<p>যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের প্রধান জেমস কোমিকে বরখাস্ত করেছেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও গত নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইলের বিষয়ে তদন্তকে কেন্দ্র করে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউস বলেছে, অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসের স্পষ্ট সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প।</p> <p>প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণাদলের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের বিষয়ে তদন্ত করছিলেন কোমি। বিরোধী ডেমোক্র্যাট শিবির অভিযোগ করেছে, রাশিয়া-ট্রাম্প সম্পর্কের তদন্তের কারণেই কোমিকে বরখাস্ত হতে হয়েছে। তারা বলেছে, ওই তদন্তকে প্রভাবিত করতেই কোমিকে সরানো হয়েছে। নির্বাচনের আগেও কোমিকে নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।</p> <p>ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইলের বিষয়ে তদন্তকে কেন্দ্র করে কোমিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত সপ্তাহে কংগ্রেসের কাছে দেওয়া বক্তব্যে কোমি ত্রুটিপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে খবর বের হয়।</p> <p>কোমির উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, বিচার বিভাগের সঙ্গে তিনি একমত যে কোমি এফবিআইকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম নন এবং সেখানে নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন। জেফ সেশনস বলেছেন, ‘ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস সর্বোচ্চ পর্যায়ের শৃঙ্খলা, সততা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং এ কারণে ওই পদে নতুন মুখ প্রয়োজন।’</p> <p>হোয়াইট হাউস জানায়, এফবিআইয়ের প্রধানের পদে নতুন মুখ খোঁজার কাজ এরই মধ্যে শুরু করা হয়েছে।</p> <p>কোমিকে বরখাস্তের আকস্মিক এ সিদ্ধান্তে অনেকেই বিস্মিত হয়েছে। ঘটনাটি ওয়াশিংটনজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। বিশেষ করে হিলারির ই-মেইল তদন্তের বিষয়টি নিয়ে তাঁকে বরখাস্ত করার যুক্তি অনেকের কাছেই বিস্ময়কর ঠেকেছে। কারণ ট্রাম্পই তাঁর নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনগুলোতে ওই ই-মেইল তদন্তের বিষয়টি নিয়ে কোমির প্রশংসা করেছিলেন; যদিও পরে সেটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল না বলে প্রমাণিত হয়। নির্বাচনের সময় ডেমোক্র্যাটরা কোমির কড়া সমালোচনা করে। কয়েক দিন আগেও হিলারি তাঁর পরাজয়ের পেছনে কোমির ভূমিকাকে একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।</p> <p>সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, কোমির বরখাস্তের বিষয়ে তাঁদের আগে থেকে কোনো ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি। তবে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণাদলের সঙ্গে রাশিয়ার যোগাযোগের বিষয়ে একটি তদন্তের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।</p> <p>চার বছর আগে এফবিআইয়ের পরিচালক পদে ১০ বছরের জন্য নিয়োগ পান কোমি। কিন্তু ছয় বছর বাকি থাকতেই তাঁকে বরখাস্ত হতে হলো। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার এফবিআইয়ের কোনো প্রধান বরখাস্ত হলেন।</p> <p>কোমি যখন বরখাস্তের বিষয়টি জানতে পারেন তখন তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসে সহকর্মীদের এক সভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন। বিবিসি জানায়, খবরটি পাওয়ার পর তিনি হেসে ওঠেন এবং একে রসিকতা বলে মনে করেন।</p> <p>হিলারির ই-মেইল তদন্ত বিষয়ে গত মঙ্গলবার মার্কিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রড রোসেনস্টেইন বলেন, কোমি তদন্তের শেষ দিকে এসে যা করেছেন সেটি তিনি সমর্থন করেন না। কোমি যে ভুল করেছেন সে ব্যাপারে প্রায় সবাই একমত পোষণ করবে বলে জানান রোসেনস্টেইন। বিচারপ্রক্রিয়া ছাড়াই তদন্ত বন্ধ করার কথা বলে এবং হিলারি সম্পর্কে অযথাই ‘মর্যাদাহানিকর তথ্য’ দিয়ে কোমি ভুলের পাল্লা ভারী করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।</p> <p>বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার শিবিরের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের তদন্ত করছিলেন কোমি। ওই তদন্ত প্রভাবিত করতেই কোমিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সিনেটে মাইনরিটি লিডার চাক শুমার গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন রাখেন, ‘তাহলে কি তদন্ত প্রেসিডেন্টের ঘরের খুব কাছে চলে এসেছে? ঘটনা দেখে তো একে কাকতালীয় যোগাযোগ বলে মনে হয় না!’</p> <p>মার্কিন রাজনীতিবিষয়ক সংবাদ সংস্থা, পলিটিকোর প্রতিবেদক ড্যানিয়েল লিপম্যান বিবিসিকে বলেন, কোমির পরিবর্তে কে আসবেন, তাঁর ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটনের সবাই এখন ভাবছে, এফবিআইয়ের নতুন পরিচালক কি ট্রাম্পকে জবাবদিহির মুখে নিতে পারবেন এবং তাঁর রুশ সম্পর্কের অভিযোগের বিষয়ে কি একটি স্বাধীন তদন্ত পরিচালনা করতে পারবেন? যদি এখন ট্রাম্পের নিজের কোনো লোককে বসানো হয়, তাহলে অনেক আমেরিকান এখন এফবিআইকে যতটা অবিশ্বাস করে, তার চেয়ে আরো বেশি করবে।’ সূত্র : বিবিসি, এএফপি, সিএনএন।</p>