<p>রাজধানীর পাশের উপজেলা সাভারের বেশির ভাগ এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৯ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান। সাভারে প্রতিষ্ঠিত এনাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের কর্ণধার তিনি। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর আহত শ্রমিকদের তাঁর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও নজর কেড়েছিলেন তিনি। ফলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নবম জাতীয় সংসদের দলীয় সদস্য তৌহিদ জং মুরাদকে রেখে মনোনয়ন দেয় এনামকে। সেই সুযোগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন তিনি। এর আগে রাজনীতির সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না।</p> <p>সম্প্রতি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ পাওয়া ডা. এনামুর রহমান আগামী নির্বাচনেও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ লক্ষ্যে এলাকার অলিগলিতে পোস্টার, ব্যানার লাগানোর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জোর তদবিরও করে যাচ্ছেন তিনি। তবে তাঁর মনোনয়ন ঠেকাতে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা। নৌকার টিকিট পেতে তাঁরা কেন্দ্রে দেনদরবার করার পাশাপাশি এলাকায় পোস্টার-ব্যানার সাঁটানোসহ জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ওই নেতাদের মধ্যে আছেন সাবেক এমপি তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ফিরোজ কবির, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক হাসিনা দৌলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হাসান তুহিন এবং ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ ফখরুল আলম সমর।</p> <p>এলাকাটি একসময় বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনটি হারায় বিএনপি। সেবার দলটির প্রার্থী ছিলেন ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু। এবারও তাঁরই বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও পরিবহন ব্যবসায়ী মো. কফিলউদ্দিন আহমেদও ধানের শীষের টিকিট পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া সাভারের সাবেক পৌর মেয়র রেফাত উল্লাহ এবং বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) মিজানুর রহমানের সঙ্গে বাবুর রয়েছে রাজনৈতিক বিরোধ।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রানা প্লাজা ধসের পর আহতদের পাশে দাঁড়িয়ে ডা. এনামুর রহমান সাভারসহ সারা দেশে যে সুনাম কুড়িয়েছিলেন, তিনি এমপি হওয়ার পর তা অক্ষুণ্ন থাকেনি। এমপি এনামের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের বেপরোয়া আচরণ ও দুর্নীতির কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। দলীয় কোন্দলের কারণে বেকায়দায় আছেন ডা. এনাম। এরই মধ্যে এখন ‘ডাক্তার এনাম ঠেকাও’ স্লোগান নিয়ে মাঠে নেমেছেন দলের স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা।</p> <p>সাভার পৌর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল হালিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তৃণমূলের মতামত নিয়ে প্রার্থী তো এখন দেওয়া হয় না। সেটা করা হলে তো ডাক্তার এনাম এমপি হতে পারেন না। কারণ ডা. এনাম কোনো দিন আওয়ামী লীগ করেননি বরং বিএনপির নেতাদের সঙ্গে ছিল ভালো যোগাযোগ। সেই তিনি এমপি হলে আওয়ামী লীগের কী অবস্থা সেটা বুঝে নেন।’</p> <p>তবে পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেল মণ্ডল বলেন, ‘এনাম ভাই এমপি হওয়ার পর এলাকায় উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছেন। দল-মত-নির্বিশেষে ওনাকেই মানুষ পছন্দ করে। আগামী নির্বাচনেও সাভারবাসী ওনাকেই চায়।’</p> <p>একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে যে খসড়া প্রকাশ করেছে <img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/Print- 2018/03 March/25-03-2018/Kalerkantho_18-03-25-25.jpg" style="float:left; height:204px; margin:8px; width:400px" />তাতে সাভার উপজেলাকে দুটি আসনে বিভক্ত করা হয়েছে আর কেরানীগঞ্জের দুটিকে করা হয়েছে একটি। ওই খসড়া তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর সাভারের নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন হিসাব শুরু হয়েছে। এই সীমানা পুনর্নির্ধারণ চূড়ান্ত হলে সাভারে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ অনেকটা কমে আসবে বলে মনে করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। তারা মনে করছে, সাভারে দুটি আসন হলে তৌহিদ জং মুরাদ ও ডা. এনামুর রহমান দুজনই পেতে পারেন নৌকা প্রতীক। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বেশির ভাগ নেতাকর্মী মনে করেন, নির্বাচন কমিশনের খসড়া তালিকা টিকবে না। তাঁরা বলছেন, আইনের মারপ্যাঁচে শেষ পর্যন্ত হয়তো পুরনো সীমানা অনুসারেই নির্বাচন হবে।