<p>প্রতিবছর বেতন বৃদ্ধি বন্ধসহ আট দফা দাবিতে আন্দোলনে নামা বেসরকারি এমএইচ শমরিতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষার্থীদের হত্যার হুমকি দিলেন সাবেক সংসদ সদস্য এম মকবুল হোসেন। গতকাল রবিবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রতিষ্ঠানের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মকবুল হোসেনের আপত্তিকর হুমকি-ধমকির একটি ভিডিও সামাজিক নেটওয়ার্কসহ গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভরত আন্দোলনকারীদের অনেকটা সিনেমার খলনায়কের স্টাইলে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন মকবুল। ভয় দেখানো হয় মাথার খুলি উড়িয়ে দেওয়ারও। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন বিদেশিও ছিলেন। ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। সহিংস পরিস্থিতি চলাকালে তাঁর পাশে কয়েকজন পুলিশ সদস্য থাকলেও তাঁদের ভূমিকা দেখা যায়নি। তাঁর সঙ্গে কলেজের আরো একাধিক কর্মকর্তাকেও উসকানি দিতে দেখা যায়।</p> <p>জানা যায়, গতকাল সকাল ৮টা থেকে আট দফা দাবিতে ওই অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। সকাল ১০টার কিছু পরে মকবুল হোসেন ঘটনাস্থলে এসে হুমকি-ধমকি শুরু করেন। এতে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হলেও তারা দাবিতে অনড় থাকে। ভিডিওতে দেখা যায়, বারবার বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মকবুল হোসেন হুমকি দিচ্ছেন। তিনি অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করে বলেন, ‘পাবনা মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ হয়ে গেছে তাতে কী হয়েছে?...হয়েছে! কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ হয়ে গেছে তাতে কী হয়েছে? আমার...হয়েছে!’ একপর্যায়ে এক শিক্ষার্থী বলছিলেন, বিক্ষোভে উপস্থিত নেই এমন অনেক শিক্ষার্থীরও একাত্মতা রয়েছে আন্দোলনের সঙ্গে। এতে ক্ষেপে গিয়ে মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে সরকার। যারা ইতরামি করবে সব খুলি উড়াইয়া দিবে।’</p> <p>এরপর তিনি ভিনদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের ডেকে তাদের জোর করে উঠিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এমনকি এক ছাত্রীর কাছে গিয়ে অনেকক্ষণ ধরে তাঁকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় ওই ছাত্রী ভীত হয়ে একবার উঠে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেও পরক্ষণেই আন্দোলনকারী সহপাঠীদের আহ্বানে সাহস পান এবং শেষ পর্যন্ত ছাত্রীটি অন্যদের সঙ্গে বসে থাকেন। এ সময় হিন্দিতে একজনকে বলতে শোনা যায় : ‘নেহি উঠেগা’!</p> <p>ভিডিওতে দেখা যায়, মকবুল হোসেন ছাত্র-ছাত্রীদের অবস্থানস্থলে ঘুরে ঘুরে একেকজনকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এমনকি কাউকে কাউকে জেলের ও বহিষ্কারের হুমকিও দেন।</p> <p>আন্দোলনকারীদের কয়েকজন কালের কণ্ঠকে বলেছেন, একপর্যায়ে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের অনুরোধে মকবুল হোসেন কলেজের ভেতরে ঢুকে যান। আন্দোলনকারীরা এ সময় বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয়। দুপুর ২টার দিকে মকবুল হোসেন সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা সরে যায়।</p> <p>এ বিষয়ে মকবুল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেছেন, ‘আসল ঘটনা হচ্ছে দু-তিন দিন আগে এক ভারতীয় ছাত্রের সঙ্গে আরেক ছাত্রের গণ্ডগোল হয়। এর জের ধরে কলেজ কর্তৃপক্ষ এক ছাত্রকে সাময়িক বরখাস্ত করে এবং একটি তদন্ত কমিটি করে। কিন্তু কিছু শিক্ষার্থী ওই পদক্ষেপ না মেনে ওই ছাত্রের বরখাস্ত প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিতে থাকে। কলেজ কর্তৃপক্ষ তা না করায় ভিন্ন ইস্যু তৈরি করে তারা সড়ক অবরোধ করে কলেজের সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। সেই খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। এ ছাড়া কয়েকজন ফেল করা শিক্ষার্থী বিনা সেশন ফিতে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে চাপ দেয়। তারা কলেজ থেকে আরো কিছু ছাত্র-ছাত্রীকে জোর করে বের করে এনে অশ্লীল ভাষায় স্লোগান দেয়। পরে অবশ্য সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।’</p>