<p>নাটোরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোন্দল প্রকট। নেতাকর্মীদের অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যরা। অন্যদিকে বিএনপির বিপুল জনসমর্থন আছে বলে নেতাকর্মীরা দাবি করলেও দলের কর্মকাণ্ড তেমন দেখা যায় না।</p> <p>আওয়ামী লীগ : দলীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে নাটোরে মাত্র একটি আসন পায় আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে জেলার চারটি আসনের মধ্যে তিনটিতে আওয়ামী লীগ এবং একটিতে দলটির নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রার্থী নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে আবুল কালাম, নাটোর-২ (সদর) আসনে শফিকুল ইসলাম শিমুল  ও নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনে আব্দুল কুদ্দুস আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। অন্যদিকে নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনে জুনাইদ আহেমদ পলক  পুনরায় নির্বাচিত হন। তিনি এখন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী।</p> <p>দলের নেতাকর্মীরা জানায়, নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে আবুল কালাম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বিরোধে জড়িয়ে পড়েন তাঁর বড় ভাই মমতাজ উদ্দিনের স্ত্রী শেফালী মমতাজের সঙ্গে। মমতাজ উদ্দিন সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছিলেন। এ বিরোধের শুরু ২০০৮ সালে মহাজোট প্রার্থী আবু তালহা নির্বাচিত হওয়ার পর যখন শেফালী মমতাজকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য করা হয়।</p> <p>দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, গত বছর গোপালপুর পৌরসভা নির্বাচনে আবুল কালাম পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আল হক ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ দলের গোপালপুর পৌর শাখার সভাপতি রুখসানা মোর্ত্তজা লিলিকে মনোনয়ন দেয়।</p> <p>লিলি অভিযোগ করেন, সংসদ সদস্য কালাম তাঁর পক্ষে কাজ না করে তাঁকে হারানোর জন্য ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থী মলমকে সমর্থন দেন। ফলে তিনি পরাজিত হন।</p> <p>অন্যদিকে বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাচনে আবুল কালাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বকুলকে মনোনয়ন না দিয়ে তাঁর ভাই শরিফুল ইসলামকে মনোনয়ন দেন। নির্বাচনে শহিদুল ইসলাম বকুল সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।</p> <p>শহিদুল ইসলাম বকুল দাবি করেন, সংসদ সদস্য কালামের একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টার কারণেই লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদ এবং গোপালপুর পৌরসভা আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়েছে। তিনি বলেন, আবুল কালাম দলের ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামত নেননি। তাঁর পছন্দের লোকদের দিয়ে কমিটি গঠন করেছেন। অন্যদিকে স্কুল-কলেজসহ নানা জায়গায় নিয়োগ দিয়ে আবুল কালাম লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এমনকি তাঁর টিআর, কাবিটা, কাবিখার গম কেনা, জিআর কোনো কিছুই বাদ যায়নি।</p> <p>দলীয় সূত্রে জানা যায়, আগামী সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কালাম, সাবেক সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য ও প্রয়াত মমতাজ উদ্দিনের স্ত্রী শেফালী মমতাজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বকুল, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক, বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন মনোনয়ন চাইতে পারেন।</p> <p>শেফালী মমতাজের ছেলে শামিম আহমেদ সাগর অভিযোগ করেন, তাঁর চাচা সংসদ সদস্য আবুল কালাম লালপুর বাগাতিপাড়া এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। তাঁর ভয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা মুখ খোলার সাহস পায় না।</p> <p>তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সংসদ সদস্য আবুল কালাম বলেন, তাঁর সময়ে দলীয়ভাবে কোথাও কোনো হয়রানি বা নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি কোথাও কোথাও পুনর্গঠন করা হয়েছে। তিনি কোনো হস্তক্ষেপ করেননি। নিয়োগবাণিজ্য প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য বলেন, ‘এটি মিথ্যা কথা।’ তিনি দাবি করেন, কোন স্কুল-কলেজ টাকা নিলেও তা গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই সব প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য নিয়েছেন। তিনি নিজে কোনো টাকা নেননি।</p> <p>নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তিনি দলের জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীদের মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে ইচ্ছামতো দল পরিচালনা করেন। তাঁর মতের বিরোধীদের নানাভাবে হয়রানি, তাদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।</p> <p>নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান অভিযোগ করে বলেন, ‘যেখানেই টাকা সেখানেই এমপি শিমুল। স্কুলের নাইট গার্ড থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষক নিয়োগ, সরকারিভাবে ধানচাল ও গম ক্রয়ে অনিয়ম ও টেন্ডারের কাজ ভাগাভাগি করার মাধ্যমে এমপি শিমুল কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন।’ তিনি বলেন, দলীয় কর্মকাণ্ডে সাবেক মন্ত্রী আহাদ আলী সরকারসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের ডাকা হয় না। বিএনপি থেকে আসা লোকজন নিয়ে সংসদ সদস্য দল পরিচালনা করেন। তিনি আরো বলেন, সংসদ সদস্য শিমুলের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) শিবির নেতা আকরাম আলী। শিবিরের ডাকসাইটে এ নেতা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া খাদ্য বিভাগে গম, চাল কে দেবে কে দেবে না তা নিয়ন্ত্রণ করেন সংসদ সদস্যের আরেক ভাই সিরাজুল ইসলাম। </p> <p>জেলা যুবলীগের সভাপতি বাশিরুর রহমান খান চৌধুরী ওরফে এহিয়া বলেন, তিনি নাটোর জেলা বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু মতের মিল না হওয়ায় সংসদ সদস্য শিমুল তাঁর অনুসারী নেতাকর্মীদের দিয়ে মালিক সমিতির কার্যালয় দখল করে তাঁর ভাই সাগরকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বসান। শুধু তা-ই নয়, নাটোর জেলা ট্রাক ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিক সমিতি, জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সরিয়ে দিয়ে সংসদ সদস্য তাঁর লোকদের বসিয়েছেন। প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে।</p> <p>জেলা তাঁতী দলের সভাপতি মশিউর রহমান অভিযোগ করেন, তিনি নাইট গার্ড নিয়োগের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আদালতে গিয়েছিলেন। সে জন্য তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে নির্যাতন করে সংসদ সদস্যের ‘ক্যাডার বাহিনী’। মিথ্যা হত্যা মামলায় তাঁকে ফাঁসিয়ে জেলহাজতেও পাঠানো হয়েছিল।</p> <p>আহাদ আলী সরকার বলেন, সংসদ সদস্যের ‘ক্যাডাররা’ তাঁর বাড়িতেও হামলা চালিয়ে তাঁর মেয়েকে পিটিয়ে পা ভেঙে দিয়েছিল। তাঁর মেয়ে জামাই ও মেয়েকে মারধর করেছে।</p> <p>দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সংসদ সদস্য শিমুলের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধি ও নেতারা একাট্টা হয়েছেন। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাজেদুর রহমান, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান, নাটোর পৌর মেয়র উমা চৌধুরী, সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারকে একসঙ্গে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে। </p> <p>সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কয়েকজন যাঁরা আমার বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তাঁরা সবাই দলের স্বার্থে নয়, নিজেদের স্বার্থে কথা বলছেন। যাঁরা মনোনয়ন চান তাঁরাই আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছেন। নাটোরের আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী আছে। আপনারা তাদের সঙ্গে কথা বলুন। তাহলে আসল চিত্র পাবেন। সব নেতাকর্মী, সাধারণ জনগণ আমার সঙ্গেই আছে।’</p> <p>বিএনপির নেতাকর্মী এবং হাইব্রিড নেতাকর্মীদের সঙ্গে সখ্যের ব্যাপারে অভিযোগ নাকচ করে শফিকুল ইসলাম শিমুল পাল্টা অভিযোগ করে আরো বলেন, ‘নাটোর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে কথা বলুন। কারা বিএনপির সঙ্গে কাজ করে, জানতে পারবেন। রমজান বিএনপির লোকজন নিয়ে রাজনীতি করেন। বিএনপির দুলুর (রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু) সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাকে মেরে ফেলার জন্য হামলা চালিয়েছিলেন। দলের সবাই জানে। তাঁরা আমার বিরুদ্ধে কাজ করেছিলেন। তার পরও আমি ৪১ হাজার ভোটে জয়ী হই। রমজানের মেম্বার হওয়ার যোগ্যতাও নেই। অনেক কষ্টে তাঁকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বানিয়েছি। সংগঠনের বিরুদ্ধে কাজ করায় তাঁদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রেও অভিযোগ করা হয়েছে।’