ঢাকা থেকে পাঠানো আবদুল্লার ছবি (বাঁয়ে); পরিবার থেকে সংগৃহীত ছবি ডানে
রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ায় ‘রুবি ভিলা’র মেসে গত ১২ জানুয়ারি র্যাবের অভিযানে নিহত তিন জঙ্গির একজন ছিল চট্টগ্রামের নাফিস উল ইসলাম ওরফে আবদুল্লাহ (১৬)। এর আগে একজনের পরিচয় জানা গেলেও র্যাব গতকাল বৃহস্পতিবার অজানা থাকা অন্য দুজনের ছবি প্রকাশ করার পর নাসিফের বাবা নজরুল ইসলাম তার ছেলেকে শনাক্ত করেন। এরপরই পুলিশ নিশ্চিত হয় চট্টগ্রামের নাসিফই ঢাকায় নিহত জঙ্গির একজন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাউন্টার টেরিরোজম ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এএএম হুমায়ুন কবীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে একটি ছবি পাঠিয়ে তা নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছিল। পরে আমরা তার বাবা নজরুল ইসলামকে সন্তানের ছবি দেখাই। নজরুল ইসলাম সন্তানের ছবি শনাক্ত করেন।’
চট্টগ্রামের কাউন্টার টেরিরোজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা থেকে কালো রঙের টিশার্ট পরিহিত একটি ছবি পাওয়া যায়। এই ছবির সঙ্গে নাসিফের ছবির মিল আছে। পরে পুলিশ নাসিফের বাসা থেকে আরো একটি ছবি সংগ্রহ করে। ছবিটি পরে ঢাকায় কাউন্টার টেরিরোজম ইউনিটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
নাসিফদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার কানাইমাদারী গ্রামে। তবে তারা সপরিবারে চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার থানার নবাব সিরাজদ্দৌলা সড়কের অধ্যাপক ইউনুছ চৌধুরীর বাসার তৃতীয় তলায় বসবাস করে। নাসিফের বাবা মো. নজরুল ইসলাম গত ৬ অক্টোবর বাসা থেকে চলে যান। পরদিন ৭ অক্টোবর তিনি চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
সাধারণ ডায়েরির তথ্য অনুযায়ী, নাসিফ উল ইসলাম কাজেম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তার উচ্চতা প্রায় চার ফুট ৭ ইঞ্চি। মাঝারি গড়নের নাসিফ উল ইসলামের মুখ গোলাকার ও গায়ের রং ফর্সা।
চট্টগ্রামের কাউন্টার টেরিরোজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, নাসিফ উল ইসলাম বাড়ি ছাড়ার পর খোঁজ করতে গিয়ে এক পর্যায়ে উত্তারাঞ্চলের একাধিক জেলায় তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর তার গতিবিধি অনুসরণ করতে করতে পুলিশ একপর্যায়ে ১ জানুয়ারি রাতে চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট থানা এলাকার একটি বাসায় জঙ্গি আসত্মানার সন্ধান পায়। এই আসত্মানা থেকে ১০টি গ্রেনেডসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত ম্যাপ অনুযায়ী তারা সদরঘাট থানা উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। একই সময় পুলিশ আরও জানতে পারে পলাতক নাসিফ উল ইসলাম ছদ্মনাম ধারণ করে আবদুল্লাহ।
এই আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তারে চট্টগ্রামের কাউন্টার টেরিরোজম ইউনিট অভিযান চালালেও তাকে ধরতে পারেনি। ১ জানুয়ারি তার দুই সহযোগি চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ১১ জানুয়ারি রাতে নাখালপাড়ার জঙ্গি আসত্মানায় নাসিফ উল ইসলামসহ তিন জঙ্গি র্যাবের অভিযানে মারা যায়।
নিহত তিন জঙ্গির মধ্যে অজানা থাকা দুজনের পরিচয় শনাক্ত করতে গতকালই র্যাবের মিডিয়া শাখা থেকে তাদের ছবি প্রকাশ করা হয়। ছবিতে দেখা গেছে, নিহত দুজনই বয়সে তরুণ। তারা একইভাবে ডান হাতের তর্জনী তুলে রয়েছে। বাঁ পাশে থাকা তরুণের পরনে নীল রঙের প্রিন্টের শার্ট। ডান পাশে থাকা আরেকজনের পরনে কালো জ্যাকেট।
র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমরানুল হাসান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শনাক্ত হওয়া মেজবার প্রোফাইল ও বাসায় দুজনের ছবি পাওয়া গেছে। আমরা বিভিন্নভাবে পরিচয় জানার চেষ্টা করেছি। ছবি দুটি নিহতদের নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা এটি প্রচার করছি। তারা বাসা ভাড়া নিয়েছিল, নিখোঁজ থাকার কারণে স্বজনরাও খুঁজছে হয়তো। যদি এভাবে পাওয়া যায়...।’ তিনি আরো জানান, পরিচয় গোপন রেখে তিনজন উগ্রপন্থী নাশকতায় অংশ নিতে যাচ্ছিল। নাখালপাড়ার মেসের আস্তানায় জাহিদ ও সজীব নামে একই ছবি থাকা দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়। পরিচয়পত্র দুটিতে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য থাকায় তাত্ক্ষণিকভাবে সঠিক পরিচয় নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয় এবং পরিচয়পত্রটি ভুয়া বলে মনে করা হয়। কথিত জাহিদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিলে যায়। প্রাপ্ত জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার মূল নাম মেজবা উদ্দিন। তার বাবার নাম এনামুল হক, মায়ের নাম তাহমিনা আক্তার। তার বাড়ি কুমিল্লা জেলায়।
প্রসঙ্গত, গত ১১ জানুয়ারি রাতে পশ্চিম নাখালপাড়ার ১৩/১ ঠিকানায় ছয়তলা রুবি ভিলার পঞ্চম তলার মেসে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় র্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে তিন তরুণ নিহত হয়। ১৪ জানুয়ারি র্যাব তাদের মধ্যে মেজবার পরিচয় শনাক্ত করে। বাড়িটির মালিক ও মেজবার স্বজনসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।
মন্তব্য
আলোচিত সংবাদ
ব্যাখ্যা ছাড়া সর্বসাধারণের পক্ষে কোরআন বোঝা সম্ভব নয়
আমাদের জাহিদ গুগলের ম্যানেজার
সারাদিন বিছানায় শুয়ে অন্যের রক্ত যোগাড় করেই দিন কাটে মিমের
সিগারেট তৈরির একটি মূল উপাদান ইঁদুরের বিষ্ঠা!
পরকীয়া প্রেমিকের স্ত্রী-কন্যার মারধরের শিকার চিত্রনায়িকা রাকা
বিশ্বের যেসব দেশ ভ্রমণে ভিসা লাগে না...