<p>সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা খাতে বিনিয়োগের আহ্বানসংবলিত জেনেভা ঘোষণার মধ্য দিয়ে গতকাল শনিবার শেষ হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আয়োজনে ৭১তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে কলেরায় মৃত্যু ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। এ সম্মেলনে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পঞ্চবার্ষিক কর্মপরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পর্যবেক্ষণ বোর্ড গঠনকে যুগান্তকারী বলেও অভিহিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আরো অনেক সিদ্ধান্ত ও নানা ধরনের কমিটি গঠন করা হয়।</p> <p>গতকাল সমাপনী বক্তব্য ও জেনেভা ঘোষণাকালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. তেদ্রস আদানম গ্রেভ্রিয়েসেস বলেন, ‘আমরা আগামী দিনে সুস্থ মানুষের একটি পৃথিবী গড়ে তুলতে চাই, আমরা চাই কোনো মানুষ যেন অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়। আমরা এটা নিশ্চিত করতে চাই যে কার্যকর পদক্ষেপ আর উদ্যোগগুলো সবাই মিলে বাস্তবায়ন করব।’</p> <p>বক্তব্যের শুরুতেই সবার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বে কিছু কিছু সময় যুদ্ধ, দারিদ্র্যতা, দুর্ভিক্ষ, মহামারি, পরিবেশ দূষণসহ আরো কিছুর মাধ্যমে  রোগ ও মৃত্যর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে থাকি। তবে আমরা হতাশ হয়ে ফিরে যেতে চাই না, চাই সাহস-শক্তি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসব চ্যালেঞ্চ মোকাবেলা করে মানুষের জন্য সুস্থ পৃথিবী গড়তে। কারণ আমি সব সময়ই বলি—স্বাস্থ্য হচ্ছে শান্তির সেতুবন্ধ।’</p> <p>তিনি বলেন, এককভাবে কারো পক্ষেই এমন কঠিন  চ্যালেঞ্চ মোকাবেলা করা সম্ভব হয় না। রাষ্ট্র, সংস্থা, সংগঠন, সমাজ ও পরিবার সবাই মিলে সচেতনতা ও কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে পারলে সফলতা আসবেই।</p> <p>তিনি একাধারে ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ, অসংক্রামিত রোগ নিয়ন্ত্রণ, ২০৩০ সালের মধ্যে কলেরায় মৃত্যু ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনাসহ আরো বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জোরালো উদ্যোগ আশা করেন।</p> <p>এর আগে গত ২১ মে শুরু হয় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ৭১তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলন। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি অ্যাঁলা বেরসে। গতকাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্মেলন শেষ হলেও আজ ও আগামীকাল চলবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কার্য নির্বাহী কমিটির সভা।</p> <p>১৯৪টি দেশের সঙ্গে এ সম্মেলনে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে একটি দল অংশগ্রহণ করেন। গতকাল সমাপনী অনুষ্ঠানেও তাঁরা অংশ নিয়ে রাতে দেশের উদ্দেশে রওনা দেন।</p> <p>সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহামম্মদ নাসিম  কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই সম্মেলনে এসে আমরা যেমন অনেক কিছু অর্জন করেছি, তেমনি আমাদেশের স্বাস্থ্য খাতসহ অন্যান্য বিষয়ে বিশ্বনেতাদের জানাতে পেরেছি। সম্মেলনটি বেশ সফল ও সার্থক হয়েছে। এ ছাড়া কমনওয়েলথ সভায় আমাকে এশিয়ার পক্ষ থেকে বক্তব্য ও প্ল্যানারি অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষে দেওয়া বক্তব্য প্রশংসিত হয়েছে, বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক ও সাহসী উদ্যোগকে বারবারই বিশ্ব নেতারা অভিনন্দন জানিয়েছেন।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিনিধিদলের সব সদস্যই বিভিন্ন সেশনে অংশ নিয়ে দেশের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আমরা এ সম্মেলন থেকে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও ঘোষণার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তা বাস্তবায়নে দেশে ফিরে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই দেশে ফিরে যাচ্ছি।’</p>