</p> <p>ডা. এনামুর রহমান এমপি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০১৪ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন, আমি এমপি হয়েছি। এমপি হওয়ার পর সাভারের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছি। আগামী নির্বাচনে আমি নৌকার টিকিটপ্রত্যাশী। নৌকা পেলে বিজয়ী হব। কারণ আমার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ আছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এ সংসদীয় আসনের উন্নয়নের জন্য সব সময় কাজ করে যাচ্ছি। যেকোনো সমস্যা বা নাগরিক সংকট নিরসনে আমি সব সময় সচেষ্ট ছিলাম এবং আছি। সাভার-আশুলিয়াকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার জন্যও নানা ধরনের পরিকল্পনা তৈরি করেছি। আগামীতে নৌকার টিকিট পেয়ে নির্বাচিত হলে পরিকল্পিত সাভার নগরী গড়ে তুলব।’</p> <p>সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জন্মগতভাবেই আমাদের পরিবারটি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দুঃসময়ে আমরাই সাভারে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে আগলে রেখেছিলাম; কিন্তু ২০১৩ সালের রানা প্লাজার দুর্ঘটনার সময় কিছু মানুষ নেত্রীর কাছে আমাকে ভুল বুঝিয়েছিলেন এবং তাই হয়তো নৌকার টিকিট পাইনি। নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে আমিও যাইনি; কিন্তু যাঁরা আমার বিরুদ্ধে যেসব ভুল তথ্য দিয়েছিলেন, সেই তাঁদের সম্পর্কে এবং আমার বিষয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ অবগত হয়েছে। আগামী নির্বাচনে আমি নৌকার টিকিটপ্রত্যাশী। আশা করছি, আগামী নির্বাচনে নৌকা পেলে সাভারের উন্নয়নে জোরালো ভূমিকা নেব।’</p> <p>ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. ফিরোজ কবীর বলেন, ‘মনোনয়ন নির্ভর করে তৃণমূল আওয়ামী লীগ ও দলীয় হাইকমান্ডের ওপর। আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় আমি নির্বাচন করব।’</p> <p>সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার আগে নিশ্চয়ই নেত্রী আমাদের ডাকবেন। নেত্রীর কাছেই খুলে বলব সাভারের বর্তমান অবস্থা কী। তবে যাঁরা প্রকৃত আওয়ামী লীগার, যাঁরা দলের দুর্দিনে ছিলেন, আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। এমন প্রার্থীকেই যেন নৌকার টিকিট দেওয়া হয়।</p> <p>সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা দৌলা বলেন, ‘দল যে সিদ্ধান্ত নেবে সেই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। মুখ দেখে নয়, দলের প্রতি ভূমিকা দেখেই যেন মনোনয়ন দেওয়া হয়। দল থেকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করতে প্রস্তুত।’</p> <p>কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা ফারুক হাসান তুহিন বলেন, ‘দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দিলে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বড় দলে একাধিক প্রার্থী থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কখনো কোনো কাজ করব না।’</p> <p>তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ ফখরুল আলম সমর বলেন, ‘তরুণ নেতৃত্বকে আমাদের নেত্রী বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। দলের নেতাকর্মীসহ এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে আছি। সুযোগ পেলে কাজের মাধ্যমে দেখিয়ে দেব যে একজন সংসদ সদস্য চাইলে তার এলাকা উন্নয়নের মাধ্যমে সোনার বাংলায় পরিণত করতে পারে।’</p> <p>বিএনপিতে এ আসনে সাবেক এমপি ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবুর বিকল্প শক্তিশালী প্রার্থী নেই। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও পরিবহন ব্যবসায়ী মো. কফিলউদ্দিন আহমেদ বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে প্রচার চালালেও শেষ পর্যন্ত বাবুই হতে পারেন দলীয় প্রার্থী। বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, বিগত ৯ বছরে আওয়ামী লীগের এমপি ও নেতাকর্মীদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। এ ছাড়া নৌকার মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতা এবং গ্রুপিং থাকলেও বিএনপির দেওয়ান বাবুর বিষয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে দেওয়ান বাবু নির্বাচিত হবেন।</p> <p>বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিগত বছরগুলোতে তাদের কোনো মিটিং-মিছিল কিংবা জনসভা করতে দেয়নি প্রশাসন। প্রতিদিনই পুলিশ প্রশাসন দিয়ে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে। নেতাকর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারছে না। বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।</p> <p>এদিকে কোনো ধরনের সাংগঠনিক তৎপরতা না থাকলেও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও ঢাকা জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ।</p>