রাজধানীর কারওয়ান বাজারে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর কার্যালয়ে ঘুষ বাণিজ্যটা মোটামুটি প্রকাশ্য। সেবাগ্রহীতারা ঘুষ না দিলে এখানে কোনো কাজ হয় না। আর ব্যুরোর কিছু অসাধু কর্মকর্তা দাবি অনুযায়ী ঘুষের টাকা প্রকাশ্যেই গুনে গুনে নেন। সেবাগ্রহীতারা দীর্ঘদিন ধরেই এই ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, কিন্তু প্রতিবাদ করার সাহস নেই। কারণ এসব কর্মকর্তাকে খেপিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
ঘুষখোর কর্মকর্তাদের নাম ও পদবি উল্লেখ করে একজন সেবাগ্রহীতা বৃহস্পতিবার এমন অভিযোগ করেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগকেন্দ্রের হটলাইনে এই অভিযোগ করা হয়। এক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অভিযোগকেন্দ্রের হটলাইন ১০৬ থেকে বক্তব্য গ্রহণ করেন এক কর্মকর্তা। অভিযোগটি পেয়ে অবহিত করা হয় কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীকে। তিনি তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন কমিশনের স্ট্রাইকিং ফোর্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক কাজী শফিকুল আলমকে। তিনি সকাল সাড়ে ১০টায় দুদকের একজন কর্মকর্তা ও কমিশনের সশস্ত্র পুলিশ ইউনিটের সদস্যদের নিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোতে অভিযানে যান। তাঁরা ব্যুরোর বিভিন্ন সেকশন পরিদর্শন করেন। পরে কাজী শফিকুল আলম অভিযোগের বিষয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বলেন। কমিশনের পরিচালক ব্যুরোর প্রতিটি ফ্লোরের সিসি টিভি সার্ভেইল্যান্স চালু রাখার অনুরোধ করেন এবং সিসি টিভি ফুটেজের ডাটা ৩০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণের অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে দুর্নীতিবাজ ঘুষখোর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি।
জানা গেছে, দুদকের হটলাইন নম্বরে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজারের বেশি অভিযোগ জমা পড়ছে। হটলাইনের কিছু অভিযোগের ব্যাপারে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে তিনটি বিশেষ টিম গঠন করেছে দুদক। এ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘হটলাইন ১০৬ জনগণের সঙ্গে
কমিশনের সরাসরি সংযোগ ঘটিয়েছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই সম্মিলিতভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করতে চাই। এই সংযোগ অব্যাহত রাখতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। আর হটলাইনের মাধ্যমেই জনগণের কাছে কমিশনকে জবাবদিহি করতে হবে। এর মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী জনমত সৃষ্টি এবং দুদকের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়ছে। হটলাইনে অভিযোগ পেয়ে বিভিন্ন স্থানে তাত্ক্ষণিক অভিযান চালিয়ে দুর্নীতিবাজদের আটকও করা হচ্ছে।’
সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের হটলাইন ১০৬ নম্বর চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ ২০ হাজার কল এসেছে। এর মধ্যে অভিযোগ রেকর্ড করা হয়েছে আট শতাধিক। অভিযোগ পেয়ে তাত্ক্ষণিক ৯৭টি অভিযান চালিয়েছে দুদকের বিশেষ টিম। অভিযোগ পেয়ে ফাঁদ পেতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ছয়জনকে। ১৫টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনেক অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এরই মধ্যে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে বিএমইটি, পোস্টাল, সিএসজি, বিআরটিএ, পাসপোর্ট, বিটিসিএলসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে অভিযান চালানো হয়েছে। এর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, হটলাইনের মাধ্যমে ভূমি, মাদক, পুলিশ, পল্লী বিদ্যুৎ, শিক্ষা বিভাগ, কোচিং বাণিজ্য, স্বাস্থ্য বিভাগ, পাসপোর্ট, রেল বিভাগ, ভিজিএফ, কাবিখা, কাবিটা, ট্রাফিক পুলিশ, বিআরটিএ, নারী নির্যাতন, বাল্যবিয়ে, নিয়োগ, অবৈধ সম্পদসহ বিভিন্ন বিষয়ে মানুষ অভিযোগ করছে। একই সঙ্গে অভিযোগকারীরা এসবের তাত্ক্ষণিক সমাধান পেতে চায়। দুদকের দল এর আগে হটলাইনে অভিযোগ পেয়ে অভিযানে বেরিয়ে ৫০ হাজার টাকা ঘুষসহ গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী প্রশাসক মোতাহার হোসেনকে।
মন্তব্য
আলোচিত সংবাদ
ব্যাখ্যা ছাড়া সর্বসাধারণের পক্ষে কোরআন বোঝা সম্ভব নয়
আমাদের জাহিদ গুগলের ম্যানেজার
সারাদিন বিছানায় শুয়ে অন্যের রক্ত যোগাড় করেই দিন কাটে মিমের
সিগারেট তৈরির একটি মূল উপাদান ইঁদুরের বিষ্ঠা!
পরকীয়া প্রেমিকের স্ত্রী-কন্যার মারধরের শিকার চিত্রনায়িকা রাকা
বিশ্বের যেসব দেশ ভ্রমণে ভিসা লাগে না...