ঘরে-বাইরে সব জায়গায়ই নারী অনিরাপদ। প্রতিনিয়ত নানাভাবে নির্যাতনেরর শিকার হচ্ছে তারা। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হলে নারীর ক্ষমতায়ন দরকার। ক্ষমতায়ন ও নারীর সম-অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে নিরাপত্তাহীনতাও কেটে যাবে। তাঁদের মতে, কোনো সমাজে মানুষ নৈতিকতা বিবর্জিত হলে নারীর অনিরাপদ থাকা স্বাভাবিক। তাই নারীকে সুরক্ষা দিতে হলে বিদ্যমান আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি সমাজের সচেতনতা ও নৈতিক মূল্যবোধের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম কালের কণ্ঠকে বলেন, নারীর অনিরাপত্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে নির্যাতনের মাধ্যমে। সেই নির্যাতন হতে পারে মানসিক বা শারীরিক। তিনি বলেন, যেসব নারী তাদের নিজ পরিবারে নির্যাতনের শিকার হয়, সেগুলো তারা প্রকাশ না করা পর্যন্ত কেউ জানতে পারে না। ফলে কোনো সংগঠনই এই নির্যাতনের চিত্র সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারে না।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সম্পাদিত নারী নির্যাতনের বছরওয়ারি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সমাজে নানা ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটলে একই হারে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। শুধু সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে মহিলা পরিষদ নারী নির্যাতন সংক্রান্ত বছরওয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রকৃতপক্ষে সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। কারণ নারী নির্যাতনের বেশির ভাগ ঘটনাই অপ্রকাশিত থাকে। মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী ২০১২ সালে সারা দেশে নানাভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে এক হাজার ৩৪২ জন, ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৫৭ জন, এসিড সন্ত্রাসের শিকার ৬৬ জন ও পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫৯ জন। ২০১৩ সালে এক হাজার ২০০ নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার, ধর্ষণের শিকার ৬৯৬ জন, এসিড সন্ত্রাসের শিকার ৪৬ জন এবং পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৩৭ জন। ২০১৪ সালে এক হাজার ২৭২ জন নারী নানাভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৭৪ জন, এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে ৪১ জন ও পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫৩ জন নারী। ২০১৫ সালে এক হাজার ৩০০ নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮০৮ জন, এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে ৩৭ জন একং পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৪০ জন।
মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম কালের কণ্ঠকে বলেন, এসব নির্যাতন থেকে নারীকে বাঁচাতে হলে শুধু আইন করেই হবে না, নৈতিকতাবোধের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের ৭৬ শতাংশ নারীই অর্থনৈতিকভাবে অনিরাপদ। নারীকে অর্থনৈতিকভাবে নিরাপদ করতে পারলেও অনেকাংশে কমে যাবে নারীর নিরাপত্তাহীনতা।’
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ‘নারীর অনিরাপত্তা শুরু হয় তার নিজের ঘর থেকে। একজন নারীকে যখন তার পরিবার অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীনতা দিতে পারে না; সেখান থেকেই ওই নারীর অনিরাপত্তার শুরু। আবার আমাদের সমাজে একজন নারী স্বাধীনভাবে চলতে পারে না। এটি হলো অনিরাপত্তার আরেক ধাপ।’ তিনি বলেন, পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তনের পাশাপাশি নারীকে সাহসী ও প্রতিবাদী হতে হবে।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাহিদ ফেরদৌসী কালের কণ্ঠকে বলেন, শুধু আইন করেই নারী নির্যাতন প্রতিরোধ বা নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না। এখানে সামাজিক মূল্যবোধের উন্নয়নের উদ্যোগ নিতে হবে। কোনো সমাজে মানুষ নৈতিকতা বিবর্জিত হলে সেখানে নারীদের অনিরাপত্তায় থাকা স্বাভাবিক।
বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ২০১৪ সালের এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, জনসমাগমস্থলে নারীর ওপর বেশি যৌন হয়রানি হয়ে থাকে। গ্রামের তুলনায় শহরে এ প্রবণতা বেশি। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, হয়রানি বা নির্যাতন সহ্যের সীমা অতিক্রম না করা পর্যন্ত নারীরা সাধারণত বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলে না। ৪১ শতাংশ নারী তাত্ক্ষণিকভাবে ঘটনার প্রতিবাদ করে।
মন্তব্য
আলোচিত সংবাদ
ব্যাখ্যা ছাড়া সর্বসাধারণের পক্ষে কোরআন বোঝা সম্ভব নয়
আমাদের জাহিদ গুগলের ম্যানেজার
বিশ্বের যেসব দেশ ভ্রমণে ভিসা লাগে না...
সিগারেট তৈরির একটি মূল উপাদান ইঁদুরের বিষ্ঠা!
সারাদিন বিছানায় শুয়ে অন্যের রক্ত যোগাড় করেই দিন কাটে মিমের
সীমান্তে সেনা, অস্ত্রের মহড়া মিয়ানমারের