<p>শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘সাঁওতাল রমণী’ নিলামে দেড় কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে। নিউ ইয়র্কের নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ক্রিসটিজ গত ১২ সেপ্টেম্বর শিল্পকর্মটি নিলামে তোলে। ছবিটি কে কিনেছে জানা যায়নি। বাংলাদেশের কোনো শিল্পীর শিল্পকর্মের জন্য এটিই সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রি হওয়ার রেকর্ড।</p> <p>ক্রিসটিজ তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, জয়নুল আবেদিনের শিল্পকর্মটি এক লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়েছে; বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য এক কোটি ৫৭ লাখ টাকা। নিলামে লট নম্বর ছিল ২৪৭। একই নিলামে বাংলাদেশের আরেকজন নন্দিত শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়ারও একটি চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছে। তবে এটি সম্পর্কে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।</p> <p>জয়নুল আবেদিনের ‘সাঁওতাল রমণী’ (ইংরেজিতে Shanthal Women) চিত্রকর্মটি ক্যানভাসে আঁকা তৈলচিত্র। এর আকার হচ্ছে ৮ বাই ২৭ ইঞ্চি। এটি ১৯৬৯ সালের আঁকা ছবি।</p> <p>শিল্পাচার্যের একটি পেইন্টিং বিক্রি হয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার ডলারে—এ খবর জানিয়ে শিল্পী কামাল পাশা চৌধুরী ফেসবুকে লিখেছেন, বাংলাদেশের কোনো শিল্পীর এটাই সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রীত শিল্পকর্ম। এ খবরে তাঁর ফেসবুক পেজে অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান লিখেছেন, ‘কামাল ভাই, তথ্যটি দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমরা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের একটি ছবি কিনেছিলাম ১৮ লক্ষ টাকা দিয়ে। তাতেই অনেকের কলিজা ফেটে যাচ্ছিল। আজ তারা জানুক, শিল্পীর তুলির আঁচড় বিক্রি হলো ১ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা।’</p> <p>চিত্রকলাবিষয়ক পত্রিকা শিল্পপ্রভা’র সম্পাদক শিল্পী রফি হক জানিয়েছেন, পেইন্টিংটির আগের মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক করাচির মোহাম্মদ ফায়াজ ও ওয়াব জাফর। পেইন্টিংটি প্রথমে লন্ডনের সথবিজ অকশন হাউসে ২০০০ সালের ৮ জুন নিলামে উঠেছিল।</p> <p>শিল্পাচার্যের চিত্রকর্ম বিক্রি হওয়ার খবরটি রাফি হক তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানানোর পর তাতে আরো অনেকে তথ্য যুক্ত করেছেন।</p> <p>শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি থেকে চারুকলায় পাস করা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের নিউজ কনসালট্যান্ট রেজা কে চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘করাচিতে কয়েকটি পরিবারের কাছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন স্যারের খুব বিখ্যাত পেইন্টিং আছে। যেমন, আমি ক্লিফটনে একটি বনেদি বাড়িতে এক আর্ট কালেক্টর ও গ্যালারি ওনারের আতিথেয়তা নিয়েছিলাম। ওঁর বাড়িতে আবেদিন স্যারের অনেক উল্লেখযোগ্য পেইন্টিং দেখেছিলাম। এ ছাড়া ইস্পাহানী পরিবারের কাছে আছে জয়নুল ও কিবরিয়ার বিরাট কালেকশন। আবার আমাদের মিউজিয়ামে আবেদিন স্যারের যে কাজ আছে তাও দেখেছি করাচিতে। পরে আমি কিবরিয়া স্যারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি জানিয়েছিলেন, আবেদিন স্যার বায়ারের অনুরোধে একই ছবি একাধিক এঁকেছেন।’</p> <p>রেজা কে চৌধুরী আরো জানান, সাঁওতাল রমণী সিরিজের একটি ছবি পাকিস্তানি সংগ্রাহক আরিফ নাকভির সংগ্রহে আছে বা ছিল বলে জানি। আরিফ দুবাইয়ের ‘আবরাজ ক্যাপিটাল গ্রুপের কর্ণধার। দুবাই আর্টে ‘আবরাজ ক্যাপিটাল আর্ট অ্যাওয়ার্ড’ একটা প্রেস্টিজিয়াস পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত। রেজা দেয়ালে ঝোলানো ‘সাঁওতাল রমণী’র একটি ছবিও প্রকাশ করেন। ১২ সেপ্টেম্বর নিলাম হওয়া ছবিটি একই ছবি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।</p> <p>রেজা আরো জানিয়েছেন, করাচির পেইন্টিং ব্যবসা দুবাইকেন্দ্রিক এবং দুবাইয়ের আর্ট কালেক্টররা ‘সথবি’ ও ‘ক্রিসটিজ’ অকশন হাউসের সঙ্গে যুক্ত। দুবাই সাউথ এশিয়ান আর্টের বিরাট জায়গা; যার নিয়ন্ত্রণ মূলত পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ক্রেতাদের।</p>