<p>যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার চালানোর সময় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবার তোপের মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস। তিনি গত বছর ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় দুইবার ওয়াশিংটনে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিয়াকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। অথচ গত জানুয়ারি মাসে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কংগ্রেসে নিজের নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়ার শুনানিতে বিষয়টি অস্বীকার করেন। এ ঘটনায় বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্যরা সেশনসের পদত্যাগ দাবি করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, সেশনস মিথ্যা বলে শপথ নিয়েছেন।</p> <p>এর আগে গত মাসে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে হোয়াইট হাউসকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়ার অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছিলেন ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন।</p> <p>ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির নেতারাও বিষয়টিতে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। দলটির লিন্ডসে গ্রাহাম, জন ম্যাককেইনের মতো নেতারা সেশনসের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কসংশ্লিষ্ট খবরের বিষয়ে ব্যাখ্যা দাবি করেছেন।</p> <p>যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারণায় ডেমোক্রেটিক দলের সংগঠনগুলোতে রাশিয়া অবৈধভাবে হ্যাকিং চালিয়ে হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করার চেষ্টা চালিয়েছে—যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা এমন দাবি করার পর থেকেই ট্রাম্প-রুশ সম্পর্ক নিয়ে দেশটির রাজনীতি উত্তপ্ত। ট্রাম্প প্রশাসন বরাবরই ওই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। অন্যদিকে রাশিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করার কথা দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে আসছে।</p> <p>যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে সেশনসের সঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিয়াকের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, গত বছর ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার চলাকালে সেশনস কিসলিয়াকের সঙ্গে দুইবার সাক্ষাৎ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগও বিষয়টি নিশ্চিত করে। গত বুধবার সেশনস জোর দিয়ে বলেন, ওই সব সাক্ষাতে তিনি নির্বাচনী প্রচার নিয়ে আলোচনা করেননি।</p> <p>ওয়াশিংটন পোস্টের খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর পরই সব মহলের আলোচনায় মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টি আবারও জোর পায়। ডেমোক্রেটিক হাউস মাইনরিটি লিডার ন্যান্সি পেলোসি ‘শপথ ভঙ্গ’ করার অভিযোগে সেশনসকে অভিযুক্ত করেন এবং তাঁর পদত্যাগের দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘কংগ্রেসের দেওয়া শপথে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে মিথ্যা কথা বলার পর অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ করা উচিত।’ ডেমোক্রেটিক পার্টির অন্য সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগের ব্যাপারে এফবিআইয়ের তদন্তদল থেকে তাঁকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। কেননা অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তিনি এফবিআইয়ের তদন্ত দেখভাল করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগের বিষয়টি তদন্তে কংগ্রেস সংক্রান্ত কমিটি সম্মত হওয়ার পর পরই এ খবর প্রকাশ পেল। সদস্যরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারকালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারশিবিরের সদস্য ও মস্কোর মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টি এ হাউসের ইন্টেলিজেন্স প্যানেল সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করবে। সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির ডেমোক্র্যাট সদস্য সিনেটর রন ওয়াইডেন বলেন, ‘রাশিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল সেশনসের মিথ্যা সাক্ষ্যের বিষয়ে তদন্ত করা হবে।’</p> <p>এদিকে হোয়াইট হাউস যুক্তরাষ্ট্রের গত নির্বাচনী প্রচারণাকালে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের কথা প্রত্যাখ্যান করেছে। সেশনস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি কখনোই কোনো রাশিয়ার কর্মকর্তার সঙ্গে নির্বাচনী প্রচার নিয়ে আলোচনার জন্য সাক্ষাৎ করিনি। আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ কেন করা হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ।’</p> <p>এদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ গতকাল মস্কোয় এ ব্যাপারে বলেন, তাঁদের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে জেফ সেশনসের সাক্ষাতের বিষয়ে তাঁদের জানা নেই। তাঁর মতে, একজন রাষ্ট্রদূতকে কাজের খাতিরে অনেকের সঙ্গেই সাক্ষাৎ করতে হয়। সূত্র : সিএনএন, বিবিসি, এএফপি।</p> <p> </p>