<p>টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় অগ্নিকাণ্ড এবং হতাহতের ঘটনায় কারখানার মালিক সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মো. মকবুল হোসেন ও প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, ক্ষতিপূরণ ও কারখানা মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা যাবে বলে আদেশে বলা হয়েছে।</p> <p>বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীম ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার এ আদেশ দেন। আদালত অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেন।</p> <p>এদিকে টাম্পাকো কারখানার ধ্বংসস্তূপ থেকে গতকাল আরো তিনজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস কারখানার ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে।</p> <p>হাইকোর্টের নির্দেশ : টাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় গত ১০ সেপ্টেম্বর আগুন লাগে। এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট আবেদন করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। দুর্ঘটনা রোধে সরকারের ব্যর্থতা উল্লেখ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে এই রিট আবেদন করা হয়। গতকাল এ রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অ্যাডভোকেট শরীফ ভুঁইয়া ও ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন। টাম্পাকোর মালিকপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার।</p> <p>শুনানি শেষে আদালত ওই প্রতিষ্ঠান ও এর মালিকের নামে থাকা সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশ দেন। আগামী তিন মাসের জন্য এই নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে এ সময়ে এসব অ্যাকাউন্ট থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ ও শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং কারখানা মেরামতের জন্য টাকা তুলতে পারবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কোন অ্যাকাউন্ট থেকে কত টাকা তোলা হলো এবং তা কোন কোন খাতে ব্যয় করা হলো তার হিসাব প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত অন্তর্বর্তীকালীন এই নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেন। রুলে ক্ষতিগ্রস্তদের কেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ</p> <p>প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হবে না তার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, কারখানার মালিকসহ ১৯ জনকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।</p> <p>নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর জানান, টাম্পাকো ফয়েলস কারখানার বিধ্বস্ত ভবনের নিচ থেকে গতকাল আরো তিন লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোরের ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৯। এর মধ্যে ৩২ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন সাতজন। তবে পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় অজ্ঞাত হিসেবে সাতজনের লাশ রয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গের হিমঘরে।</p> <p>গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপপরিচালক আক্তারুজ্জামান লিটন জানান, বিধ্বস্ত ভবন সরানোর সময় গতকাল সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে একে একে লাশ তিনটি উদ্ধার হয়। কারখানার মেশিন রুমে লাশগুলো চাপা পড়া অবস্থায় ছিল। লাশগুলো পুড়ে বিকৃত হয়ে গেছে। তবে পরনের জামাকাপড় ও পকেটে থাকা ব্যাংকের এটিএম কার্ড দেখে স্বজনরা সেগুলো শনাক্ত করেছে। তাঁরা হলেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের ঝিগারবাড়িয়া গ্রামের সুলতান গাজীর ছেলে আনিসুর রহমান (৩০), চাঁদপুরের কচুয়ার তেঘরিয়া লালখান গ্রামের ইউসুফ পাটোয়ারীর ছেলে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী (৩৪) ও ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ভীমনগর গ্রামের মোজাম মোল্লার ছেলে চুন্নু মোল্লা (২১)। তাঁরা সবাই কারখানার অপারেটর ছিলেন। লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।</p>