</p> <p>দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের উপেক্ষা করার ব্যাপারে জানতে চাইলে এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘সাবেক প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, পৌর মেয়র উমা চৌধুরী, যুবলীগ নেতা এহিয়া চৌধুরী, রমজানসহ তিন-চারজন আমার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তাঁদের রাজনৈতিক অবস্থা কী মাঠে খোঁজ করলেই জানতে পারবেন। তাঁরা মনোনয়ন পাওয়ার জন্য আমার বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকেই কাজ করছেন। এটা কেন্দ্রও জানে।’</p> <p>দখল ও অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে সংসদ সদস্য শিমুল বলেন, ‘আমার ভাই সাগর জেলা বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপের নির্বাচিত সেক্রেটারি। সে পৌর যুবলীগের সক্রিয় নেতা। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এক পক্ষে কথা না শুনে এলাকায় খোঁজ নিয়ে রিপোর্ট করুন।’</p> <p>জানা গেছে, নাটোর-২ আসনে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আহাদ আলী সরকার, নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান, নাটোর পৌর মেয়র উমা চৌধুরী, জেলা যুবলীগের সভাপতি বাশিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়া ও দৈনিক উত্তরবঙ্গ বার্তার সম্পাদক আব্দুল মালেক শেখ।</p> <p>নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনে আওয়ামী লীগে প্রকাশ্যে কোনো বিরোধ না থাকলেও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ও এ আসনের সংসদ সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে দলীয় কর্মকাণ্ডে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিযোগ আছে। বর্তমানে দলে তাঁর একক কর্তৃত্ব থাকায় তেমন কোনো কোন্দল নেই। তবে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।</p> <p>অভিযোগ রয়েছে, জ্যেষ্ঠ এই নেতাদের দলীয় কর্মকাণ্ডে তেমনভাবে ডাকা হয় না। তবে সিংড়ায় আওয়ামী লীগ আগের তুলনায় অনেকখানি সংগঠিত। এ ছাড়া মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে পলক এলাকার উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছেন।</p> <p>সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়াহেদুর  রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। সুতরাং এমপি হিসেবে সকলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। এ বিষয়টিকেও দলীয় নেতাকর্মীদের বিবেচনায় আনতে হবে।’</p> <p>নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত  সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্গে রয়েছে নির্বাচনী এলাকায় বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিরোধ। দলীয় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সাবেক এই মন্ত্রী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মতামত না নিয়ে তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন। ফলে উপজেলা দুটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এমনকি দুটি উপজেলাতেই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।</p> <p>গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র শাহ নেওয়াজ মোল্লা অভিযোগ করেন, দলীয় বিরোধের জের ধরে সংসদ সদস্য কুদ্দুসের নির্দেশে পুলিশ তাঁদের ওপর গুলিবর্ষণ ও লাঠিপেটা করে। এ ঘটনায় তিনিসহ কয়েকজন দলীয় নেতাকর্মী আহত হন। শুধু তাই নয়, তাঁর ও তাঁর সমর্থকদের  বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, সংসদ সদস্য কুদ্দুস স্কুল ও কলেজগুলোতে তাঁর আত্মীয়স্বজনকে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। নাইট গার্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এ কারণে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো গুরুদাসপুরে আব্দুল কুদ্দুসকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।</p> <p>বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী অভিযোগ করেন, দল তাঁকে মনোনয়ন দিলেও সংসদ সদস্য কুদ্দুস তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। এমনকি যারা তাঁর পক্ষে কাজ করেছে তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলা দেওয়া হচ্ছে। প্রায় ২৫টি মামলা রয়েছে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে কুদ্দুস সমর্থকদের হামলায় বড়াইগ্রাম এলাকায় আওয়ামী লীগের কমপক্ষে ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।