<p>মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন মাত্রা ছাড়িয়েছে। বিষয়টি গণহত্যার পর্যায়ে চলে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) বিশেষ দূত হামিদ আলবার।</p> <p>রোহিঙ্গা ইস্যুতে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আজ বৃহস্পতিবার ৫৭টি মুসলিম দেশের জোট ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বিশেষ বৈঠক বসছে।</p> <p>বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে আলবার বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি সহিংসতার মাত্রা আরো বেড়েছে। কম্বোডিয়া ও রুয়ান্ডার মতো আরেকটি গণহত্যা ঠেকাতে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’</p> <p>ওআইসির মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত হামিদ আলবারের মতে রোহিঙ্গা সমস্যা আর মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। এটি এখন আন্তর্জাতিক উদ্বেগের বিষয়। রাখাইন রাজ্যে গত বছরের ৯ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় অন্তত ৮৬ জন নিহত হয়েছে। অন্তত ৬৬ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।</p> <p>মালয়েশিয়ার অনুরোধে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আজ ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বিশেষ বৈঠক বসছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে করণীয় নির্ধারণ ও এ বিষয়ে অবস্থান সংহত করার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল বুধবার বলেছেন, ওআইসির আজকের বৈঠক থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ ও শরণার্থীদের নিরাপদে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানানো হতে পারে।</p> <p>ওআইসির বিশেষ দূত হামিদ আলবার বলেন, ‘ওআইসির উচিত রোহিঙ্গা বিষয়ে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চাওয়া। কম্বোডিয়া বা রুয়ান্ডার মতো আরেকটি গণহত্যা আমরা দেখতে চাই না।’ তিনি বলেন, ‘কতজন মারা গেছে সে তথ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। আমরা অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছি। ওই শিক্ষার আলোকে দেখব, আমরা কী করতে পারি।’</p> <p>মিয়ানমারের বক্তব্য : অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন মিয়ানমার সরকার রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তারা বলছে, রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়।</p> <p>ওআইসির বিশেষ বৈঠকের প্রাক্কালে মিয়ানমার সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ওআইসির সদস্য বা মুসলিম রাষ্ট্র না হওয়ায় তারা এ বৈঠকে অংশ নিচ্ছে না। তবে গত ডিসেম্বরে আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে বৈঠকে তারা জানিয়ে দিয়েছে, জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ তারা মানবে না। এ ধরনের উদ্যোগ স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিহত করবে।</p> <p>মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট তিন কিয়াওয়ের দপ্তরের মুখপাত্র য তে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ইতিবাচক মনোভাব দেখানো এবং আমাদের দেশের সংঘাতময় পরিস্থিতিকে ভালোভাবে অনুধাবন করা।’</p> <p>রয়টার্স জানায়, মালয়েশিয়ায় মিয়ানমারের প্রায় ৫৬ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। তাদের ওপর নৃশংসতার ঘটনার তদন্ত ও ত্রাণ পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে মালয়েশিয়া আসিয়ান সদস্যদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানোর রীতি ভেঙেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের দপ্তরের মুখপাত্র মালয়েশিয়ার অবস্থানের সমালোচনা করেছেন। এতে মিয়ানমারে উগ্রবাদ ও সহিংসতা উৎসাহিত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।</p> <p>মুখপাত্র বলেন, রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের নতুন সরকার সতর্কতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে।</p> <p>বৈঠকে বাংলাদেশের ভূমিকা : কুয়ালালামপুরে আজ বিশেষ বৈঠকে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাবেন তিনি।</p> <p>রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। সীমান্ত খোলা না রাখার নীতি সত্ত্বেও বাংলাদেশ তিন মাসে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। আগে থেকে মিয়ানমারের প্রায় ৩৩ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে অবস্থান করছে। অবৈধভাবে অবস্থান করছে আরো প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা। দীর্ঘদিন ধরে তাদের অবস্থানের কারণে এ দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।</p> <p>গত ডিসেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরের সময় কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখেছেন। এ মাসে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও সু চির বিশেষ দূত বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা করেছেন।</p> <p>কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, মিয়ানমার যে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আন্তরিক নয় তা বিশেষ দূতের সফরে স্পষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার তেমন আগ্রহ দেখায়নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখে বাংলাদেশে এসে বিশেষ দূত শুধু গত তিন মাসে আসা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বা পরিচয় যাচাই সাপেক্ষে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর জন্য আলোচনার প্রস্তাব দেন। বাংলাদেশ সব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি তুলেছে। সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টির তাগিদ দিয়েছে।</p> <p>রোহিঙ্গা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। তারা জোর দিয়ে বলছে, এ সমস্যার সমাধান মিয়ানমারেই হতে হবে। এ সপ্তাহে ঢাকায় নিযুক্ত তিনটি নরডিক দেশের রাষ্ট্রদূতরা কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বন্ধ না হলে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না।</p>