<p>রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা এখন মাদকের স্বর্গরাজ্য। নানা কলাকৌশলে এ অঞ্চলে মাদক কারবার অব্যাহত রেখেছে বিশেষ সিন্ডিকেট। সীমান্তঘেঁষা বরেন্দ্র অঞ্চলের এসব মাদক ব্যবসায়ী অল্প সময়ের ব্যবধানে হয়েছেন কোটিপতি। একসময়ের দিনমজুর এখন বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হলেও মাদক ব্যবসা রয়েছে আগের মতোই। প্রশাসনিক পদক্ষেপ এ এলাকার মাদক নির্মূলে যথাযথ প্রভাব ফেলেনি। পুলিশের দাবি, অভিযুক্তরা পলাতক। বেশির ভাগের বিরুদ্ধে নেই মাদকের মামলা।</p> <p>রাজশাহীর পুলিশ সুপার মোয়াজ্জেম হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা গোদাগাড়ীর মাদককে জিরো টলারেন্সে নিয়ে আসতে কাজ করে যাচ্ছি। তবে শীর্ষস্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় সেটি করতে গিয়ে অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে। তার পরও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো উপায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’</p> <p>স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, গোদাগাড়ীতে মাদক ব্যবসার অভিযোগ বেশ পুরনো। তবে সম্প্রতি উত্থান ঘটেছে কয়েকজন ব্যবসায়ীর। গাড়ি-বাড়ির মালিক এসব মাদক ব্যবসায়ীর কেউ কেউ ৮ অথবা ৯ বছর আগে ছিলেন মোটর শ্রমিক, ডিম বিক্রেতা, দিনমজুর কিংবা দোকান কর্মচারী। পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের কেউ ফেরারি, আবার কেউবা কারাগারে। অনেকে ঘুরছে প্রকাশ্যে। গোদাগাড়ী আরিজপুর গ্রামের তারেক ইকবাল, মাদারপুর এলাকার সবজি ব্যবসায়ী সেলিম তোফাজ্জল হোসেন, চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের মানিকচক গ্রামের শরিফুল ইসলাম, কোদালকাটি গ্রামের আব্দুল জাব্বার, মহিশালবাড়ী গ্রামের আজিজুল মায়ারী, মাদারপুরের নাজিবুর, চর আলাতুলি গ্রামের খুয়াজ ও তার ভাই হুমায়ন, হলের মোড় চাইপাড়ার লোকমান, মহিশালবাড়ী গ্রামের রাজমিস্ত্রি হেলাল, একই এলাকার টেম্পু চালক বাবু, মেকাইল; বিস্কুট কারখানার কর্মচারী বানি ইসরাইল ওরফে ভোদল ও রাজমিস্ত্রি দেলাবুর পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। স্থানীয় পুলিশ ও বিভিন্ন সংস্থায় ‘মাসোহারা’ দিয়ে তারা কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন বলে রয়েছে অভিযোগ।</p> <p>গোদাগাড়ী উপজেলার মহিষালবাড়ী এলাকার শহিদুল ইসলাম ওরফে ভোদল ২০০৪ সালে স্থানীয় বাজারে সিদ্ধ ডিম বিক্রি করতেন। অভাবের তাড়নায় মহিশালবাড়ী গরুর হাটে করিডরের কাগজ লিখে ২০ টাকা করে কমিশন নিতেন। বর্তমানে শহিদুল কয়েক কোটি টাকার মালিক। রয়েছে তিনতলা আলিশান বাড়ি, মাইক্রোবাস, রাজশাহী শহরের নওদাপাড়ায় দামি প্লট, চাঁপাইনবাবগঞ্জে পেয়ারা বাগান, আম বাগান ও ৭১ বিঘা জমি। হেরোইন বিক্রি করেই তিনি কোটিপতি বলে স্থানীয়রা জানায়। শহিদুল বছরখানেক আগে নওগাঁয় মাদকসহ ধরা পড়লেও পরে ছাড়া পেয়ে যান। তবে তিনি গোদাগাড়ী পুলিশের হাতে কখনো ধরা পড়েনি।</p> <p>অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শহিদুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি কখনো মাদক ব্যবসা করিনি।’</p> <p>গোদাগাড়ী থানার ওসি হিফজুর আলম মুন্সি বলেন, ‘শহিদুল পুলিশের তালিকাভুক্ত আসামি। তাকে আমরা খুঁজছি। কিন্তু সে পলাতক। তাকে মাদকসহ হাতেনাতে কখনো ধরা যায়নি, তার বিরুদ্ধে এসংক্রান্ত মামলাও নেই। তবে সে অন্যতম মাদক ব্যবসায়ী।’</p> <p>স্থানীয় লোকজন জানায়, শহিদুলের মতো তার ভাতিজা আলামিন মাদক ব্যবসার মাধ্যমে কোটিপতি।</p> <p>গোদাগাড়ীর আরেক মাদক ব্যবসায়ী মাটিকাটার সোহেল রানা। নাশকতার মামলায় তিনি কারাগারে। বাসের সুপারভাইজার থেকে সোহেল এখন কোটিপতি। মাদারপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সেতাবুর রহমান বাবু একসময় অন্যের জমি চাষ করে সংসার চালাতেন। তিনিও এখন কোটিপতি।</p> <p>বাবু সম্পর্কে গোদাগাড়ী থানার ওসি হিফজুর আলম মুন্সি বলেন, ‘বাবু এখন পলাতক। পরিষদেও যাচ্ছে না। তার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছি।’</p>