</p> <p>এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘নিয়োগ বাণিজ্য একটি মুখরোচক অভিযোগ। এ ধরনের অভিযোগ শুধু মিথ্যাই নয়, এগুলো রুচিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। সুতরাং এখানে মতের পার্থক্য থাকতেই পারে। তবে কোন্দল রয়েছে এমন অভিযোগ সঠিক নয়।’</p> <p>দলীয় সূত্রে জানা যায়, নাটোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনায় আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস, গুরুদাসপুর পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ মোল্লা, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমদাদুল হক (মোহাম্মাদ আলী), বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সহসম্পাদক রতন সাহা ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আরিফ।</p> <p>বিএনপি : বিপুল জনসমর্থন আছে—নেতাকর্মীরা এমন দাবি করলেও বিএনপির কর্মকাণ্ড তেমন দেখা যায় না। জেলা বিএনপি কেন্দ্রীয় বা জাতীয় কোনো কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করলেও পুলিশের বাধার মুখে পারে না। দলের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনেই পুলিশ তাদের আটকে দেয়। উপজেলাগুলোতেও দলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড প্রায় একই রকম। তবে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় দলের ভেতর তেমন কোনো কোন্দল নেই বললেই চলে। দলের রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোরে তেমন আসেন না।</p> <p>এদিকে আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও গণসংযোগ শুরু করেছেন।</p> <p>দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নাটোর-১ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমানের সহধর্মিণী কামরুন নাহার শিরিন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি তারিকুল ইসলাম টিটু এবং নাটোর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও গোপালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মঞ্জুরুল ইসলাম বিমল মনোনয়ন চাইতে পারেন।</p> <p>নাটোর-২ আসনে সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগাঠনিক সম্পাদক ও নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু প্রার্থী হবেন বলে আলোচনা রয়েছে।</p> <p>এ বিষয়ে দুলু বলেন, তিনি নাটোর-২ ও নাটোর-৩ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। তিনি আরো বলেন, যদি কোনো কারণে প্রার্থী হতে ব্যর্থ হন তিনি, তবে নাটোর সদর আসনে তাঁর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি নির্বাচন করবেন।</p> <p>নাটোর-৩ আসন থেকে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি কাজী গোলাম মোর্শেদ, সিংড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি শামিম আল রাজি সোহানুর রহমান প্রার্থী হওয়ার জন্য গণসংযোগ করছেন।</p> <p>নাটোর-৪ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য মোজাম্মেল হোসেন, গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ ও আয়নাল হক তালুকদারের নাম শোনা যাচ্ছে।</p> <p>বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘আমি নাটোরে গেলে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতারা আমাকে গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশের ওপর চাপ তৈরি করে। এমনকি প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কাও রয়েছে। সে কারণে আমি নাটোরে যাই না বললেই চলে।’</p> <p>জাতীয় পার্টি : নাটোর-১ আসন থেকে জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য এম এ তালহা, জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা, নাটোর-২ আসনে দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা শাখার সভাপতি মজিবর রহমান সেন্টু, নাটোর-৩ ও ৪ আসন থেকে আবুল কাসেম সরকারের নাম শোনা যাচ্ছে।</p> <p>ওয়ার্কার্স পার্টি : নাটোর-১ আসন থেকে উত্তরবঙ্গ আখ চাষি সমিতির সভাপতি ইব্রাহিম খলিলের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে এ আসনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আনসার আলী দুলালও নির্বাচন করবেন বলে আলোচনা রয়েছে। নাটোর-৩ আসন থেকে ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।</p>