ্টা যাবৎ লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছি। প্রচণ্ড গরমে আমার কোলে থাকা সাত মাসের বাচ্চাটি প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ভাবছিলাম শুক্রবার ভিড় কম হবে, এসে দেখি ভিড় একটুও কমেনি। তাই বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ঢাকায় যেতে হচ্ছে।’</p> <p>অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনির হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে বেশ কয়েকটি পরিবহনকে জরিমানা করা হয়েছে এবং আপন পরিবহনের কাউন্টারটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। এত কিছুর পরও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ হয়নি। আমি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’</p> <p>গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : রো রো ফেরির অভাবে গতকাল দৌলতদিয়া ঘাটে আটকা পড়ে ঢাকাগামী সহস্রাধিক যানবহন। এর ফলে ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ জমিদারব্রিজ পর্যন্ত আট কিলোমিটার রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। সেখানে প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকায় বিভিন্ন বাসের সাধারণ যাত্রী, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা চরম দুর্ভোগ পোহায়।</p> <p>বিআইডাব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ২০টি ফেরি সার্বক্ষণিক সচল থাকায় বর্তমান দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরির কোনো সংকট নেই। কিন্তু ঈদ শেষে কর্মস্থলমুখী মানুষের গাড়ির চাপ অনেক বেড়ে যাওয়ায় দৌলতদিয়া ঘাটে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’</p> <p> </p>