<p>সাবেক এক পাকিস্তানি সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এসংক্রান্ত প্রতিবেদনও চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান।</p> <p>এই প্রথম পাকিস্তানি কোনো সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধসংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত চূড়ান্ত হলো। তাঁর নাম মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার আমিরাবাদ গ্রামে তাঁর বাড়ি। বর্তমান বয়স ৭৫ বছর। তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত হন।</p> <p>তদন্ত সংস্থা জানায়, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকা সেনানিবাসে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেন মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। এরপর ঢাকা সেনানিবাস থেকে কুমিল্লা সেনানিবাসে যোগ দিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে দাউদকান্দি সদরে ক্যাম্প স্থাপন করেন।</p> <p>আব্দুল হান্নান খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ না দেওয়ায় শহীদুল্লাহর বিষয়ে কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি। কিন্তু আসামি এখনো এলাকায় ‘ক্যাপ্টেন’ হিসেবে পরিচিত।</p> <p>২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। কয়েক দিনের মধ্যে প্রসিকিউশনের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হবে। এর আগে প্রসিকিউশনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল গত বছর ২ আগস্ট শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ওই দিনই কুমিল্লা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে কারাগারে আছেন তিনি।</p> <p>মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন—এমন অনেক বাঙালি কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই তদন্ত চলছে জানিয়ে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা সানাউল হক বলেন, তদন্তের স্বার্থেই তাঁদের নাম-ঠিকানা বা পরিচয় জানানো হচ্ছে না। ধাপে ধাপে সব জানানো হবে।</p> <p>শহীদুল্লাহ পাকিস্তানি বাহিনীর আট-দশজন সদস্য নিয়ে দাউদকান্দি বাজারে হামলা চালিয়ে হোমিও চিকিৎসক হাবিবুর রহমানকে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন চালান। এরপর দাউদকান্দি ফেরিঘাটে এনে তাঁকে হত্যা করে লাশ গোমতী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।</p> <p>একাত্তরের ১৬ জুন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহীদুল্লাহ পাকিস্তানি বাহিনীর ৪০-৫০ জন সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে দাউদকান্দির উত্তর ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দি ও গোলাপেরচর গ্রামের লোকজনকে আটকে নির্যাতন ও পাঁচটি বাড়ি লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেন। আটকদের মধ্যে ১৪ জনকে দাউদকান্দিতে এনে হত্যা করা হয়।</p> <p>একাত্তরের ২১ জুলাই শহীদুল্লাহ পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে দাউদকান্দি বাজারে হামলা চালিয়ে কালামিয়া নামের এক ব্যক্তিকে অপহরণের পর হত্যা করেন বলে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে।</p>